মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বাস্তবতা জানিয়ে প্রশংসা পেলেন এসপি শামসুন্নাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাস্তবতা জানিয়ে প্রশংসা পেলেন এসপি শামসুন্নাহার

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বাস্তব চিত্র তুলে ধরে প্রশংসা পেলেন গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার।

বিভিন্ন জেলার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ধারাবাহিক ভিডিও কনফারেন্সের অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকা বিভাগের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে গাজীপুর জেলার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি বক্তৃতা করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের সঙ্গে কথা বলতে চান। পুলিশ সুপার তার বক্তৃতায় জেলায় লকডাউনের বাস্তব চিত্রগুলো তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোযোগ দিয়ে এসপির কথাগুলো শোনেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তাকে আশস্ত করেন। দীর্ঘ ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুর পুলিশ সুপারের বক্তৃতাই সেরা বলে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মত প্রকাশ করেছেন। অধিকাংশ ফেসবুক ব্যবহারীর ওয়ালেই দেখা গেছে গাজীপুর পুলিশ সুপারকে নিয়ে প্রশংসামূলক লেখা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে গাজীপুরের লকডাউন নিশ্চিত করতে গিয়ে জেলা পুলিশ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার বলেছেন, ‘যে কারখানাগুলো খোলা রয়েছে তারা কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অনেক ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছেন। পিপিই বানানোর কথা বলে শ্রমিকদের ডেকে এনে অন্য পণ্য বানাচ্ছেন। আবার এমনও অনেক মালিক রয়েছেন, যারা বেতন দেবেন বলে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে আসছেন। গাজীপুরে অনেক ভাসমান মানুষ রয়েছে। এটা লকডাউন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেক বড় অন্তরায়। তাদের ঘরে রাখতে হলে অবশ্যই ত্রাণ সঠিকভাবে বিতরণ করতে হবে।’

যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধের মধ্যে পোশাকশ্রমিক আসায় গাজীপুর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে এমনটা জানিয়ে এসপি শামসুন্নাহার বলেন, ‘প্রথম দিকে গাজীপুরের অবস্থা অনেক ভালো ছিল। হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করে আমরা অনেক ভালো রেখেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়বার গার্মেন্ট খুলে দেওয়ার পর শ্রমিকরা আসতে শুরু করলেন। তখন নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায় ২৫ জন করোনা শনাক্ত হলো। আমাদের জেলাটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। যদি শ্রমিকরা এভাবে আসা-যাওয়া করেন, তাহলে বেগ পেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘চাকরি টিকিয়ে রাখতে মেয়েরা এক হাতে কোলের বাচ্চা নিয়ে আরেক হাতে ব্যাগ নিয়ে আসছেন। আমরা অনেক উদার মালিক দেখেছি, যারা মার্চ মাসেই দুই মাসের বেতন দিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকেই ডেকে এনে বেতন দিতে পারছেন না। আমাদের এটা নিয়ে ভাবতে হবে।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘গাজীপুরে যারা ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন, তাদের নিরাপদ রাখতে সুনির্দিষ্টভাবে আপনার দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। এসব ফ্যাক্টরির মালিকরা শ্রমিকদের ঠকাচ্ছেন। কত প্রয়োজন হয় তাদের? বঙ্গবন্ধু যেমনটা বলেছিলেন, আমার কৃষক, আমার শ্রমিক তো চোর নয়। তারা তো কিছু চায় না। একমুঠো ভাতই তাদের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যাদের আছে, যারা শিক্ষিত... তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক কিন্তু এখনো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।’

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক চিঠি দিয়ে ২৫ এপ্রিলের পর কিছু কারখানা খোলার কথা জানিয়েছেন এবং শ্রমিক পরিবহনের জন্য বাস চেয়েছেন।’

পুলিশ সুপারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। আমি গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বসব।’

কনফারেন্সে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর গাজীপুর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন করে শ্রমিক আনা ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শ্রমিকদের থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে সীমিত পরিসরে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে নির্দেশনা দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর