শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বে মৃত্যুর মিছিল চলছেই

আক্রান্ত ২৭ লাখ, মৃত্যু ১ লাখ ৮৬ হাজার

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বে মৃত্যুর মিছিল চলছেই

বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। বর্তমানে ভাইরাসে আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছেন প্রায় ১৯ লাখ মানুষ। এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ, যার মধ্যে সিংহভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর নাগরিক। এই দেশগুলোতে মৃত্যু ও আক্রান্তের মিছিল একই ধারায় চলছে। তবে যে চীন থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল, সেখানে এখন প্রাণহানি ও আক্রান্ত নেই বললেই চলে। সফলভাবে দেশটি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, গত বুধবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৬৫৯ জন এবং এদিন ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়ার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৪১ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইতালিতে মোট মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছিল ২৫ হাজার ৮৫ জন এবং বুধবার ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ছিল ৪৩৭ জনের। তৃতীয় অবস্থানে থাকা স্পেনে মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৭১৭ জন এবং বুধবার ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ছিল ৪৩৫ জন। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ফ্রান্সে মোট মৃত্যু ছিল ২১ হাজার ৩৪০ জন এবং বুধবার ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ছিল ৫৪৪ জন। পঞ্চম অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে মোট মৃত্যু ছিল ১৮ হাজার ১০০ জন এবং বুধবার ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ছিল ৭৬৩ জন। ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা বেলজিয়ামে মোট মৃত্যু ছিল ৬ হাজার ২৬২ জন এবং বুধবার ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ছিল ২৬৪ জন। সপ্তম অবস্থানে থাকা ইরানে মোট মৃত্যু ছিল ৫ হাজার ৩৯১ জন এবং বুধবার ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ছিল ৯৪ জন। অষ্টম অবস্থানে থাকা জার্মানিতে মোট মৃত্যু ছিল ৫ হাজার ৩১৫ জন এবং বুধবার ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ছিল ২২৯ জন। এদিন ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে নতুন মৃত্যু ছিল ৬ হাজার ৬০৭ জনের।

চীনে ৮ দিন ধরে মৃত্যু নেই : চীনে গত ৮ দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। চীনের কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে গতকাল বিবিসি জানায়, শুধু মৃত্যু নয়, বর্তমানে চীনে নতুন করে করোনা শনাক্তের সংখ্যাও প্রায় শূন্যের কোঠায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবারের মতো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবা থেকে ভালোভাবেই বেরিয়ে  যেতে পেরেছে চীন।

চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, ২২ এপ্রিল দেশটিতে নতুন করে মাত্র ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এমনকি সম্প্রতি বাইরে  থেকে দেশটিতে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যেও নতুন করে করোনা শনাক্তের সংখ্যা কমেছে।

ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা এখন সর্বনিম্ন : ইরানে করোনাভাইরাস কভিড-১৯-এ আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬৫ হাজার রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া, দেশটিতে নতুন করে এক হাজার ৩০ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন- যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

গত ২৩ মার্চ ইরানে একদিনে এক হাজার ১১ জন  রোগী শনাক্ত হন। এরপর বেড়ে ৩০ মার্চ পর্যন্ত তা তিন হাজার ৮৬ জনে পৌঁছায়। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, ইরানের চিকিৎসকদের আন্তরিকতা, করোনা  মোকাবিলায় সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতার কারণে গত তিন সপ্তাহ ধরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই কমছে।

গতকাল ইরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণসংযোগ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা কিয়ানুশ জাহানপুর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ইরানে এ পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৮৪৩ জন মানুষ করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে  গেছেন। তবে নতুন করে এক হাজার ৩০ জনের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮৭ হাজার ২৬ জনে পৌঁছেছে। তিনি জানান, গত এক দিনে মারা গেছেন ৯০ জন করোনা রোগী। সবমিলিয়ে ইরানে এই রোগে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৮১ জন। ইরানে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ ছাড়া, সাত কোটি মানুষের স্ক্রিনিং বা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ও চিকিৎসামন্ত্রী সাঈদ নামাকি সংসদে এক উন্মুক্ত আলোচনায় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, মে মাসের শেষের দিকে ইরানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে।

স্পেনের আশাবাদ : স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে তার দেশ এই দুর্যোগ  থেকে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন। এ দিকে তাঁর সরকার এবং অন্যরা করোনাভাইরাস ঠেকাতে কঠোর কিছু পদক্ষেপ ধীরে ধীরে শিথিল করার পরিকল্পনা করছেন।

গত বুধবার সেখানকার সংসদে দেওয়া ভাষণে তিনি বর্তমান লকডাউনের মেয়াদ মে মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করেন। সানচেজ বলেন,  স্পেন যখন বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু করবে, তখন তা হবে ধীরে ধীরে এবং পর্যায়ক্রমে। তিনি বলেন,  সেটি জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সতর্কবার্তার দিকে খেয়াল  রেখেই করা হবে। সম্প্রতি তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং জনজীবনে বিধিনিষেধ তোলার ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, এর ফলে ওই সংক্রমণ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। বিশ্বের যেসব  দেশ এই সংক্রমণ দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে, স্পেন হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম। সেখানে কভিড-১৯ এ নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা হচ্ছে দুই লাখ আট হাজার, আর এতে অন্তত ২১ হাজার ৭০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য, করোনা দীর্ঘদিনের অতিথি : সহজে বিদায় নেওয়ার মতো ভাইরাস নয় কভিড-১৯। দীর্ঘদিন এর বিরুদ্ধে লড়াই করেই বাঁচতে হবে। ফের এ আশঙ্কার কথা শোনাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের মতে, বিশ্বব্যাপী লকডাউনের জেরে বহু দেশেই সংক্রমণের গতি কমানো গেছে। তবে আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। লকডাউন তুললে ফের বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে সংক্রমণের গতি।

প্রসঙ্গত, তাড়াহুড়ো করে লকডাউন তোলা নিয়ে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোকে আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এবার আরও বিপজ্জনক ইঙ্গিত দিলেন সংস্থার প্রধান টেডরোজ আধানম  গেবিয়াসেস। তিনি গতকাল বলেছেন, ‘কোনো ভুল করবেন না। আমাদের এখনো অনেক লড়াই করতে হবে। এই ভাইরাস আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকবে।’ গেবিয়াসেসের মতে, বেশ কিছু দেশ যে সামাজিক দূরত্বের বিধি তৈরি করেছে তা কাজে আসছে। অনেক  দেশেই সংক্রমণের গতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু তা বলে সামাজিক দূরত্ব ভুলে গেলে চলবে না। তিনি বলেন, ‘সপ্তাহের পর সপ্তাহ বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে। এতে অনেক মানুষ স্বাভাবিকভাবেই বিরক্ত। তারা উপার্জনের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে চাইছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে পৃথিবী আর আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারবে না। নতুন এই পরিস্থিতিকেই স্বাভাবিক ধরে নিয়ে এগোতে হবে।’

সর্বশেষ খবর