শিরোনাম
রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তায় ৫৯ লাখ নির্মাণশ্রমিক

রুহুল আমিন রাসেল

অনিশ্চয়তায় ৫৯ লাখ নির্মাণশ্রমিক

করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে কাজ না থাকায় জীবন-যাপনে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন সারা দেশের প্রায় ৫৯ লাখ নির্মাণ শ্রমিক। জানা গেছে, দেশের অবকাঠামো নির্মাণকারী কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই খাতের প্রায় ৩৪ লাখ শ্রমিকের ভবিষ্যৎ এখন অজানা। আছে ছাঁটাই, চাকরি হারানো ও বেকারত্বের শঙ্কা। আবার আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ২৫ লাখ শ্রমিক এখন কর্মহীন। এই খাতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা উদ্যোক্তাদের। এখন নির্মাণ শ্রমিকদের দাবি, হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ দিন, নয় ত্রাণ দিন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রধান রপ্তানি খাতের কথা বলে শুধু পোশাকশিল্পের স্বার্থ রক্ষা করলে দেশ ও অর্থনীতি বাঁচবে না। শিল্প খাত ও অন্যান্য ব্যবসায় যারা লিপ্ত তাদের সুবিধা-অসুবিধাও দেখতে হবে। সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি শুধুই পোশাকশিল্পে। সেখানে প্রায় ২৫ লাখ শ্রমিক আছে, এই কথা বলে সরকারের কাছ থেকে প্রতি মুহূর্তে সুবিধা নিচ্ছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। কিন্তু নির্মাণ ও আবাসনশিল্প মিলিয়ে যে প্রায় ৫৯ লাখ নির্মাণ শ্রমিক রয়েছেন, তাদের বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে কেউ ভাবছে না।

ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ-ইনসাব সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে শ্রমিকরা এখন কর্মহীন। তারা ত্রাণও পায়নি। ঢাকার অনেক নির্মাণ শ্রমিকের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বা এখনো হাতে পায়নি। তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ দেয়নি। ফলে শ্রমিকরা এখন অর্ধাহার ও অনাহারে আছেন। সরকারের কাছে আমাদের দাবি- হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ দিন, নয় ত্রাণ দিন।

জানা গেছে, আবাসন ও কনস্ট্রাকশন শিল্পের সঙ্গে রড, সিমেন্ট, সিরামিক, রংসহ অনেক শিল্প খাত জড়িত। কীভাবে করোনাভাইরাসের এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। আবাসন ও কনস্ট্রাকশন খাতে আরও ধাক্কা আসতে পারে। কবে নাগাদ এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে, তার উপায় দেখছেন না উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় আবাসন খাতকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারকে নীতি সহায়তা চান উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, আবাসন খাত পদে পদে যেসব হয়রানির শিকার হচ্ছে, তা থেকে পরিত্রাণ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। প্রকল্প অনুমোদনের সব প্রক্রিয়া সহজীকরণ করতে হবে। নীতি সহায়তার সঙ্গে কর প্রণোদনাও প্রয়োজন। এগুলো সরকার ইতিবাচকভাবে দেখলেই ঘুরে দাঁড়াবে আবাসন খাত। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিপদগ্রস্ত নির্মাণ শ্রমিকরাও রক্ষা পাবেন। এখন নির্মাণ শ্রমিকের ভাগ্য অনিশ্চিত। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি- বিএসিআই সভাপতি প্রকৌশলী এস এম খোরশেদ আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের কনস্ট্রাকশন খাতের সব কাজ বন্ধ রয়েছে। কনস্ট্রাকশন খাতের ৩৫ লাখ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অজানা। কাজ না পেলে এই শ্রমিকরা না খেয়ে মারা যাবেন। এর মধ্যে চলমান পরিস্থিতিতে ৫০ শতাংশ কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করবেন অথবা শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়বেন। যদিও এই শ্রমিকদের পেছনে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বা উন্নয়ন বাজেটের ১০ শতাংশ খরচ হয়। উন্নয়ন বাজেটের এই টাকা থেকে কনস্ট্রাকশন খাতের নির্মাণ শ্রমিকরা মজুরি পান। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন বাজেটের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ হয় ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসে। এই খরচ এখন হবে না। করোনা পরিস্থিতিতে এবার এপ্রিল থেকে জুন চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের এই শেষ প্রান্তিকের তিন মাসে এডিপির ক্ষতি হবে সাড়ে ১৩ শতাংশ। যা টাকার অঙ্কে দাঁড়াবে ২৭ হাজার ৬২৫ কোটি। এর মধ্যে নির্মাণ শ্রমিকরা তাদের বেতন বাবদ পেতেন সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ওই টাকা থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ও করসহ অন্যান্য রাজস্ব হারাবে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ধরে রাখতে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের স্বার্থে উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে হবে। আবার অনেক কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলেও জানান বিএসিআই সভাপতি। এ প্রসঙ্গে আবাসনশিল্প মালিকদের সংগঠন রিয়েল অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, আমাদের করোনা পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। আবার অর্থনীতিও যাতে ধ্বংস না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তাই দেশে ক্রমান্বয়ে শিল্প কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হলে আবাসন খাতেও সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্মাণ কাজ শুরু করব। কারণ- আমাদের ২৫ লাখ শ্রমিক গত ৪০ দিন ধরে বেকার। তারা কাজ না পেলে বেতনও পান না। দ্রুত কাজ শুরু করা গেলে আবাসন খাতের এই নির্মাণ শ্রমিকদের সহায়তা করা যাবে। রিহ্যাব সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাসের আঘাতে আবাসন খাতে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হয়ে গেছে। যে কোনো সংকটে প্রথম আঘাত আসে আবাসন খাতে। এবার ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। পুঁজিবাজার ধসের পর আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াতে সময় লেগেছিল ৫ বছর। এবার করোনাভাইরাসের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের বিষয়টি আরও কিছু দিন পরে দেখা হবে বলেও জানান এই রিহ্যাব নেতা। রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী এম এ আউয়াল বলেন- করোনাভাইরাসের প্রভাবে আবাসন খাতের অবস্থা খুবই খারাপ। এ শিল্প বাঁচাতে সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন। রিহ্যাবের আরেক সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী তানভিরুল হক প্রবাল বলেন- করোনাভাইরাসের প্রভাবজনিত নাজুক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ক্রেতাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রণোদনা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, সরকার তৈরি পোশাকশিল্পে ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকা সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা উদ্যোক্তারা নিজেদের জন্য এমন ঋণ চাই না। কিন্তু ক্রেতাদের জন্য কম সুদে ঋণ চাই। এর সঙ্গে আবাসন খাতের স্থবিরতা কাটাতে করোনাভাইরাসের সংকট সময়ে ক্রেতাদের জন্য প্লট ও ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন খরচও কমাতে হবে। ক্রেতাদের সুবিধা প্রদান ও কিছু প্রণোদনা চাই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর