ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে আরও ১২ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। গতকাল মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এদের মধ্যে তিনজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও নয়জন ইউপি সদস্য। এর আগে গত ১২ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২৪ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করল স্থানীয় সরকার বিভাগ।
গতকাল সাময়িক বরখাস্ত করা চেয়ারম্যানরা হলেন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মখদুম কবীর তন্ময়, নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর বরমহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুস সাত্তার এবং বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা গোলাম হাফিজ সোহাগ। অন্যদিকে সাময়িক বরখাস্ত করা ইউপি সদস্যরা হলেন নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর-বড়মহাটি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রেজা, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাকির হোসেন এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রোকনুজ্জামান, ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবদুর রব পাটোয়ারী, নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শেখ মোশারেফ হোসেন এবং ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য রনি বেগম, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আল-আমিন চৌধুরী এবং ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য মোছা. আছিয়া খাতুন। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকার প্রদত্ত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ, ভিজিডির চাল আত্মসাৎ, খাদ্য সহায়তা চাইতে আসা লোকজনকে মারধর, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে দেশের সংকটময় মুহূর্তে এলাকায় অনুপস্থিত থাকা, উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় অনুপস্থিত ইত্যাদি কারণে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে আছেন এবং কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। উল্লিখিত চেয়ারম্যান ও সদস্য কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের স্বীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সময় পৃথক পৃথক কারণ দর্শানোর নোটিসে কেন তাদের চূড়ান্তভাবে পদ থেকে অপসারণ করা হবে না পত্র প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এর জবাব সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গতকাল এক বার্তায় বলেন, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম করা জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে বর্তমানে অনিয়মের ঘটনা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
তবু থেমে নেই ত্রাণের চাল চুরি : আমাদের জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের ইসলামপুরে চিনাডুলি ইউনিয়নের গুঠাইল বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন ও মোশাররফ হোসেনের গুদাম থেকে ৯৮ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে গুদামের মালিকদের পাওয়া যায়নি।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নে সরকারি চাল আত্মসাৎ করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে খানগঞ্জ ইউনিয়নের ডিলার মো. আবু নাছিরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতকাল খানগঞ্জ ইউনিয়নের হাটবাড়িয়া গ্রামের পাশান মার্কেট এলাকায় মানববন্ধন করেছেন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি থেকে সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিরা।