শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
ট্রাম্পের ইউটার্ন

রাজ্য গভর্নরদের সিদ্ধান্তে সবকিছু চালু হবে

লাবলু আনসার, নিউইয়র্ক

অবশেষে ইউটার্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে অঙ্গরাজ্য গভর্নরদের ওপরই দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন। বিশেষজ্ঞদের বিজ্ঞানভিত্তিক পরিক্রমায় অঙ্গরাজ্য গভর্নরদের জন্য তিন স্তরের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন ট্রাম্প। তবে কবে থেকে তা শুরু হবে সে ব্যাপারে কোনো সময়সীমা ধার্য না করে সেটিও এলাকার পরিস্থিতির আলোকে রাজ্য গভর্নররাই ঠিক করবেন বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসে করোনা টাস্কফোর্সের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশে নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিংকালে আমেরিকায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরায় চালুর ব্যাপারে নিজের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এ সময় তিনি অঙ্গরাজ্য গভর্নর, কংগ্রেসের নেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ সদস্যবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতা, চিকিৎসা-বিশেষজ্ঞ এবং প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই রোডম্যাপ ঘোষণার কথা জানান। এ সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, করোনাবিষয়ক টাস্কফোর্সের শীর্ষ কর্মকর্তা ড. এন্থনি ফাউসি এবং ড. ডেবরা বারও নিজ নিজ মতামত উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য, ১৯ মার্চ থেকেই অবরুদ্ধ সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ধস নেমেছে। গত এক মাসে ২ কোটি ২০ লাখ আমেরিকান বেকার হয়েছেন। রোডম্যাপ ঘোষণার সময় আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৬১৭ ছাড়িয়ে গেছে। এদিন সকালেই পৃথকভাবে ব্রিফিংকালে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, দেলওয়ারে, ওয়াশিংটনসহ বেশকটি রাজ্যের গভর্নর ১৫ মে পর্যন্ত ঘরে অবস্থানের সময়সূচি বাড়িয়ে দিয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিও বাড়ানো হয়েছে। অপরদিকে ট্রাম্পের রোডম্যাপ অনুযায়ী করোনার আগ্রাসী তৎপরতা যদি হ্রাস পায় তাহলে ১ মে থেকেই কোনো কোনো রাজ্যে প্রথম স্তরের অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা যাবে। ট্রাম্পও তা উল্লেখ করেছেন। তবে সব কিছু রাজ্য গভর্নরের সিদ্ধান্তে হবে তা খুবই বলিষ্ঠতার সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন ট্রাম্প। যদিও তিন দিন আগে প্রেস ব্রিফিংকালেই উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, পুনরায় সব কিছু চালুর এখতিয়ার একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের। এমন দাবির বিরুদ্ধে সব গভর্নর সোচ্চার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের উদ্ধৃতি দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউটার্ন করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবনে নেমে আসা স্থবিরতা দূর করে আর্থিক কর্মকান্ডে গতি আনতে করোনার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে জয়ী হতে এমন পদক্ষেপের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেছেন দোর্দ- প্রতাপশালী এই প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা সারা আমেরিকায় একই সঙ্গে সব কিছু চালু করতে আগ্রহী নই। যা করা হবে তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে, যাতে হিতে বিপরীত না হয়, বুমেরাং না হয়।’ রোডম্যাপ অনুযায়ী, অঙ্গরাজ্যগুলোর সার্বিক অবস্থার আলোকে পর্যায়ক্রমে অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান করা হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, ম্যাসেচুসেটস, রোড আইল্যান্ডসহ বিভিন্ন রাজ্য, মধ্য-পশ্চিম এবং পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব রাজ্যে যখন আক্রান্তের হার একেবারে কমবে, মৃত্যুর সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণে আসবে, হাসপাতালগুলোতে সিট সংকট থাকবে নাথ-তখনই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে প্রথম পর্বের কার্যক্রম শুরু করা যাবে। রোডম্যাপে বলা হয়, প্রথম স্তরে কর্মচারীরা ঘরে বসেই কাজ করতে পারবেন। অত্যাবশ্যকীয় স্টোরগুলোতে কর্মচারীরা আসবেন বিভিন্ন শিফটে। স্কুলগুলো বন্ধই থাকবে। রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল, থিয়েটার হল, ক্রীড়াঙ্গন, উপাসনার স্থান খুলে দেওয়া হবে সামাজিক দূরত্ব প্রতিপালনের শর্তে। ব্যায়ামাগারও চালু হতে পারবে সামাজিক দূরত্ব যথাযথভাবে পালনের অঙ্গীকার করা হলে। তবে বারগুলো বন্ধই থাকবে। ১৪ দিনের প্রথম স্তরে সব কিছুর সুফল প্রত্যাশা অনুযায়ী পাওয়া গেলে দ্বিতীয় পর্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে। ৫০ জনের বেশি মানুষ কোথাও জড়ো হতে পারবে না। হোমলেসরা সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রেই থাকবে। যদি কোনো কারণে রাস্তায় নামে তাহলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও লোকজন বাসার বাইরে যেতে পারবেন মাস্ক পরে এবং চলতি পথে এবং রেস্টুরেন্ট/ গ্রোসারি/ স্টোরে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর