শুক্রবার, ১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আক্রান্ত প্রতিদিনই বাড়ছে

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৫৬৪, মৃত ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

আক্রান্ত প্রতিদিনই বাড়ছে

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজন মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে ৫৬৪ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও ১০ জন। এ পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬৮ জন, মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ৬৬৭ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১৬০ জন। বরিশাল ও টাঙ্গাইলে করোনা আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা গেছেন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচ হাজার ৬২৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে চার হাজার ৯৬৫টি। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৬৬টি। নতুন যাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে আরও ৫৬৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাত হাজার ৬৬৭ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৮ জনে। এ ছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও ১০ জন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৬০ জন। নতুন করে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং দুজন নারী। দুজন ষাটোর্ধ্ব এবং তিনজন চল্লিশোর্ধ্ব। বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে ১৩৮ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ৪২০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৮ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৮৯১ জন। সারা দেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে নয় হাজার ৬৩৮টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে আছে তিন হাজার ৯৪৪টি এবং ঢাকার বাইরে পাঁচ হাজার ৬৯৩টি। বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩৪১টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০২টি।

গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে দুই হাজার ৬৭ জনকে। এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে এক লাখ ৭৭ হাজার ২৪৫ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ১১৫ জনকে। এ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে নয় হাজার ২৭৪ জনকে। হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে দুই হাজার ১৮২ জনকে এবং এ পর্যন্ত মোট কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৫১৯ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭৮২ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার ৩৭ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৭১ হাজার ৪৮৩ জন।

ডা. নাসিমা সুলতানা বুলেটিনের শুরুতেই জানান, সব মিলিয়ে দেশে এখন ২৯টি সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। নতুন করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগ এবং বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতাল (সাবেক এ্যাপোলো) নমুনা পরীক্ষা শুরু করেছে। স্কয়ার ও ইউনাইটেড হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ শুরু হলেও এখনো রিপোর্ট আসেনি। তাছাড়া ইতিমধ্যে ল্যাবএইড, ইবনে সিনা, তায়েরুনেসা মেমোরিয়াল হাসপাতাল (টিএমএমএস) ও রেফায়েতউল্ল্যাহ হাসপাতালও নমুনা পরীক্ষার আবেদন করেছে। আবেদনগুলো বিবেচনাধীন রয়েছে এবং শর্তসাপেক্ষে দুই-একদিনের মধ্যে তাদেরও অনুমোদন দেওয়া হবে। নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাবের যে শর্ত দেওয়া হয়েছে তা পূরণ করতে পারলে যে কোনো বেসরকারি হাসপাতালকে অনুমোদন দেওয়া হবে। আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক রোগীর (৫০) মৃত্যু হয়েছে। একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেক রোগীর (২৬) রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে ওই নারী করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও পরীক্ষায় তার রিপোর্ট নেগেটিভ। অর্থাৎ তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারীর (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। তিনি রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। লক্ষ্মীপুরে চার মাসের এক শিশুসহ একই পরিবারের তিনজনসহ নতুন করে ছয়জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ জন। জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গাফফার এ তথ্য জানান। নাটোরে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তিনি নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। যেহেতু নমুনায় পজেটিভ তাই ওই চিকিৎসককে কোয়ারেন্টাইনে রাখাসহ তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। আক্রান্ত নয়জন হওয়ায় নাটোর জেলা লকডাউন করা হয়েছে। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া ওষুধ কোম্পানির কর্মীকে বগুড়া সদর থানা পুলিশ উদ্ধার করেছে। বগুড়া সদরের তার গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে সেখানেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এদিকে বগুড়ার সোনাতলায় আরও এক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম বদিউজ্জামান জানান, সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর আত্মগোপন করে। পরে তাকে বগুড়া সদর উপজেলার শেখেরকোলা গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়। টাঙ্গাইলে নতুন করে আরও একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের আরও তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে বিআইডব্লিটিসির মোট পাঁচ কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ জন। নারায়ণগঞ্জে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৩ জন। মারা গেছেন ৪২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩০ জন। ফেনীর দাগনভূঞায় করোনার উপসর্গ ছাড়াই নতুন করে আরও এক সরকারি কর্মকর্তার (৪০) করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট চারজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক জুতা কারখানা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বড়বাদুরা গ্রামের দক্ষিণপাড়ার ৫০টি বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় পিতা-পুত্রসহ নতুন করে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কুমিল্লায় নতুন করে নয়জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

 

সর্বশেষ খবর