মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ইউনাইটেডের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মায়ের মৃত্যুর জন্য রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। গত ২৩ এপ্রিল জিয়াউদ্দিন হায়দারের মা ৭৫ বছর বয়সী মাহমুদা খানমের মৃত্যু হয়। ডা. হায়দার বলছেন, লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগীকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর এটি একটি ‘হত্যাকান্ড’।

জানা যায়, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে মাহমুদা খানমকে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ১৪ এপ্রিল তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পর তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহমুদা খানমের মৃত্যু হয়।

ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার বর্তমানে কম্বোডিয়ায় আছেন। সেখান থেকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীতিহীন, আইনবহির্ভূত ও কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারের তিন ভাইসহ পাঁচজন ডাক্তার। একটি হাসপাতালের এমন অবহেলার কারণে মায়ের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। তার মৃত্যু নিয়ে দেশি-বিদেশি সিনিয়র ডাক্তার, মানবাধিকার সংগঠনের নেতা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও স্বীকার করেছেন যে, এটা হত্যাকান্ড।’ ডা. জিয়াউদ্দিন আরও জানান, গত ৫ এপ্রিল তার মায়ের নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। কিন্তু ১১ এপ্রিল তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিচে নামতে থাকে। এ অবস্থায় তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলেও করোনার ভয়ে ফিরিয়ে দেয়। পরে উত্তরার একটি ক্লিনিকে নিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট এলে তাকে ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তাকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হতো। কারণ তার রক্তে তখন অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৫০ শতাংশেরও কম। ডা. হায়দার বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৪ এপ্রিল আমার ভাইদের ডেকে বলেন, আপনাদের মায়ের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। তাকে এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানত, ভেন্টিলেটর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে রোগী অপরিবর্তনীয় মস্তিষ্কের ক্ষতিতে ভুগবেন ও মৃত্যুবরণ করবেন। আমার ভাই, আত্মীয়স্বজন এবং কিছু বন্ধুবান্ধব অনুরোধ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাকে ছাড়পত্র দেয়। এমনকি কোনো মোবাইল ভেন্টিলেটরের সুবিধা ছাড়াই আম্মাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিতে বাধ্য করা হয়। এরপর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও আম্মার মস্তিষ্কের যে ড্যামেজ হয়েছে তা আর কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ২৩ এপ্রিল বিকাল সাড়ে চারটায় তিনি মারা যান। ডা. জিয়া বলেন, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ওদের বিচার হওয়া উচিত এবং যাতে এভাবে স্বজন হারানোর জ্বালা ভবিষ্যতে কাউকে সহ্য করতে না হয়। অভিযোগের বিষয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. সাগুফা আনোয়ার বলেন, হাসপাতালটি করোনা হাসপাতাল নয়। ওই রোগীর করোনা পজিটিভ আসায় সরকারি নিয়ম মেনেই সরকারি বরাদ্দকৃত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে ওনার ছেলেরাই লিখেছেন যে, তার মাকে অন্য কোনো হাসপাতাল ভর্তি করায়নি। ওই পরিস্থিতিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল তাকে ভর্তি নিয়েছে এবং তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। ভেন্টিলেটর দিয়ে চিকিৎসাও চলছিল। এ সময় আবার তার করোনা পরীক্ষা করা হলে পজেটিভ আসে। এ হাসপাতাল করোনা রোগীদের জন্য নয়। তাই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। একজন করোনা রোগীকে হাসপাতালে রেখে বাকি ২০০ রোগীর জীবন ঝুঁকিতে নিতে পারি না।

অন্যদিকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘রোগীর বিষয়ে কোনো অমনোযোগ ছিল না। তাকে যত্নসহকারে সেবা দেওয়া হয়েছে। ওই রোগী ভেন্টিলেটরে ছিলেন। যার কারণে তাকে নিয়মিত মুভ করানো যায়নি। ফলে তার শরীরে ঘা হয়েছিল। এ ধরনের রোগীকে যখন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে নেওয়া হয়, তখন ভেন্টিলেটরসহ নিতে হয়। তা না হলে রোগীর ক্ষতি হতে পারে।’ এ ব্যাপারে পুলিশ বলছে, অভিযোগ এলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর