শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

রোজার আগে চড়া নিত্যপণ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সব চেষ্টাই করেছিল সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে কোনো চেষ্টাই যেন কাজে আসেনি। অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে গতকাল রোজা শুরুর আগের দিন রাজধানীর বাজারে সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস ও মসলার দাম বেড়েছে।

সরেজমিনে পল্টন, মতিঝিল, শান্তিনগর, মালিবাগ ও খিলগাঁও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম। আদার দাম কিছুটা কমলেও রসুন বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের দামেই বিক্রি হয় পিয়াজ।

আজাদ নামে খিলগাঁও মৈত্রী মাঠ (অস্থায়ী) কাঁচা বাজারের ক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে সব সবজির দাম বেশি। একদিকে রোজা, অন্যদিকে করোনার আঘাত। আমাদের দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে কীভাবে বাঁচব? তিনি বলেন, কোনোভাবেই এ মুহূর্তে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম মানা যায় না। সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আরও দাম বাড়িয়ে দেবেন ব্যবসায়ীরা।

সপ্তাহের ব্যবধানে এসব বাজারে প্রতি কেজি সবজিতে পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে। পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, সিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, উস্তা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, বড় কচু ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও ঝিঙা ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

বাজারে সবচেয়ে দাম বেড়েছে শসা ও বেগুনের। প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধনিয়াপাতা বিক্রি হচ্ছে ১০০ ও পুদিনা পাতা ১৪০ টাকা এবং প্রতি হালি লেবু ৩০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি পিস লাউ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৮০ টাকা এবং প্রতি হালি কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। আর প্রতি আঁটি কচুশাক ৮ থেকে ১০ টাকা, লাল শাক ১২ টাকা, মুলা ১৫ টাকা, পালংশাক ১৫ টাকা, লাউ ও কুমড়াশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং পুঁই শাক ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, মহিষের মাংস ৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা ও বকরির মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়। দাম বেড়েছে মুরগির। ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, লেয়ার ২২০ টাকা ও সাদা লেয়ার ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। ৩০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি সোনালি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। প্রতি ডজনে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। এর মধ্যে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, দেশি ১৫০ টাকা, সোনালি ১৩০ টাকা, হাঁস ১২০ থেকে ১২৫ টাকা এবং কোয়েল (প্রতি ১০০ পিস) ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বেড়েছে মাছের দাম। ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি কাঁচকি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ছোট পুঁটি (তাজা) ৬০০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, চিংড়ি (গলদা) ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বাগদা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, হরিণা ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি চিংড়ি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, রুই ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২২০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৪০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, কৈ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ও কাতল ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। দাম বেড়ে প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও ছোট ইলিশ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

বাজারে কমেছে আদার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ টাকা কমে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। তবে বাড়তি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে রসুন। এ ছাড়া ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে সাধারণ রসুন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও চীনা রসুন ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে পিয়াজের দাম। প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল ও খোলা সয়াবিন তেল। খোলা সয়াবিন (লাল) ১০৫ টাকা, সাদা ১০০ টাকা ও খোলা সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার।

এ ছাড়া প্রতি কেজি মিনিকেট (নতুন) চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, মিনিকেট পুরাতন ৬৫ টাকা, বাসমতি ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা, আটাশ ৪৬ টাকা, পাইজাম ৪২ টাকা ও প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়।

বাজারে প্রতি কেজি ডাবলি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, অ্যাঙ্কর ৫০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা ও মসুর (মোটা) ৯০ টাকা। প্রতি কেজি এলাচ ৪ হাজার ৬০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও জয়ত্রী বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকায়। আর জায়ফল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি।

এদিকে রমজানের আগে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতারা বলছেন রমজানে অতি মুনাফালোভী বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দেন। পক্ষান্তরে বিক্রেতারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে মালমালের আমদানি না থাকায় বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে তাদের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর