রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

পাঁচ হাজার আক্রান্ত ৬০ জেলায়

দেশে আরও ৯ জনসহ মৃত্যু ১৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঁচ হাজার আক্রান্ত ৬০ জেলায়

দেশে করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে আরও ৩০৯ জনের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। এতে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪ হাজার ৯৯৮ জনে। শনিবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) মোট ৩ হাজার ৩৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩০৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ এর সংক্রমণ পাওয়া গেছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কম। এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, গত পরশু শুক্রবার থাকার কারণে দুই-একটি বেসরকারি পিসিআর ল্যাব টেস্ট করেনি এবং আমাদের রিপোর্ট প্রদান করেনি। ডা. নাসিমা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ জনে। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করা ৯ জন সম্পর্কে ডা. নাসিমা বলেন, এদের মধ্যে নারী ৫ জন ও পুরুষ ৪ জন। এই ৯ জনের মধ্যে সাতজনই সত্তরোর্ধ্ব। বাকি দুজনের মধ্যে একজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ এবং আরেকজনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে ঢাকায় তিনজন এবং ঢাকার বাইরে ছয়জন। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জের দুজন, টাঙ্গাইলের একজন, মাদারীপুরে একজন, ময়মনসিংহের একজন এবং জয়পুরহাটে একজন রয়েছেন। এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা কেউ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হননি। ফলে সুস্থ বাড়ি ফিরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ১১২ জনই রইল। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬০টিতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৫৮। শনিবার আরও দুই জেলা ভোলা ও নাটোরে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এখনও করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ঝিনাইদহ এবং সাতক্ষীরায়। তবে শুক্রবার ঝিনাইদহে দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের এখন আক্রান্ত জেলা ৬০। নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছে ভোলা ও নাটোর। এখন আমাদের শুধু চারটি জেলা বাদ আছে। সেটি হলো রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরা। এই চার জেলা বাদে সারা দেশের সব জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।’ বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৪০ জন এবং এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৩৯৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৭ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৯৬ হাজার ১৬৯ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৭৪ হাজার ৪৯১ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬ হাজার ৪৮০ জন। মোট কোয়ারেন্টাইন আছেন ৮০ হাজার ৯৭১ জন। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্সেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসএসই) তথ্য অনুযায়ী, শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২১৭ জনের। আর বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ১২ হাজার ৫৫৭ জনে। আর ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭৭ জন।

চাঁদপুর আইসোলেশনে মারা যাওয়া কিশোরী করোনা আক্রান্ত ছিল : জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট (করোনার  উপসর্গ) নিয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া ফরিদগঞ্জের শারমিন (১৪) করোনায় আক্রান্ত ছিল। শনিবার সকালে তার করোনা রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। সিভিল সার্জন অফিস বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে চাঁদপুরে মোট দুজন করোনায় মারা গেলেন। দুজনই মারা যাওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত  হিসেবে শনাক্ত হলেন। তাছাড়া মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হলো ১৪ জন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদগঞ্জের পশ্চিম লাড়ুয়া এলাকার কিশোরী শারমিন সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এর আগের রাতে সদর হাসপাতালে আসলে অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়। করোনা সন্দেহভাজন রোগী হিসেবে তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয়েছিল।

কুমিল্লায় জানালা ভেঙে পালিয়েছে করোনা রোগী : কুমিল্লার  মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রাম থেকে করোনা শনাক্ত রোগী মিজানুর রহমান ঘরের জানালা ভেঙে পালিয়ে গেছে। জানা যায়, শুক্রবার আইইডিসিআর থেকে পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী মিজানুর রহমান করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হন। করোনা শনাক্ত হওয়ায় পর  মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন শুক্রবার দুপুরে কাজিয়াতল গিয়ে তার ঘরটি আইসোলেশন ঘোষণা করে বাড়িটি লকডাউন করেন। পরে শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় মিজান ঘরের জানালা ভেঙে পালিয়ে যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নাজমুল আলম জানান, রোগীর শরীরে বাহ্যিক কোনো লক্ষণ না থাকায় তাকে বাড়িতে আইসোলেশন নিশ্চিত করে বাড়িটি লকডাউন করে দেই। এই ধরনের রোগী অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দিলে ভালো হয়ে যায়। তবে এই রোগী কারও সংস্পর্শে গেলে ওই ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তাকে আটক করার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

জেলায় জেলায় আক্রান্ত : বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধিদের তথ্যানুসারে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এই প্রথম একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ২৬ বছর বয়সের এক ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। ওই ব্যক্তি এবি ব্যাংকের শ্রীমঙ্গল শাখায় ক্যাশ কর্মকর্তা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. জায়েদ। গত ২০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা টেস্টে পজিটিভ রিপোর্ট আসে। বর্তমানে তিনি ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হবিগঞ্জে একজন ডাক্তারসহ আরও ৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় তাদের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। আক্রান্তদের মাঝে চুনারুঘাটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসকসহ ৪ জন এবং লাখাইয়ে ১ জন রয়েছেন। আক্রান্তদের ১ জন মহিলা এবং অপর ৪ জন পুরুষ। জেলায় এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ জন। গাজীপুরে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ সর্বশেষ ৩২৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। জেলায় নতুন করে ৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। গাজীপুর জেলায় করোনা পজিটিভদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১৩ জন গাজীপুর সদর ও মহানগর এলাকার বাসিন্দা। জেলায় করোনা পজিটিভ হওয়ার সংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলায় ৮৯ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে গাজীপুর সদরে ১১৩ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৮৯ জন, কাপাসিয়া উপজেলায় ৭০ জন, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৩০ জন এবং শ্রীপুর উপজেলায় ২১ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে করোনায় মৃত সহকর্মীর সংস্পর্শ থেকে আসা লাকসামের দুই সহোদরের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের বাড়ি লাকসাম পৌর শহরের দক্ষিণ লাকসাম সাহাপাড়া এলাকায়। অন্যদিকে তিতাস উপজেলায় কুস্তিগীর রাসেল ভুঁইয়াসহ দুজন সুস্থ হয়েছেন। কুস্তিগীর রাসেল ভুঁইয়া তৃতীয়বারের নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ হয়েছে। একইভাবে বিরামকান্দি গ্রামের চালকল শ্রমিক জালাল উদ্দিন করোনামুক্ত হয়েছেন। যশোরের শার্শায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫ জনে। সপ্তাহ খানেক আগে ভারত প্রত্যাগত যাত্রীদ্বারা আক্রান্ত বেনাপোল চেকপোস্ট কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়তি রানী বড়ুয়া। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলীর দেওয়া তথ্যমতে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত ৪ জনের মধ্যে নিয়তি বড়ুয়ার শিশুপুত্র ছাড়াও বুরুজবাগান স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ল্যাব টেকনেশিয়ান, ঢাকা ফেরত রুদ্রপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর, এবং ভারতফেরত প্রকাশ। আক্রান্তদের সবাইকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঝিনাইদহে এই প্রথম মহিলাসহ দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯টি নমুনার ফলাফল পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দুজন করোনা পজিটিভ এসেছে। এদের মধ্যে সদর উপজেলার পাগলাকানাইয়ে হাসান ক্লিনিকের পেছনে কাজল হোসেনের স্ত্রী বিথি খাতুন (৩৫)। আক্রান্ত বিথি খাতুন সদর উপজেলার চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা এবং অপর আক্রান্ত কালীগঞ্জ উপজেলার কাস্টভাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লাকুয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৪০)। শরীয়তপুরে আরও ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের বাড়ি নড়িয়া উপজেলার ভুমখাড়া ইউনিয়নে। এ নিয়ে নড়িয়ায় ৫ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১ জন মারা গেছে ঢাকা হাসপাতালে। এ পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলায় মোট ১৪ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৪ জন নারী। ১ জনকে ঢাকা কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর অন্যদের নিজ নিজ বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বরিশালে একজন ডাক্তারসহ আরও দুজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার সর্বশেষ ওই দুজনসহ জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ জন। নগরীর বাংলাবাজার এলাকার এক ব্যক্তি ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত (সংযুক্তিতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) একজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হন। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে প্রথমবারের মতো বাবুগঞ্জ উপজেলার ২ জন ও শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ১ জন নার্সসহ মোট ৩ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বগুড়ায় এক দিন পর করোনাভাইরাস আছে কি না তার পরীক্ষা করতে গিয়ে আরও ৩ জনের পজেটিভ পাওয়া গেছে। ১০৮টি নমুনার মধ্যে ৬৫টি পরীক্ষা করে নতুন করে আরও ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। এ নিয়ে বগুড়ায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা হলো ১৬ জনে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর