মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্যাংকের সময়সূচি নিয়ে বিভ্রান্তি

ভোগান্তিতে গ্রাহক, লেনদেন ও এলসি খোলা বিঘ্নিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

সীমিত আকারে খোলা রাখা ব্যাংকের সময়সূচি নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। ফলে দৈনন্দিক লেনদেন ও এলসি খোলায়ও বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের সুবিধামতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী নিয়ে শাখা খোলা রাখতে পারবে। তবে লেনদেনের সময়সূচি নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে যা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। কিন্তু কোনো ব্যাংক যদি চায়, সপ্তাহের প্রতিদিনই শাখা খোলা রাখতে পারবে। আবার চাইলে দুই বা তিন দিন খোলা রাখতে পারবে। বিপত্তি বেধেছে এখানেই। কোন এলাকায় কোন ব্যাংকের শাখা সপ্তাহে কোন কোন দিন খোলা সেটি জানতে পারছেন না গ্রাহকরা। যার ফলে গ্রাহকরা ব্যাংকে গিয়ে দেখেন শাখা বন্ধ। ফলে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আবার কোথাও কোথাও এলসি খুলতেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় ব্যাংকের শাখা সপ্তাহে তিন দিন খোলা থাকছে তিন ঘণ্টা করে, যা লেনদেন বা অন্যান্য কাজকর্মের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে গ্রাহকরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। কোথাও কোথাও এলাকাভিত্তিক শাখা পুরোপুরি বন্ধও রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকের শাখাগুলো সপ্তাহে দুই দিন খোলা রাখা হচ্ছে। এতে গ্রাহকদের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, বাণিজ্যিক বা আবাসিক এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলো সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাণিজ্যিক শাখায় স্বাভাবিকভাবেই কাজের চাপ বেশি থাকে। আবার গ্রাহকও বেশি থাকে। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে, আবাসিক এলাকা হলেও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। কিংবা সেখানে বেশি সংখ্যক মানুষের বসবাস। ফলে ওই সব অঞ্চলের ব্যাংকের শাখাগুলোতে গ্রাহকদের কাজও বেশি থাকে। কিন্তু সে অনুযায়ী ব্যাংকের শাখা খোলা থাকছে না। ফলে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে, প্রধান এ দুটি বাণিজ্যিক এলাকা ছাড়া দেশের অন্য এলাকায় সীমিত আকারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। এসব ব্যাংকের শাখায় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গ্রাহক লেনদেন করতে পারবেন। পাশাপাশি করোনার কারণে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন যেসব এলাকা লকডাউন করবে, ওই এলাকাগুলোর সব ব্যাংকের সব শাখা বন্ধ থাকবে। গ্রাহকরা মনে করেন, সপ্তাহের পাঁচ দিনই ব্যাংকের শাখা খোলা রাখা উচিত। কেননা এই সংক্ষিপ্ত সময়সূচির ব্যাংকিং সেবা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন কাজের বিঘ্ন ঘটছে। কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, ব্যাংকের শাখাগুলো যেভাবে খোলা হচ্ছে তা প্রয়োজন অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া কোন শাখা কোন দিন খোলা থাকছে এটি নিয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বলে দেওয়া উচিত, কোনো শাখাই বন্ধ থাকবে না। তবে সময়সূচি সীমিত। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক এলাকা ঢাকার মতিঝিল ও দিলকুশা এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও আগ্রাবাদে অবস্থিত সব তফসিলি ব্যাংক খোলা রাখতে হবে। একই সঙ্গে এসব এলাকায় ব্যাংকগুলোর লেনদেন ও খোলা রাখার সময়ও বাড়ানো হয়েছে। বন্দর-সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে লেনদেন হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা। বন্দরের পণ্যজট এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক এলাকার শাখাগুলো খোলা রাখা হলেও অন্যান্য এলাকার শাখাগুলোতে তিন ঘণ্টা লেনদেন হচ্ছে। কিন্তু এই তিন ঘণ্টা লেনদেনে দেখা গেছে, অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের সব শাখা খোলা রাখা হয় না। যেসব শাখা খোলা রাখা হচ্ছে, সেগুলোও সপ্তাহে দুই দিন লেনদেন করছে। অনেক স্থানীয় শাখায় কোনো লেনদেন হচ্ছে না। এতে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলোকে তো প্রতিদিনই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এ সময়ে লেনদেন কিংবা সেবা পেতে গ্রাহকরা যাতে কোনোরকম ভোগান্তিতে না পড়েন তা নিজ নিজ ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর