বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালের হিরো ৩৬ লাশের সৎকারের যোদ্ধা খোরশেদ

এম এ শাহীন, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

করোনাকালের হিরো ৩৬ লাশের সৎকারের যোদ্ধা খোরশেদ

চোখের সামনে পড়ে আছে মৃতদেহ। ধরছে না পরিবারের লোকজনও। প্রতিবেশীরাও দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকা সেই মৃতদেহের পাশে ‘আশীর্বাদ’ হয়ে আসেন একজন। সঙ্গে আরও কয়েকজনকে নিয়ে ঝুঁকি জেনেই ধরেন মৃতদেহ। তারপর নিয়ে যান সৎকারের জন্য। হিন্দুদের কেউ কেউ তাকে বলছেন ভগবানের দূত আর মুসলিমরা বলছেন ফেরেশতা। হিন্দু-মুসলিমের  সেই ‘দূত’ বা ‘ফেরেশতা’ হলেন মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এরই মধ্যে দেশ-বিদেশে তার নাম প্রবলভাবে আলোচিত। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের টানা তিনবারের কাউন্সিলর এবং একই সঙ্গে মহানগর যুবদলের সভাপতি। গতকাল পর্যন্ত হিন্দুধর্মের ৬টি মুখাগ্নিসহ ৩৫টি লাশের দাফন কাজ সম্পন্ন করেছেন কাউন্সিলর খোরশেদ। স্থানীয়দের কেউ তাকে উপাধি দিেেয়ছেন ‘করোনাবীর’, কেউ ‘করোনাযোদ্ধা’। স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের ভাষায়, খোরশেদ ‘বীর বাহাদুর’। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রথম মৃত্যু হয় ২৯ মার্চ। এর পর থেকেই নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে মৃতের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে। প্রায় প্রতিদিনই তিন থেকে চারজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। আর এই মৃত্যুর আরেক ভয়াবহ দিক হচ্ছে আত্মীয়স্বজনসহ কেউ মৃতদেহের কাছে ঘেঁষতে চান না। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, মৃত ব্যক্তির সঙ্গে ভাইরাস থাকা কিংবা এ থেকে সংক্রমণের কোনো সম্ভাবনা নেই। তার পরও সংক্রমণের শঙ্কায় মৃত ব্যক্তির কাছে কেউ আসছেন না। প্রতিবেশী দূরের কথা, স্বজনরাও কাছে আসেন না। লাশ দাফন-কাফন ও সৎকারে কেউ অংশগ্রহণ করেন না। এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলেছে নারায়ণগঞ্জসহ দেশজুড়ে। হিন্দু ধর্মমতে, শবদেহ চিতায় স্থাপন করার পর তিনবার প্রদক্ষিণ করে পুত্র বা কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মুখে অগ্নি স্পর্শ করে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে মুখাগ্নি করতে হয়। এই মুখাগ্নির কারণ সন্তান পিতৃ ও মাতৃঋণে ঋণী। সন্তানের অভাবে মৃতের অভিভাবক, কনিষ্ঠ বা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, ভাইপো, বোনপো, জামাতা অথবা সন্তানতুল্য অথবা সমসাময়িক আত্মীয়ের মধ্যে যে কেউ একজন এসে মুখাগ্নি করতে পারে। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মৃতদেহ সৎকারের সময় মুখাগ্নি করার জন্যও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে মৃতদেহ সৎকারের পাশাপাশি ধর্মের ঊর্ধ্বে থেকে মুখাগ্নিরও কাজটিও করতে হচ্ছে। একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ২৬ এপ্রিল। এদিন দুপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে নিজ বাসার সিঁড়িতেই মারা যান খোকন সাহা নামে এক ব্যবসায়ী। খোকন সাহা নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা এলাকায় একটি বাড়ির চতুর্থ তলায় বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। বেশ কয়েকদিন যাবৎ তিনি অসুস্থ ছিলেন। এর মধ্যেই অবস্থা গুরুতর হয় তার। হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ফোন করে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের ডাকতে থাকেন স্ত্রী তৃষা সাহা। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। বাধ্য হয়ে শাশুড়ির সহযোগিতায় তিনি নিজেই হাসপাতালে নেওয়ার জন্য স্বামীকে নিয়ে সিঁড়িতে নামতে থাকেন। কিন্তু অসুস্থ শরীর সিঁড়ি ভেঙে নামার ধকল নিতে পারেনি। তিন তলায় নামার পরই তিনি শরীর ছেড়ে দেন।

খোকন সাহার স্ত্রী তৃষা সাহা বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় আছিল। আমরা নিচে নামানোর চেষ্টা করতাছিলাম। অ্যাম্বুলেন্স দিয়া আমরা ঢাকা নিয়া যাইতাম। সবাইরে ডাকছি একটা লোকও আসে নাই। কেউ নাকি ধরবে না। আমি আমার শাশুড়ি আর আমার মেয়েকে নিয়ে তাকে ধইরা নামানোর চেষ্টা করি। তিন তলার ভাড়াটিয়ার কাছে আমার মেয়ে পানি চাইছিল। ধমক দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় ভাড়াটিয়া।’ সিঁড়িতে যখন খোকন সাহা ছটফট করছিলেন তখন সন্তানের এমন অবস্থা দেখে বৃদ্ধা মা দৌড়ে চার তালায় গিয়ে পানি নিয়ে আসেন ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য। মুখে সামান্য পানি দেওয়া মাত্র সেখানেই প্রাণ যায় খোকন সাহার। এরপর প্রায় তিন ঘণ্টা সেখানেই পড়ে ছিলেন। আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশী কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে তার আত্মীয়রা ফোন করেন কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে। তখন খোরশেদ মাসদাইর কবরস্থানে করোনায় মৃত এক ব্যক্তির লাশ দাফনে ব্যস্ত ছিলেন। সেই আত্মীয়ের কাছে তিনি অনুরোধ করেন যাতে তারা ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তার অনুরোধেও কেউ এগিয়ে আসেননি। কয়েক ঘণ্টা পর আবার ফোন করা হলে কাউন্সিলর খোরশেদ তার স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে ছুটে যান মৃতের সৎকারে। স্বেচ্ছাসেবী দলের সাহায্যে সিঁড়িতে পড়ে থাকা লাশ নামিয়ে নিয়ে আসেন। নিজেদের গাড়ি দিয়ে শ্মশান পর্যন্ত নিয়ে আসেন লাশ। আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কেউ এগিয়ে না আসায় মুখাগ্নি দেওয়ার দায়িত্বও পড়ে খোরশেদের কাঁধে। তিনি সেই দায়িত্ব সাদরে গ্রহণ করেন। লাশ নিয়ে আসার সময় মৃতের স্ত্রীকে তিনি কথা দিয়ে যান যথাযথ সম্মানের সঙ্গেই সৎকার করা হবে।

খোকন সাহার সৎকার প্রসঙ্গে তার স্ত্রী তৃষা সাহা বলেন, ‘আমাদের আত্মীয়স্বজন-পাড়াপ্রতিবেশী কেউ আসে না, কেউ ধরে না। আমি কার ভরসা করুম? আমার তো ছেলে নাই। যাদের ছেলে নাই তাদেরটা তো আত্মীয়রাই করে। কিন্তু আমার তো কেউ আসে নাই। তাই কাউন্সিলর ভাইকে বলছি যে তিনি যাতে সব করেন।’

১৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ইউনানি চিকিৎসার পথিকৃৎ ডা. কৈলাস বণিক করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। তিনি ১০ দিন যাবৎ জ্বর, সর্দি, কাশি ও তিন দিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার কোনো ছেলেসন্তান ছিল না। এ অবস্থায় কোনো আত্মীয়স্বজনও এগিয়ে আসেননি মৃতদেহ সৎকারে। ফলে কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এগিয়ে আসেন মৃতদেহ সৎকারের জন্য। এটা ছিল তাদের ১৪তম সৎকার। সব কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হলেও শেষ পর্যায়ে মুখাগ্নি করার জন্য কোনো আত্মীয় ছিল না। পরে বাধ্য হয়েই কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ডা. কৈলাস বণিকের মেয়েকে নিয়েই মুখাগ্নির কাজটি সম্পন্ন করেন। একই দিন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান সিপিবির নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সদস্য ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড সেক্রেটারি বিকাশ সাহা। তার ছেলে অনির্বাণ সাহা বলেন, ‘বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন শুনে আত্মীয়স্বজন কেউ আসেননি। আমার একার পক্ষে বাবার মৃতদেহ দাহ করা সম্ভব ছিল না। কারণ অনেক নিয়ম-কানুন আছে। এত কিছু আমি একা কীভাবে করব। আর কেউ এগিয়েও আসছিল না। তাই খোরশেদ কাকাকে খবর দিই, তিনি এসে সহযোগিতা করেন।’ এর আগে ১০ এপ্রিল নন্দীপাড়া ডিএন রোড এলাকার করোনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক লোক মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু এখানেও সংক্রমণের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। তার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেও কেউ আসেননি। সংশ্লিষ্ট ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সফিউদ্দিন প্রধান ডাকাডাকি করেও কাউকে পাননি। পরে তিনি নিজেই ভ্যানে করে মাসদাইর শ্মশানে নিয়ে সৎকারের ব্যবস্থা করেন। গত ৮ এপ্রিল দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। সেদিন করোনা সন্দেহে মারা গেছেন এমন ফোন পেয়ে চারজনকে নিয়ে নিজ ওয়ার্ড জামতলায় ছুটে যান কাউন্সিলর খোরশেদ। সে বাসায় গিয়ে তিনি দেখতে পান অন্য কক্ষে থাকা স্ত্রী আর সন্তানরা মৃতের ঘর দেখিয়ে দেন খোরশেদকে। তারা বলেন ‘ওই রুমে লাশটি পড়ে আছে। নিয়ে যান।’ পরে খোরশেদ চারজনকে সঙ্গে নিয়ে লাশ উদ্ধার করেন। নিয়ে যান মাসদাইর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে। মাত্র চারজনের উপস্থিতিতে দাফন সম্পন্ন হয় আফতাবউদ্দিনের।

গত ৭ এপ্রিল প্রচ- জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগে নারায়ণগঞ্জের সংগীতজগতের আলোচিত মুখ ‘হিরো লিসান’ ইন্তেকাল করেন। যার প্রকৃত নাম খাইরুল আলম হিরো। শহরের দেওভোগ এলাকার বাসা থেকে তার মৃতদেহ একটি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর চেষ্টা করলে আশপাশের লোকজনের বাধায় সেটা ফেলে রেখেই চলে যান চালক। ওই সময় পরিবারের লোকজনও আসেননি ধরতে। ফলে মৃতদেহ পড়ে থাকে বাড়ির গেটের ভিতরেই। পরে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আফরোজা হাসান বিভা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোন্তফা আলী শেখ ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের সহায়তায় লাশ দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে একের পর এক ভয়ানক ঘটনা ঘটছে নারায়ণগঞ্জজুড়ে। সম্প্রতি শহরের আমলাপাড়ায় একই পরিবারের তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনজনের মৃতদেহই দাফন করেন কাউন্সিলর খোরশেদ। তাদের পরিবারের সদস্য টুটুল আহমেদ বলেন, ‘কি দুর্ভাগ্য যে একেক করে খালা, মামা ও মামাতো বোনকে তিনিই (খোরশেদ) দাফন করেন। খোরশেদ ভাই আমাদের রক্তের সম্পর্কের না হলেও এখন তিনিই বড় আপনজন। তিনি না থাকলে হয়তো জানাজা ছাড়াই মৃতদেহ দাফন করতে হতো। তার কারণে ধর্মীয় রীতিতে মাটি পেয়েছেন তিনজন।’

গত ২২ এপ্রিল গলাচিপানিবাসী গায়ত্রী দেবী বৈশাখী (৪৮) মুগদা হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও তার দল নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শ্মশানে নিয়ে দাহ করেন। আর এই সৎকারের ছবি নজর কাড়ে ডাচ্ রাজনীতিবিদ জোরাম জারন ভ্যান ক্লাভেরনের। তিনি ২০১০ সালের ১ জুন থেকে ২০১৪ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের একজন পার্লামেন্ট মেম্বার ছিলেন। তিনি মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তিনি একটি ইসলামবিরোধী বই লেখার অর্ধেক পথে ইসলাম গ্রহণ করেন। জোরাম জারন ভ্যান ক্লাভেরন কাউন্সিলর খোরশেদের সৎকারের ছবিটি তার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ‘ছবিগুলি বাংলাদেশ থেকে তোলা হয়েছে, যেখানে কভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে একজন হিন্দু ভাই মারা গিয়েছিলেন। তবে তার সম্প্রদায়ের কিংবা পরিবারের কেউই সৎকার কাজে অংশগ্রহণ করেনি। একদল মুসলমান তার সৎকারে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নিয়ে তা সম্পন্ন করেছিলেন। এটি ইসলামের সম্প্রীতি ও শিক্ষার সত্য লক্ষণ। কিছুদিন আগে আমি ভারত থেকে অনুরূপ সংবাদ পড়েছি। এই বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি বেশি কিছু জানি না। আমি জানি একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং তারা এত ধনী নয়। তবে তাদের হৃদয় সমুদ্রের মতো। যারা প্রায় মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছেন। আমি এই দেশকে এবং এর জনগণকে সালাম জানাতে চাই। ভারত কি তাদের কাছ থেকে কিছু শিখবে?’ মানুষের এমন মনুষ্যত্বহীনতা দেখে এই মহাদুর্যোগের সময় মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করে কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, ‘এই যে আপনারা প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনরা সাড়া দিচ্ছেন না। এতে মানবিক সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরাও মানুষ আপনারাও মানুষ। আমরা যদি পারি আপনারা কেন পারবেন না!’ কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, ‘যখন দেখলাম করোনায় আক্রান্ত হলে স্বজনরা লাশের কাছে যেতে চান না। মানবিক দিক বিবেচনা করে এটা আমার মাথায় এসেছে। আসলে মানুষের বিপদের দিনেই পাশে থাকা জরুরি। এখনই মানুষের সব থেকে বড় বিপদ চলছে। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্য আমি এ কাজে এসেছি। আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমি হঠাৎ করে এ কাজ শুরু করিনি। প্রথমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানো ও বিতরণ করা থেকে এ কাজে যুক্ত হই। এভাবে জড়িয়ে পড়েছি বলেই পরিবার কোনো বাধা দিতে পারেনি। তার পরও পরিবার ভীত, বারবার অনুরোধ করে সতর্ক থাকার জন্য।’ খোরশেদ বলেন, ‘আপনাদের প্রতি অনুরোধ জানাই মাস্ক পরে, গ্লাভস পরে যে কোনো করোনা রোগীর সেবা করতে পারবেন। কোনো ভয়ের কারণ নেই। দয়া করে আত্মীয়স্বজন-পাড়াপ্রতিবেশীর মৃত্যুর পর তাদের সম্মান রক্ষা করুন। হিন্দু-মুসলিম কোনো ধর্ম নিয়ে নয়। মানুষের প্রতি মানবতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

কাউন্সিলর খোরশেদের স্ত্রী আফরোজা খন্দকার রুনা বলেন, ‘করোনা নিয়ে আতঙ্কে নেই এমন কেউ আছে বলে মনে হয় না। করোনাকে সবাই ভয় পাচ্ছে। আমরা এর ঊর্ধ্বে নই। আমরাও ভয় পাই। একজন কাউন্সিলর মানবতার দিক থেকে ঘোষণা দিয়েছেন মৃতদেহ দাফনে যাবেন। তাই বাধা দিইনি। এর মধ্যেও একবার দিয়েছি, কিন্তু তিনি তা শোনেননি। তাই বলেছি যতটা নিরাপদে থেকে কাজ করা যায়, তা যেন অনুসরণ করেন। তবে দুশ্চিন্তা তো থাকেই।’ তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানরা তার বাবাকে খুব বেশি মিস করে। ছোট মেয়েটা তো প্রতিদিন কান্না করে। এমনিতেই কাউন্সিলর হওয়ায় ঠিকভাবে সময় দিতে পারত না। আর এখন একসঙ্গে বসে কথা বলা হয় না, খাবার খাওয়া হয় না, আলাদা রুমে থাকে। সব সময় একটা ভয় আছে, কিন্তু ভালো লাগে তিনি মানুষের পাশে আছেন। আমি আমার স্বামীর সুস্থ থাকার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’

‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সামাজিক সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নূর উদ্দিন বলেন, ‘মানবতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন খোরশেদ। তবে তাকে আরও সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার আরও কাজ বাকি আছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর