বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

খুলেছে কারখানা, দোকানপাট ব্যাংক লেনদেন এখনো সীমিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলেছে কারখানা, দোকানপাট ব্যাংক লেনদেন এখনো সীমিত

লকডাউন শিথিল করে রাজধানীসহ সারা দেশে ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হচ্ছে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন কলকারখানা, দোকানপাট। তবে এখনো সীমিত রাখা হয়েছে ব্যাংক লেনদেন। সপ্তাহে দুই দিন ব্যাংকের শাখাগুলো খোলা রাখায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সারা দেশে ব্যাংকের সব শাখায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে খোলা রাখার কথা বলা হলেও বাস্তবে বেশির ভাগ শাখাই বন্ধ। এ ছাড়া যেসব শাখা খোলা হচ্ছে, এর অধিকাংশ সপ্তাহে দুই দিন লেনদেন করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ উপেক্ষা করে ব্যাংকগুলো সীমিত পরিসরে লেনদেনে সব সেবা দিচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তারা।জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রকোপকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের সুবিধামতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী নিয়ে শাখা খোলা রাখতে পারবে। তবে লেনদেনের সময়সূচি নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে যা সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। মার্চ মাসে সীমিত ব্যাংকিংয়ের এ নির্দেশ একাধিকবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিবর্তন করেছে। এদিকে গতকাল থেকে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে হোটেল, খাবারের দোকানগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই সতর্কতা নিয়ে সীমিত পরিসরে চলছে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা, অফিস। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সাভার, গাজীপুরসহ গার্মেন্টশিল্প এলাকাগুলোয় দৈনন্দিন কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা। দেশের ডাকঘরগুলো আগে থেকেই খোলা ছিল। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের অফিসগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের শুল্ক ও ভ্যাট অনুবিভাগের সব দফতর খোলা রাখতে বলা হয়েছে। সিইপিজেড, কেইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায় পোশাক কারখানায় যোগ দিয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। করোনার ভয় উপেক্ষা করেই কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন তারা। বেপজা ও বিজিএমইএর দাবি, সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কারখানাগুলোয় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছেন। সব ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড শুরু হলেও ব্যাংক লেনদেন নিয়ে ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সীমিত পরিসরে লেনদেনের নির্দেশ রয়েছে শাখা খোলা রাখার। গ্রাহকরা ব্যাংকে গিয়ে দেখছেন শাখা বন্ধ। ফলে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। রপ্তানিমুখী শিল্প চালু হলেও এলসি খুলতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। আবার কোথাও কোথাও এলসি খুলতেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় ব্যাংকের শাখা সপ্তাহে তিন দিন খোলা থাকছে তিন ঘণ্টা করে, যা লেনদেন বা অন্যান্য কাজকর্মের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে গ্রাহকরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। কোথাও কোথাও এলাকাভিত্তিক শাখা পুরোপুরি বন্ধও রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকের শাখাগুলো সপ্তাহে দুই দিন খোলা রাখা হচ্ছে। এতে গ্রাহকদের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, বাণিজ্যিক বা আবাসিক এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলো সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাণিজ্যিক শাখায় স্বাভাবিকভাবেই কাজের চাপ বেশি থাকে। আবার গ্রাহকও বেশি থাকে। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে, আবাসিক এলাকা হলেও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। কিংবা সেখানে বেশিসংখ্যক মানুষের বসবাস। ফলে ওই সব অঞ্চলের ব্যাংকের শাখাগুলোতে গ্রাহকদের কাজও বেশি থাকে। কিন্তু সে অনুযায়ী ব্যাংকের শাখা খোলা থাকছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে, প্রধান এ দুটি বাণিজ্যিক এলাকা ছাড়া দেশের অন্য এলাকায় সীমিত আকারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। এসব ব্যাংকের শাখায় সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত গ্রাহক লেনদেন করতে পারবেন। পাশাপাশি করোনার কারণে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন যেসব এলাকা লকডাউন করবে, ওই এলাকাগুলোর সব ব্যাংকের সব শাখা বন্ধ থাকবে। গ্রাহকরা মনে করেন, সপ্তাহের পাঁচ দিনই ব্যাংকের শাখা খোলা রাখা উচিত। কেননা এই সংক্ষিপ্ত সময়সূচির ব্যাংকিং সেবা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন কাজের বিঘ্ন ঘটছে।

কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, ব্যাংকের শাখাগুলো যেভাবে খোলা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া কোন শাখা কোন দিন খোলা থাকছে এটি নিয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বলে দেওয়া উচিত, কোনো শাখাই বন্ধ থাকবে না। তবে সময়সূচি সীমিত। এখন যেহেতু সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যাংক লেনদেন সপ্তাহের পাঁচ দিনই করা উচিত। তা না হলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ছাড়াও প্রতিদিনকার লেনদেন করতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর