শিরোনাম
শুক্রবার, ১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আত্মতুষ্টির মতো মারাত্মক ভাইরাস আর কিছু হয় না

এম জে আকবর

বার্তা সংস্থা আইএএনএস (ইন্দো-এশিয়া নিউজ সার্ভিস) তাদের চালিত এক জরিপের ফল ২৩ এপ্রিল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি জনসমর্থন ২৫ মার্চের ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বাড়তে বাড়তে ভারতজুড়ে লকডাউন বলবৎ হওয়ার পর ২১ এপ্রিলে ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশে উঠেছে। স্তম্ভিত হওয়ার মতো ব্যাপার?

হ্যাঁ, স্তম্ভিত তাঁরাই, যারা পাঁচ সপ্তাহ নয়, পাঁচ বছর ধরে সেল্ফ-আইসোলেশনে থাকেন আর ড্রয়িং রুমে বসে বসে মন্তব্য ঝাড়েন।

জরিপে যে সংখ্যা পাওয়া গেল তার চমৎকার একটা দিক হলো, ভারতীয় মুসলমানদের গরিষ্ঠাংশের সমর্থন ব্যতিরেকে ৯৩ দশমিক ৫ ভাগ সমর্থন গাণিতিকভাবে অসম্ভব। মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ আর হিন্দুরা ৮০ শতাংশ। এখন অঙ্কটা মিলিয়ে নিলেই হয়। উঁচু তলার অভিজাতদের শ্রেষ্ঠত্বের চাইতে কমন ইন্ডিয়ানরা যেক্ষেত্রে মহানতর সেটা হলো তাদের কমনসেন্স। রাজনৈতিক ডামাডোলের হৈ-হল্লা বা টেলিভিশনের টকশোয় উত্তপ্ত গলাবাজি দেখে তারা শাসককে ওজন করে না। দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যক্ষ বিষয়গুলো দিয়েই তারা বিচার করে। করোনার অতিমারী রুখে দেওয়ার লক্ষ্যে লকডাউন জারির পর ১৩০ কোটি ভারতীয়র জীবন-ব্যবস্থাপনায় প্রাথমিক গুরুত্ব বহন করে খাদ্য, ওষুধ, নিত্যপণ্য আর কেনার উপায়। বিষয়গুলো চর্চায় মাথায় রাখতে হয়- ‘প্রতিটি জীবন সমান মূল্যবান।’ তাই আমরা ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনায় নিতে পারি। যেমন : (১) প্রধানমন্ত্রীর দরিদ্র কল্যাণ কর্মসূচির তহবিল থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে ৩৩ কোটি দরিদ্রের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে ৩১,২৩৫ কোটি রুপি।

(২) প্রায় ২০ কোটি নারীর মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে ১০,০২৫ কোটি রুপি।

(৩) আট কোটি চাষিকে দেওয়া হয় ১৬,১৪৬ কোটি রুপি।

(৪) নির্মাণ খাতের ২১ কোটি ৭০ লাখ দিনভিত্তিক শ্রমিকের মধ্যে বিতরণ করা হয় ৩৪৯৭ কোটি রুপি।

(৫) বিনামূল্যে রেশন পেয়েছে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ আর বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার পেয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ বাড়ি।

তালিকা আর লম্বা না করলেও চলে। তবে মনে থাকা দরকার মধ্যস্বত্বভোগীর দুর্নীতি পরিহার করে দ্রুতগতিতে নগদ রুপি যে এত বিরাট সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো কখনই সম্ভব হতো না যদি ২০১৫ সালেই নরেন্দ্র মোদি গরিবদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত না করতেন। ডিজিটাল অবকাঠামো ছিল বলেই সুন্দর এই কাজটা করা গেছে। এ জন্যই বলা হয়- ডিজিটাল কাঠামো স্বাভাবিক অবস্থায় চমৎকার, সংকটকালে এটা অপরিহার্য।

যুদ্ধ প্রস্তুতি : ‘করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার মতো প্রস্তুতি ভারতের নেই’- পাশ্চাত্যের নাম করা একটি সাময়িকী ১০ এপ্রিল এ মন্তব্য করে। তারপর?

২৬ এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় প্রাণ গেছে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের। ব্রিটেনে মারা যায় ২০ হাজারের বেশি। ভারতে মাত্র ৮২৬ জন। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ৪ গুণ জনসংখ্যা ভারতের এবং ব্রিটেনের চাইতে ১২ গুণ। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতের সৎকার কেন্দ্রগুলো প্রায় খাঁ খাঁ করছে। আশ্চর্য!’ পশ্চিমা গণমাধ্যমের হতাশা বর্ণিত প্রতিবেদনগুলো পড়তে আমার একটা প্রবচন মনে পড়ল- ‘অনিবার্য কারণবশত জ্ঞানদান সভার আয়োজন বাতিল করা হলো।’ করোনার অতিমারি এড়ানোর জন্য মাস্ক পরতে হয় মুখে আর চোখে। দিল্লিতে কর্মরত কিছুসংখ্যক বৈদেশিক সংবাদদাতার কাজ-কারবার দেখে মনে হয় তারা তাদের চোখে মাস্ক এঁটেছেন। তাই বাস্তবটা দেখেন না।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ‘কভিড-১৯ সংকট ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-ভাষা-সীমান্ত বোঝে না। সে শুধু আঘাত হেনেই চলে। ঐক্য আর ভ্রাতৃত্ব দিয়েই তাকে রুখতে হবে।’ রমজানের বাণীতে তিনি বলেন, পবিত্র এই মাসে আমাদের প্রার্থনা হোক- প্রত্যেকের নিরাপত্তা, মঙ্গল ও সমৃদ্ধির জন্য। মোদি বলেন, ‘স্রষ্টা আমাদের ধৈর্যশক্তি দিন, সেবার সামর্থ্য দিন, দয়া সম্প্রীতি আর মমত্ববোধ বাড়িয়ে দিন। আমাদের ইবাদত হোক- ঈদের আগেই শেষ হয়ে যাক এই ব্যাধি।’

ভারত এখন নীরব। জনসমাগম হবে, এরকম সব উৎসব স্থগিত। অতিমারির বিরুদ্ধে সাবধানতার বিকল্প নেই। ভারতীয় সেই প্রবাদটি মনে রাখতে হবে- ‘সাবধান না থাকলে আগুন, ঋণ আর ব্যাধি, এই তিন ফিরে আসবেই।’ আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। আত্মতুষ্টির মতো মারাত্মক ভাইরাস আর কিছু হয় না।

সর্বশেষ খবর