শুক্রবার, ১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যু বাড়ল ১০ হাজার আক্রান্ত ৩৩ লাখ

প্রতিদিন ডেস্ক

মৃত্যু বাড়ল ১০ হাজার আক্রান্ত ৩৩ লাখ

বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এক দিনে ১০ হাজার বেড়ে এখন দুই লাখ ২৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া নতুন আক্রান্ত ৮০ হাজার যোগ হয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩৩ লাখ। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন প্রায় সোয়া ১০ লাখ মানুষ।

ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, কভিড-১৯ রোগে গতকাল সকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হন বিশ্বের ৩২ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভাইরাসটির আক্রমণে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে আমেরিকা। বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৩ জন। আর মৃতের সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৬৬৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৮ জন, মারা যান দুই হাজার ৩৯০ জন। মৃতের সংখ্যায় আমেরিকার পরেই রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। নতুন ৩২৩ জনসহ দেশটিতে মারা গেছেন ২৭ হাজার ৭৮২ জন। দেশটিতে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৮৬ জন। এদিকে ইউরোপে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রিটেনে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি জানান, বুধবার ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৪১৯ জন, যা এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এরপর গতকাল সকাল পর্যন্ত মারা যান আরও ৭৬৫ জন। সবমিলিয়ে দেশটিতে ২৬ হাজার ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ইউরোপের মধ্যে দ্বিতীয়। সংবাদমাধ্যম মেট্রো জানিয়েছে, গত বুধবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা ছিল ৬০৮ জন। কিন্তু পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশটিতে করোনা মহামারী রূপ নেওয়ার পর থেকে তিন হাজার ৮১১ জন মৃতের সংখ্যা গণনা করা হয়নি। এদের ৭০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছিল হাসপাতালের বাইরে। আর ৩০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছিল হাসপাতালে। এই দুটো মিলিয়ে এক দিনে ৪ হাজার ৪১৯ জনের মৃত্যুর হিসাব করা হয়েছে। ডাউনিং স্ট্রিটে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব এ মৃত্যুর সংখ্যাকে ‘হঠাৎ বৃদ্ধি’ বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন পদ্ধতিতে মৃতের সংখ্যা গণনা করছি। যার কারণে সংখ্যা বেড়েছে। হঠাৎ করে মত্যু বাড়েনি।’

এ ছাড়া মৃতের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে থাকা স্পেনে অবশ্য ইতালির চেয়েও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে বুধবার ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ৭৭১ জনসহ মোট আক্রান্ত হন দুই লাখ ৩৬ হাজার ৮৯৯ জন। আর নতুন ৪৫৩ জনসহ মারা যান ২৪ হাজার ২৭৫ জন। এই সঙ্গে ফ্রান্সে ২৪ হাজার ৮৭ জন, বেলজিয়ামে সাত হাজার ৫০১ জন, জার্মানিতে ৬ হাজার ৪৬৭, ইরানে ৫ হাজার ৯৫৭, ব্রাজিলে ৫ হাজার ৫১১, নেদারল্যান্ডসে ৪ হাজার ৭১১ জন, তুরস্কে ৩ হাজার ৮১, কানাডাতে ২ হাজার ৮৬৯ এবং সুইডেনে ২ হাজার ৯৯৬ জন মৃত্যুবরণ করেন।

এদিকে বেশ কিছু দেশের ক্ষেত্রে সুখবরও মিলছে। যেমন আল-জাজিরার খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন আর কোনো করোনাক্রান্ত ঘটছে না, মৃত্যুও নেই। মালয়েশিয়ায় গতকাল ৫৭ জন করোনায় আক্রান্ত হন এবং মারা যান মাত্র দুজন। পরিস্থিতির বেশ উন্নতি ঘটনায় ইতালি লকডাউনকে আরও শিথিল করেছে। স্পেনে ছয় সপ্তাহ ধরে সবচেয়ে কম আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশে মৃত্যু নেই : ভয়েস অব আমেরিকার খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপে করোনায় কেউ মারা যাননি। তবে দেশ তিনটি করোনা মুক্ত নয়।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মালদ্বীপে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫০ জন, নেপালে ৫৮ জন এবং ভুটানে সাতজন। তিন দেশ মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১৫ জন। বাকি পাঁচ দেশের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় মারা গেছেন মাত্র সাতজন। আক্রান্ত হয়েছেন ৬২২ জন। ভারত রয়েছে শীর্ষে। দেশটিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৩৩২ জন। মারা গেছেন ১ হাজার আটজন। এরপরে রয়েছে পাকিস্তান। সেখানে মারা গেছেন ৩২৭ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৮৮৫ জন। মৃত্যু ও আক্রান্তের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

ট্রাম্প বললেন, সব দোষ চীনের : আমেরিকায় ১৮ দিন আগেও ছিল পাঁচ লাখ করোনা আক্রান্ত, কিন্তু গত বুধবার পর্যন্ত দ্বিগুণ হয়ে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের হিসা বলছে, সারা বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তের এক-তৃতীয়াংশই এখন মার্কিন মুলুকে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। যা এখন প্রায় ৬২ হাজার ছাড়াচ্ছে। এরই মধ্যে যা ছাপিয়ে গেছে ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন প্রাণহানির রেকর্ডকে। এই পরিস্থিতিতে ফের চীনকেই একহাত নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আজ ওদের (চীন) জন্যই ১৮৪টি দেশ নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে। সব দোষ চীনের।’ খবরে বলা হচ্ছে, এই ট্রাম্পই গত মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনাকে তেমন কোনো গুরুত্বই দেননি। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ মার্চের আগেই ১২ বার ট্রাম্পকে এ নিয়ে সতর্ক করেছিল। তাতেও প্রেসিডেন্ট সাড়া দেননি। অথচ এখন বলছেন, ‘চীন চাইলেই এই অতিমারী রুখতে পারত।’ সমালোচকরা বলছেন, আমেরিকা এখন ব্যাপক স্বাস্থ্যকর্মী সংকটে ভুগছে। বিশ্বমানের চিকিৎসা বন্দোবস্ত সত্ত্বেও কেন এত জনকে করোনায় মরতে হলো- সে প্রশ্নও উঠছে। আমেরিকার ‘সেন্টারস ফর ডিজিজর কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ জানাচ্ছে, ২০১৭-১৮-তে মৌসুমি ফ্লুতেও প্রাণ গিয়েছিল ৬১ হাজার মানুষের। তাই চীনকে দোষারোপ করে প্রশাসন আদতে নিজের ব্যর্থতাই ঢাকতে চাইছে। এই ব্যর্থতা ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্নেও ধাক্কা দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু করছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ : করোনাভাইরাসের প্রকোপে থমকে গেছে পৃথিবী। বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের এখন একটাই চিন্তা- কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে। কবে আবার আগের মতো জীবন-যাপনে ফিরে যাওয়া যাবে। দিনের পর দিন ঘরবন্দী থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন। চাইলেই কেউ আর আগের মতো ঘর থেকে বের হতে পারছে না বা একসঙ্গে অনেক মানুষ সমবেত হতে পারছে না। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই লোকজনকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য এরই মধ্যে অনেক দেশই স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে, নানা ধরনের কড়াকড়িও তুলে নেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চীন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া পুনরায় অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু করতে যাচ্ছে। বেশ কিছু দেশে এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। তারা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট আরও বাড়াবে।

সর্বশেষ খবর