শুক্রবার, ১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় বিপাকে জরুরি রোগীরা

♦ করোনা টেস্ট ছাড়া মিলছে না সেবা ♦ উপসর্গ না থাকায় টেস্ট করছে না কর্তৃপক্ষ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে অধিকাংশ হাসপাতালের স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জরুরি রোগীদের সেবা পেতে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। করোনা টেস্ট ছাড়া সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। জরুরি সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু কোনো উপসর্গ না থাকায় কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরেও করোনা টেস্ট করাতে পারছেন না রোগী এবং স্বজনরা। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছেন অনেক মুমূর্ষু রোগী।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জরুরি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া আবশ্যক। প্রয়োজনে হাসপাতাল থেকে রোগী ও তার স্বজনদের টেস্ট করানোর জন্য রেফারেন্স দেওয়া যেতে পারে। নইলে এমন রোগী নিয়ে স্বজনরা টেস্টের জন্য কোথায় দৌড়ঝাঁপ করবেন? স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে চিন্তা করা জরুরি।

চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা আফরোজা বেগম ঘরের মেঝেতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। দ্রুত হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা জানান তিনি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। দ্রুত অপারেশনের প্রয়োজন। তাৎক্ষণিক রোগীকে ঢাকায় এনে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করালে করোনা টেস্টের প্রতিবেদন নিয়ে আসতে বলে কর্তৃপক্ষ। আফরোজা বেগমের জামাতা হাসিবুর ইসলাম বলেন, আমার শ্বশুর ও আমি শাশুড়িকে হাসপাতালে ভর্তি করলে তারা অনেকগুলো টেস্ট করতে দেয়। কিন্তু প্রথমে আমাদের তিনজনের করোনা টেস্টের প্রতিবেদন আনতে বলে। কুর্মিটোলা ও মুগদা হাসপাতালে টেস্টের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কোনো উপসর্গ না থাকায় টেস্ট করাবে না বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও বলেন, ওই হাসপাতাল রোগী নিয়ে চলে যেতে বললে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসকরা করোনা টেস্ট ছাড়া অপারেশন করতে অস্বীকৃতি জানান। অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ায় তারা ঝুঁকি নিতে চাইছিলেন না। কোনো উপায় না থাকায় রোগী নিয়ে চট্টগ্রামে ফিরে যাই। বিনা চিকিৎসায় চোখের সামনে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে একটা মানুষ। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন কিডনি রোগীরা। অনেক রোগীর নির্দিষ্ট সময় পর পর ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়। করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে হাসপাতালগুলো। অনেক হাসপাতালে ইউনিট লকডাউন কিংবা করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত করায় সমস্যায় পড়েছেন রোগীরা। মুগদা হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল করায় সেখানে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। বিকল্প ব্যবস্থা না করে করোনা হাসপাতাল করায় হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন রোগীর স্বজনরা। পরবর্তীতে ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী তাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করে দেন। মুগদা হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করা রোগী রিজিয়া রহমানের স্বামী সুমন রহমান বলেন, হঠাৎ করে আমাদের জানানো হয় মুগদা হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হবে, ডায়ালাইসিস আর করানো হবে না। এক দিন পরই ডায়ালাইসিসের নির্ধারিত দিন। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও কোনো ব্যবস্থা করতে পারছিলাম না। অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় মুগদা হাসপাতালের রোগীদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা টেস্ট ছাড়া চিকিৎসা দিতে গিয়ে সংক্রমিত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু জরুরি রোগীদের টেস্টের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিন গুনছেন তারা। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ৩৯২ জন চিকিৎসক, ১৯১ জন নার্স ও ২৯৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৮৮১ জন স্বাস্থ্যকর্মী সেবা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, এখন হাসপাতাল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। এজন্য হাসপাতালে ‘ট্রায়াজ’ পদ্ধতি চালু করা জরুরি ছিল। এ পদ্ধতিতে সবুজ জোনে স্বাভাবিক রোগী, হলুদ জোনে সন্দেহভাজন রোগী এবং লাল জোনে আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিলে ভালো হতো। তাহলে রোগী থেকে ডাক্তার কিংবা ডাক্তার থেকে রোগীতে করোনা সংক্রমিত হতো না।

সর্বশেষ খবর