মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

উপসর্গহীন আক্রান্তেই ভয় ছড়িয়েছে ৬০ জেলায়

বিশেষ প্রতিনিধি

উপসর্গহীন আক্রান্তেই ভয় ছড়িয়েছে ৬০ জেলায়

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেকের শরীরে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না। যারা উপসর্গহীন, তাদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, উপসর্গহীন আক্রান্তেই এখন বড় ভয়। এ অবস্থায় মৃদু উপসর্গ কিংবা আক্রান্তের আশপাশের মানুষজনেরও করোনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এদিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ১৫২ জন। এক দিনে নতুন করে করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন ৪৯৭ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় মোট শনাক্ত হলেন ৫ হাজার ৯১৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৯ জন এবং এখন পর্যন্ত দেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৩১ জন। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সাতক্ষীরা ও নাটোর ছাড়া বাকি ৬০ জেলায় করোনা রোগী পাওয়া গেছে।

গতকাল দুপুরে দেশের কভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিন অনলাইনে প্রচারিত হয়। বুলেটিনে ভিডিও কনফারেন্সে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যে সাতজন যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ছয়জন এবং নারী একজন। এদের পাঁচজন ঢাকার, একজন সিলেটের এবং একজন রাজশাহীর বাসিন্দা। যারা মারা গেছেন তাদের পাঁচজনের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে, একজনের বয়স ৪০ থেকে ৫১ বছরের মধ্যে এবং একজন শিশু, যার বয়স ১০ বছরের নিচে। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪ হাজার ১৯২টি, পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ হাজার ৮১২টি নমুনা, এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৪৯৭ জন। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৫ হাজার ৯১৩ জন। আর এখন পর্যন্ত মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০ হাজার ৪০১টি।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের তুলনায় ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি এবং যা পরীক্ষা করেছি তা আগের দিনের চেয়ে ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় যারা সুস্থ হয়েছেন, তারা হাসপাতালে ছিলেন।’ তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮৫ জনকে। এখন পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে ১ হাজার ২২০ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৯ জন। এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ৭৩৮ জন। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইন মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪০১ জনকে। কোয়ারেন্টাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৯০ জন। এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৭২২ জন।

দেশে করোনায় আক্রান্ত অনেকের শরীরে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না। যারা উপসর্গহীন, তাদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় মৃদু উপসর্গ কিংবা আক্রান্তের আশপাশের মানুষজনকেও করোনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

প্রথমদিকে শুধু হাঁচি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা ও ডায়রিয়ার উপসর্গ থাকলেও বর্তমানে মৃদু উপসর্গেও করোনা পজেটিভ হচ্ছেন অনেকে। আবার শরীরে কোনো লক্ষণ নেই এমন অনেকেরও পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়েছে। এতে করে উপসর্গহীন রোগীদের কাছ থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

লাইভ সায়েন্সে এক নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এখনো রহস্যে ঘেরা নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় থাবা হবে আরও ভয়ঙ্কর। এই ধাপে উপসর্গহীন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে বেশি। এর সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। দ্বিতীয় ধাক্কার পর করোনার আরও একটি ধাক্কার আশঙ্কা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর বায়োলজিকস ইভালুশান অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক পিটার মার্কস। উপসর্গহীন আক্রান্ত বৃদ্ধির বিষয়ে ইউএসএ টুডে এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনার যে কথা বলা হচ্ছে, এর সঠিক তথ্য কারও জানা নেই।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ নানা পেশার আরও বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে এক উপজেলা সাতকানিয়াই করোনাভাইরাসে ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জন সংক্রমিত হয়েছেন সাতকানিয়ায় প্রথম শনাক্ত হওয়া সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে। তবে ১৫ এপ্রিল থেকে উপজেলাটি লকডাউনে আছে। তবুও সংক্রমণ থেমে নেই। রবিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত হন ৫৫ জন। ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন পাঁচজন এবং আইসোলেশনে মারা গিয়েছেন আরও পাঁচজন। জানা যায়, রবিবার সাতকানিয়ার মাদার্শা ইউনিয়নের রূপনগরে একই পরিবারের ছয়জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরা সবাই ১৯ এপ্রিল শনাক্ত হওয়া রোগীর পরিবারের সদস্য। এর আগে ১৪ এপ্রিল সাতকানিয়ায় একসঙ্গে পাঁচজন করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। তারা সবাই পশ্চিম ঢেমশার ইছামতি আলীনগরের বাসিন্দা। এরাও সংক্রমিত হয়েছিলেন সিরাজুল ইসলামের সংস্পর্শে এসে। এ ছাড়া ১২ এপ্রিল পৌরসভা এলাকার দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। সাতকানিয়ায় প্রথম শনাক্ত হওয়া ৬৯ বছর বয়সী সিরাজুল ইসলাম ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার পথে মারা যান। নমুনা পরীক্ষা করা হলে ১১ এপ্রিল তার করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। কিন্তু এরই মধ্যে তার জানাজায় অংশ নেন স্বজন ও স্থানীয়রা।

