শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা মোকাবিলায় জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করুন : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান। তিনি বলেন, চারদিকে অন্ধকার ও হতাশা। করোনা দুর্যোগের নানামুখী প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে বলে মনে হয়। এমতাবস্থায় এ পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে সুসমন্বিত ও সুবিবেচিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা ও ঋণ প্যাকেজ বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই টাস্কফোর্সে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করে এই টাস্কফোর্সকে অর্থবহ ও গতিশীল করার মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের লড়াই করতে হবে এবং সেই লড়াইয়ে অবশ্যই জয়ী হতে হবে। টাস্কফোর্স গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, টাস্কফোর্স গঠন করলে সুসমন্বিত, সুচিন্তিত ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। কোনো খাদ্যের ঘাটতি নয়, খাদ্য বণ্টনে অনিয়ম, দুর্নীতি, সিদ্ধান্তহীনতা, সুশাসনের অভাব দুর্ভিক্ষের কারণ হতে পারে। তাই এখনই খাদ্য ও ত্রাণ বণ্টনে এবং করোনার পরবর্তী পুনর্বাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই প্রক্রিয়াটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিনের মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সঙ্গে এই মহাদুর্যোগে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সামরিক বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী এবং গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব। ডা. মঈন উদ্দিনকে জাতীয় বীর ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তার মৃত্যুই প্রমাণ করে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদর জন্য সরকারের  ঘোষিত নগদ সম্মানী ও বীমার পরিমাণ যথেষ্ট নয়। করোনার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অগ্রাধিকার বিষয়গুলো কী হতে পারে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবার আগে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং  টেস্ট, টেস্ট ও টেস্ট প্রয়োজন। রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা  দেওয়াটা সবচেয়ে আগে। যারা দিন আনে দিন খায়-দিনমজুর তাদের বলা হচ্ছে, ঘরে থাক। ঘরে থাকলে  তো খাওয়া আসছে না। এদের কাছে খাদ্য পৌঁছানো, তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা এবং তাদের বাঁচিয়ে রাখা সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত। এর জন্য উপযুক্ত হচ্ছে সামরিক বাহিনী। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাম গণতান্ত্রিক জোট বা বাম মোর্চার ঐক্যের একটি পরামর্শসভায়ও যুক্ত হয়েছি। আমরা কোনো রকমের সংকীর্ণতায় ভুগতে চাই না। আমরা মনে করি যে, এখন জাতীয় ঐক্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্যাকেজ শুভঙ্করের ফাঁকি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্যাকেজটি কলেবরে বড় হলেও এটি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি।  লোক দেখানো আইওয়াশ মাত্র। প্যাকেজটি প্রণোদনা বলা হলেও মূলত অধিকাংশই ব্যাংকনির্ভর ঋণ-প্যাকেজ যা বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী মহলকে দেওয়া হবে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। এতে সরকারের প্রণোদনা নিতান্তই অপ্রতুল। গার্মেন্ট, শিল্প, কৃষিখাতের জন্য ৭৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এর মধ্যে মূলত সুদ ভর্তুকির ৩ হাজার কোটি টাকাই হচ্ছে সরকারি প্রণোদনা।

সর্বশেষ খবর