রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলেই বাজারে সমস্যা হবে না

রফিকুল ইসলাম রনি

প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলেই বাজারে সমস্যা হবে না

তোফায়েল আহমেদ

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সব অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দফা ভিডিও কনফারেন্সে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আবার ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উৎপাদন ঠিক রাখতে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছেন। পণ্যবাহী পরিবহন যেন সঠিকভাবে চলতে পারে সে ব্যাপারেও তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলেই করোনাকালে রমজানে বাজারে কোনো সমস্যাই থাকবে না।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে করোনায় বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদের মতে, বন্দরগুলোতে পণ্য খালাসে জট, রাস্তায় পণ্যবাহী গাড়ি বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং রমজানের শুরুতেই এক সঙ্গে এক মাসের বাজার করার প্রবণতা-এই তিন কারণই করোনার বাজার নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে কাজগুলো করতে একসঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। কিন্তু সমন্বয়ের কিছুটা অভাব রয়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। সমন্বয়হীনতা দূর করতে পারলেই কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে। কোথাও কোনো সংকট নেই। রমজানের আগে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, সেগুলো গ্রহণ করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রমজান আসার তিন মাস আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এখন বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য মজুদ আছে। অর্থাৎ ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, খেজুর, ছোলা মজুদসহ যা যা দরকার তা পর্যাপ্ত আছে। কোনো সংকট নেই। তিনি বলেন, রমজানে বেশি কথা হয় কাঁচা তরিতরকারি নিয়ে। যেমন ধরা যেতে পারে যে তরিতরকারিটা নরসিংদীতে ৫ টাকা, সেই তরকারি ঢাকায় ৫০-৬০ টাকা। এটার একটা সমন্বয়ের অভাব আছে। এখানে পণ্যবাহী গাড়ি বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। পণ্যবাহী গাড়িগুলো বাধাগ্রস্ত না হলে নরসিংদীর বাজার আর ঢাকার বাজারে দাম এত পার্থক্য হবে না।    

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি দেশের আদমানিকারক শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই বলেছেন, পর্যাপ্ত পণ্য রয়েছে। রমজানের বাজার পণ্য ঠিক রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রী ২২ এপ্রিল আবারও তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অর্থাৎ করোনার কারণে রমজানের বাজার পণ্য ঠিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু কিছুটা সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। নবনিযুক্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদও পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। পণ্যবাহী গাড়িগুলো যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে র‌্যাবের নতুন ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বাজার মনিটরিং করার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর নিয়মিত বাজার মনিটরিং করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এসব পদক্ষেপ সঠিকভাবে সমন্বয় করা গেলে কোনো সমস্যা নেই। অন্যদিকে একটা ভালো দিক হচ্ছে, টিসিবি সুন্দরভাবে পণ্যগুলো বিক্রি করছে, যা দরিদ্র, হতদরিদ্র মানুষগুলো তাদের সাধ্যের মধ্যে সঠিকভাবে ক্রয় করতে পারছেন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি হয় তখন এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। যেমন বাংলাদেশের ব্যাংকে ডলারের দাম ৮৫ টাকা। সেটা বাইরে থেকে কিনতে হয় ৮৭ টাকায়। কারখানা বন্ধ থাকায় দামের হেরফের হয়। ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও বসতে হবে। যেখানে পণ্যটা উৎপাদন হয়, তারা যেন সেখান থেকে বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করতে বাধাগ্রস্ত না হন, তাহলে বাজার স্বাভাবিক থাকার কথা। 

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমদানিকারকরা আরেকটা সমস্যায় পড়েন সেটা হচ্ছে, আমদানি জাহাজ খালাস করতে কখনো কখনো অনেক দিন লেগে যায়। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পণ্য খালাসে বেশি সময় লাগলে সেটারও একটা প্রভাব বাজারের ওপরে পরে। পণ্য খালাস যদি যথাসময়ে হয় তাহলে সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, পণ্য খালাস যেন দ্রুত হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন আমাদের নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এতে পণ্য খালাস নিয়ে যে জটিলতায় ব্যবসায়ীরা পড়েন তা সমাধান হবে বলে আমি মনে করি।   

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মতে, রমজানে পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আরেকটি বড় সমস্যা হলো, রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই এক মাসের বাজার ক্রয় করে থাকেন। এক মাসের বাজার করা মানুষের এ প্রবণতাও একটা সমস্যা। রমজানের কয়েক দিন যাওয়ার পর দেখা যায়, বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য আছে। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম।এসব সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী জানতে চাইলে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কাজগুলো সমন্বয় করে করলেই হবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা তা মেনে চললেই বাজারে কোনো ধরনের সংকট হবে না।

 

সর্বশেষ খবর