কক্সবাজার : কক্সবাজারে আরও ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে মোট ১২২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে ছয়জনের রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। করোনা শনাক্তদের মধ্যে একজন রামু, দুজন উখিয়া, একজন চকরিয়া, একজন মহেশখালী ও একজন নাইক্ক্যংছড়ির বাসিন্দা বলে জানা গেছে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, গতকাল বিকাল পর্যন্ত এক দিনে ১২২ জনের পরীক্ষায় ছয়জনকে পজিটিভ পাওয়া যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন করে আরও ছয়জন করোনায় আক্রান্ত বলে রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে জেলার বাঞ্ছারামপুরে তিনজন এবং নাসিরনগর, আখাউড়া, বিজয়নগরে একজন করে আক্রান্ত। বাঞ্ছারামপুর ও বিজয়নগরে আক্রান্তদের মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে। আখাউড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি ভবঘুরে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র মতে, জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াল ৩৯-এ। মারা গেছেন তিনজন। এ পর্যন্ত জেলা থেকে ১০৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সর্বশেষ সোমবার দুপুরে ছয়জনের আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট আসে। সিভিল সার্জন একরাম উল্লাহ এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে নতুন করে আরও দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে সখীপুরে একজন ও দেলদুয়ার উপজেলায় একজন রয়েছেন।

 এ নিয়ে এ জেলায় ২০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো। গতকাল টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, রবিবার ৯০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। এদের মধ্যে দুজনের ফলাফল পজিটিভ এসেছে। সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুস সোবহান জানান, কোনো প্রকার উপসর্গ ছাড়াই প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকের করোনা পজিটিভ হয়েছে। তিনি নিয়মিত রোগী নিয়ে ঢাকা আসা-যাওয়া করেছেন। তার পরিবারের সদস্যদেরও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জ : জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক নারী চিকিৎসকসহ আরও তিনজন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫। গতকাল মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ওই নারী চিকিৎসক সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। অন্য দুজন একই পরিবারের। তাদের বাড়ি জেলা শহরের দাশড়া এলাকায়। ওই পরিবারের এক নারীও কয়েক দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি। আক্রান্ত সবাই নিজ নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষায় তিনজনের পজিটিভ আসে। উল্লেখ্য, এ নিয়ে মানিকগঞ্জে তিনজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হলেন।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে জেলা প্রশাসনের তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন নাজির করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শনিবার আইইডিসিআর থেকে তাদের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানানো হয়। এর পর থেকে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। আক্রান্তদের সার্কিট হাউসে স্থাপিত অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে যাদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তারা সব ধরনের প্রটেকশন নিয়ে মাঠে কাজ করছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন সার্বিক অমিতাভ পরাগ তালুকদার জানান, যাদের পজিটিভ এসেছে তাদের আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা প্রটেকশন নিয়ে মাঠে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে অফিসের কার্যক্রম কিছুটা সীমিত করা হয়েছে। অনলাইনে আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের অভিযানসহ সব কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে।

উল্লেখ্য, হবিগঞ্জে হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৪ দিনে আক্রান্ত দাঁড়ায় ৪৭ জনে, যা সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এর পরও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সরকারি নির্দেশনাগুলো মানছে না সাধারণ মানুষ। হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতাল লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

নড়াইল : নড়াইলে আরও তিন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরা হলেন নড়াইল মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দুই চিকিৎসক এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একজন চিকিৎসক। গতকাল তাদের শরীরে করোনা সংক্রমণের পজিটিভ রেজাল্ট আসে। এ নিয়ে নড়াইলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ জনে। সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল মোমেন জানান, গতকাল পর্যন্ত নড়াইল সদর উপজেলায় তিন চিকিৎসকসহ চারজন, লোহাগড়া উপজেলায় ৯ জনসহ জেলায় মোট ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো।

ঝিনাইদহ : জেলায় স্বাস্থ্য পরিদর্শকসহ আরও চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে সদর উপজেলার স্বাস্থ্য পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন দিদার নামে এক ব্যক্তি, শৈলকূপায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি এনামুল ইসলাম তুহিন ও স্টোরকিপার মাসুদ রানাসহ দুজন ও হরিনাকুন্ডুতে আরাফাত শেখ নামে একজন রয়েছেন। গতকাল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো ৪০টি নমুনার মধ্যে চারটি পজিটিভ আসে। এ নিয়ে গত ৩ দিনে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ জনে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের করোনা ইউনিটের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) : উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র্রে প্রথমবারের মতো দুজন করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন বিশনন্দী ইউনিয়নের দড়ি বিশনন্দী গ্রামের হানিফের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও ছেলে মামুন।

আড়াইহাজারে এই পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৩ জন। এদের মধ্যে দুজন ?সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। বাকি ১১ জনের মধ্যে দুজন আড়াইহাজার হাসপাতালের ভর্তি এবং বাকি ৯ জন তাদের নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের এক ভবঘুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। গতকাল তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। তবে তার কোনো উপসর্গ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ব্যক্তির বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে হরিচর গ্রামের। তিনি আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনেই থাকতেন। সম্প্রতি ভৈরবের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার চলাফেরা দেখে স্থানীয় লোকজন সংশ্লিষ্টদের খবর দেন। ২২ এপ্রিল ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে যেখানে থাকেন সেখানেই অবস্থানের জন্য বলা হয়। নমুনার ফল পজিটিভ আসার পরপরই গতকাল দুপুরে স্টেশনে ছুটে যান আখাউড়ার ইউএনওসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। এ সময় তাকে খুঁজে বের করে আইসোলেশনে রাখার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেওয়া হয়। এদিকে নাসিরনগরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মালয়েশিয়া প্রবাসীর পরিবারে আরও পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : শ্রীমঙ্গলে এবার ২১ বছরের এক কলেজছাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। রবিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ওই মেয়ের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ বলে নিশ্চিত করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী। মেয়েটির বাড়ি ফুলছড়া চা-বাগানে। কালিঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা জানান, মেয়েটি চা জনগোষ্ঠীর। ২২ এপ্রিল মেয়েটি তার বোনের বাসা ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে এক বোন, বাবা, মামা ও পিসির সঙ্গে শ্রীমঙ্গল আসে। পরদিন তাদের পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

লক্ষ্মীপুর : জেলার রামগতিতে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া যুবকের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে তার সংস্পর্শে আসা তিন ভাই-বোনসহ জেলায় গতকাল পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।

মুন্সীগঞ্জ : জেলায় নতুন করে আরও ১৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫। তবে আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী মুন্সীগঞ্জে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯ জন। গতকাল ৮১টি রিপোর্টের মধ্যে ১৬টি পজিটিভ আসে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০, সিরাজদিখানে ২, শ্রীনগরে ২, গজারিয়ায় ২ জন করে শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের হাতিমারার জোড়ার দেউল গ্রামে একই পরিবারের চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর