শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

দরিদ্রের ৬ মাসের খাদ্য সহায়তায় প্রয়োজন ৮১ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দরিদ্রের ৬ মাসের খাদ্য সহায়তায় প্রয়োজন ৮১ হাজার কোটি টাকা

আবুল বারকাত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত বলেন, যদি করোনাভাইরাস-১৯ অপ্রতিরোধ্যভাবে চলতে থাকে এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হয় তাহলে মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে খাবার সরবরাহ সম্ভব হবে না। এসব দুর্দশাগ্রস্ত অভুক্ত প্রতিটি মানুষকে খাদ্য বাবদ দৈনিক কমপক্ষে গড়ে ৭৫ টাকা বরাদ্দ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন সারা দেশে লাগবে ৪৫০ কোটি টাকা অর্থাৎ মাসে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ছয় মাস চালাতে হলে লাগবে ৮১ হাজার কোটি টাকা। এখন প্রশ্ন- অভুক্ত-অর্ধভুক্ত-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ বাঁচাতে ছয় মাসের খাদ্যসহায়তা বাবদ যে ৮১ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ লাগবে তা কোথা থেকে আসবে? এ প্রশ্নের পাটিগাণিতিক উত্তর তেমন কঠিন নয়।

আমাদের চলমান ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট বাজেট ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা হলো উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ যার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। মোট ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সর্বমোট যে পরিমাণ উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয় তার সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ব্যয় হয় প্রথম ১০ মাসে। আর পরের দুই মাস অর্থাৎ এপ্রিল-মেতে ভাউচার বানানোর সংস্কৃতি প্রবল অর্থাৎ অর্থনীতির ভাষায় বলা যায় মিস-অ্যালোকেশন অথবা অপচয়। এ হিসাবে চলমান উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ এখনো ব্যয় হয়নি। বরাদ্দকৃত অ-ব্যয়িত এ অর্থের মোট পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৮৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। যদি ধরেও নিই যে আগামী দুই মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত অথচ অ-ব্যয়িত একাংশ ব্যয় হতেই হবে (যেমন খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পল্লী উন্নয়ন, গৃহায়ণ, মহিলা ও শিশু, জনশৃঙ্খলা) সে ক্ষেত্রেও বর্তমান জরুরি অবস্থায় ওই অ-ব্যয়িত অংশের সর্বোচ্চ ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়কে যুক্তিসংগত ব্যয় হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। অর্থাৎ তার পরেও হাতে থাকবে ৭৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। এ মুহূর্তে যে কাজটি করা প্রয়োজন বলে মনে করি তা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই উল্লিখিত ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে খাত-উপখাতওয়ারি এ তথ্যাদি জেনে নিন যে, প্রত্যেকের কাছে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দকৃত অথচ এখনো ব্যয় হয়নি এমন অর্থের পরিমাণ কত; নির্দেশনা দিন আগামী দুই মাসে ব্যয় না করলেই নয় এমন খাত-উপখাতগুলো কী কী এবং সংশ্লিষ্ট যুক্তি। দেখবেন অর্থের অভাব তো হবেই না, বরং অর্থবছরের শেষের দিকে ‘ভাউচার বানানোর সংস্কৃতি’ উল্টে যাবে। এটাও তো হতে পারে কভিড-১৯-এর কারণে বহুদিনের পচনশীল বাজেট বাস্তবায়ন সংস্কৃতির কাক্সিক্ষত পরিবর্তন। এসবের পাশাপাশি দেশের মধ্যেই সরকারি রাজস্ব অর্থাৎ অর্থ-আহরণের বহু উৎস আছে যাতে কখনো হাত দেওয়া হয়নি, যেমন গত বাজেট বক্তৃতায় (২২১ অনুচ্ছেদে) মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে সম্পদ কর আইন কার্যকর নেই...। অনেক বিত্তশালী করদাতার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তারা তেমন কোনো আয় প্রদর্শন করেন না।’ একই সঙ্গে সামনে কভিড-১৯ প্রতিরোধ এবং প্রতিরোধ-পরবর্তী সময়ে খাদ্যসহায়তা, কর্মসৃজন-সহায়তা, শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ-সহায়তা, প্রযুক্তি হস্তান্তর-সহায়তার লক্ষ্যে বহু ধরনের বৈশি^ক তহবিল গঠন হবে। আগেই বলেছি, জনসংখ্যার ভিত্তিতে আমরা এসব তহবিলের ৩ শতাংশ হিস্যা পেতে পারি। তাহলে অভুক্ত-অর্ধভুক্ত-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের ছয় মাসের খাদ্যসহায়তা বাবদ ৮১ হাজার কোটি টাকা আহরণ আদৌ কোনো কঠিন কাজ হবে না।

সর্বশেষ খবর