রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

চলতি সপ্তাহে মানুষের শরীরে করোনার টিকা

প্রতিদিন ডেস্ক

ব্রিটেনে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা চলতি সপ্তাহে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধী একটি টিকা মানুষের ওপর প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ওপরে কভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ করে আশার আলো দেখে বিজ্ঞানীরা হিউম্যান ট্রায়ালের ব্যাপারে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিবিসি, সিএনএন।

সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল প্রথম সারির ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি মেল’-কে জানান, ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধী টিকা মানুষের ওপর যাচাই করা শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৮-৫৫ বছর বয়সী ৫১০ জন স্বেচ্ছাসেবী এ সপ্তাহে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে সম্মত হয়েছেন। ডেইলি মেইলে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ব্যাপারে এতটাই আশাবাদী যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই টিকার সাহায্যে লাখ লাখ মানুষ মারণ করোনাভাইরাসের কবল এড়িয়ে চলতে পারবেন বলে তাদের বিশ্বাস।

প্রসঙ্গত, প্রফেসর অ্যাড্রিয়ান হিল ও তার সহযোগী বিজ্ঞানীরা শিম্পাঞ্জির শরীরে সার্স কোভ-২ ভাইরাস ইঞ্জেকশন দিয়ে শিম্পাঞ্জির শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করেন। এই অ্যান্টিবডিই টিকা হিসেবে মানুষের শরীরে দিলে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হবে বলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল নিশ্চিত। এরই মধ্যে প্রাণীদেহে এই টিকা ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য ভালো ফল পাওয়া গেছে। এবার হিউম্যান ট্রায়াল করার পর টিকাটির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দলটি ভ্যাকসিনটির সাফল্যের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী।

নভেল করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০টি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিয়ে কাজ চলছে। অক্সফোর্ডের গবেষণা তার মধ্যে একটি। হিউম্যান ট্রায়ালই প্রমাণ করে দেবে যে এই টিকা মানুষের শরীরের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ কিনা। এ প্রসঙ্গে অ্যাড্রিয়ান হিল বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, নতুন ভ্যাকসিন ব্যাপকভাবে উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলবেন। এরই মধ্যে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের ক্লিনিক্যাল টিম ও জেনার ইনস্টিটিউট যৌথভাবে সেপ্টেম্বর মাসে এই টিকা তৈরি করতে সমর্থ হবেন।

রেমডিসিভির নামের ওষুধ নিয়ে আশা : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে পরীক্ষামূলক রেমডিসিভির নামের একটি ওষুধ প্রয়োগে আশাজাগানিয়া ফল পাওয়া গেছে বলে দাবি করছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান গিলিয়াড সায়েন্সেস। গিলিয়াড সায়েন্সেস বলছে, রেমডিসিভির নামের এই ওষুধ গ্রহণের পর সাধারণ রোগীদের তুলনায় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন আক্রান্তরা। ছয় দিনের মধ্যেই হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি যেতে পারছেন তারা। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত মার্কিন ওয়েবসাইট স্ট্যাট নিউজের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো হাসপাতালে গুরুতর কভিড-১৯ রোগীদের গিলিয়াড সায়েন্সেসের অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডিসিভির দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। নিবিড়ভাবে এ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে রোগী জ্বর ও শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলো থেকে দ্রুত সেরে উঠেছেন এবং এক সপ্তাহের কম সময়ে সব রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কভিড-১৯ সৃষ্টির জন্য দায়ী নভেল করোনাভাইরাস সার্স কোভ-২-কে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা হিসেবে পরীক্ষাগারে চিহ্নিত প্রথম ওষুধগুলোর মধ্যে একটি ছিল রেমডিসিভির। পুরো বিশ্ব গিলিয়াডের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলের দিকে তাকিয়ে আছে। এতে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলে তা দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন পাবে। এটা যদি নিরাপদ ও কার্যকর হয় তবে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এটিই হবে প্রথম অনুমোদিত কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত মার্কিন ওয়েবসাইট স্ট্যাট নিউজের বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রেমডিসিভির নামের পরীক্ষামূলক ওষুধটি প্রয়োগের পর কভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। এ সম্পর্কিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেওয়া রোগীদের সবার তীব্র জ্বর ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা প্রকট ছিল। তাদের ওপর ওষুধটি প্রয়োগের পর তাদের মধ্যে দুজন ছাড়া বাকি সবাই এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাসায় গেছেন। শিকাগো মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয় কভিড-১৯ উপসর্গ থাকা ১২৫ জন ব্যক্তিকে নিয়ে গিলিয়াডের দুটি ধাপ-৩-এর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালায়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১১৩ জনের অবস্থা ছিল গুরুতর। তাদের প্রতিদিন রেমডিসিভির দেওয়া হয়।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. ক্যাথলিন মুলেন ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ সম্পর্কিত এক ভিডিও বার্তায় মুলেন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে আমাদের অধিকাংশ রোগীই ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় গেছেন যা সত্যিই দারুণ। অংশগ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে মাত্র দুজন মারা গেছেন।’

স্ট্যাট নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো গিলিয়াডের গবেষণা থেকে অন্য কোনো ক্লিনিক্যাল তথ্য আজ অবধি প্রকাশ করা হয়নি এবং এ নিয়ে উত্তেজনা বেশি। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রেমডিসিভির নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। রেমিডিসিভির নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে খুব ভালো ফল পাওয়া যাবে।’

গত বৃহস্পতিবার গিলিয়াডের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা এই পর্যায়ে যা বলতে পারি তা হলো, চলমান গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের প্রত্যাশায় রয়েছি।’

এক বিবৃতিতে শিকাগো মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, ‘এ মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না এবং তা বৈজ্ঞানিকভাবে যুক্তযুক্ত নয়।’ তথ্য প্রসঙ্গে স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রান্সলেশনাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক এরিক টপল বলেছেন, ‘এটা উৎসাহব্যঞ্জক। গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি থাকে বেশি। যদি ১১৩ জন রোগী এ ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার ছাড়পত্র পায় তবে তা ওষুধের কার্যকারিতার ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে আরও গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।’

ডব্লিউএইচও বলছে, বিসিজি টিকার সুফল প্রমাণিত নয় : যক্ষ্মার বিসিজি টিকা দেওয়া থাকলে তা নভেল করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে বলে যে খবর দুই সপ্তাহ আগে ছড়াতে শুরু করে, তার কোনো ভিত্তি এখনো পায়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও।

জাতিসংঘের এ সংস্থা বলেছে, কভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিসিজি টিকার কোনো প্রভাব আছে কিনা, তা জানতে দুটো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ফলাফল পাওয়া গেলে ডব্লিউএইচও তা পর্যালোচনা করে দেখবে। ‘সেই প্রমাণ পাওয়ার আগে কভিড-১৯ এর প্রতিষেধক হিসেবে বিসিজি টিকা ব্যবহারের পরামর্শ ডব্লিউএইচও দেবে না। তবে যেসব দেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি, সেখানে শিশুদের বিসিজি টিকা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে ডব্লিউএইচও।’

সর্বশেষ খবর