শিরোনাম
রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পুঁজি হারানোর শঙ্কায় এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা

টানা দুই মাসের ছুটিতে কর্মহীন হয়ে পড়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন এ খাতের ৮০ লাখ লোক, বাংলা নববর্ষ, ঈদসহ উৎসব ঘ্নিরেই থাকে এদের মূল বেচাকেনা করোনার প্রভাবে এর সবই বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী রূপ নেওয়া কভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। এ শিল্পের উৎপাদন ও বিপণন টানা দুই মাস বন্ধ থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, ব্যাংক ঋণের কিস্তি আর ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। আর কর্মহীন হয়ে পড়ায় শ্রমিক-কর্মচারীরাও চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

একদিকে মহামারী কভিড-১৯-এর প্রভাবে জীবন নিয়ে শঙ্কা, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা- এ দুইয়ে এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তা আর শ্রমিক-কর্মচারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ খাতের উদ্যোক্তারা মূলত ঈদ, পূজা, নববর্ষসহ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করেই তাদের পণ্যের পসরা সাজান। সারা বছর নয়, উৎসব ঘ্নিরেই এদের মূল বেচাকেনা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার নববর্ষ গেছে লকডাউনের মধ্য দিয়ে। রোজা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। হয়তো ঈদও চলে যাবে লকডাউনের মধ্য দিয়েই। ফলে দোকানপাট আদৌ কবে খোলা যাবে, কারখানা আবার কবে চালু হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য আদৌ চাঙ্গা হবে কি না এসব নিয়ে তাদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এদিকে এসএমই ও এমএসএমই খাতের সুরক্ষায় সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ হাজার কোটি টাকার একটি ঘূর্ণায়মান তহবিল গঠনও করেছে। কিন্তু এর সুুবিধা আসলে কারা পাবেন। প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা এর কতটুকু সুবিধা পাবেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এ খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিরাট একটা অংশ রয়েছেন, যাদের ব্যাংক ঋণ নেই। তারা আদৌ এ সুবিধার আওতায় পড়বেন কি না এ নিয়েও সংশয় রয়েছে। ফলে এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তারা নিজেদের বিনিয়োগকৃত পুঁজিও হারিয়ে ফেলবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এসএমই খাতের উদ্যোক্তা কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাজেদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছিল না দীর্ঘদিন ধরে। আর এখন প্রায় দুই মাস সবকিছু বন্ধ। মানুষ জীবন নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে। ঈদের আগে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস আর ইউটিলিটি বিল কীভাবে পরিশোধ করব আমরা কিছুই জানি না। ব্যাংকের কিস্তি তো আছেই। সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে তার কতটুকু আমরা পাব সে সম্পর্কে আমরা এখনো পরিষ্কার জানি না। ফলে দিন যত যাচ্ছে উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে।’  একই উদ্বেগ জানান চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাসকারী নারী উদ্যোক্তা ‘কালারস ক্রিয়েশন’-এর স্বত্বাধিকারী সাজিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে ঋণ আছে। সুুদ তো উঠছেই। কাজকর্ম সব বন্ধ। দোকানের পাশাপাশি অনলাইনে টুকটাক বিক্রি হতো। সেটাও এখন বন্ধ। সামনে ঈদ। অথচ পরিস্থিতির তো উন্নতি হচ্ছে না। ফলে ব্যবসার কী হবে আমরা আসলে এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ, ছোট উদ্যোক্তা ৬৬ লাখ এবং মাঝারি উদ্যোক্তা ৭ লাখ। ৭৮ লাখ ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা এ খাতে। আর শুধু ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানেই কর্মরত আছেন প্রায় ৬০ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী। এর বাইরে কুটির, মাাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কারখানার মালিক, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজসহ এসব খাতে প্রায় ১ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। টানা এই লকডাউনের মধ্যে যা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। আর এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে উদ্যোক্তারা আদৌ তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না এ নিয়েও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে পণ্য উৎপাদন সরবরাহ ও বিপণন বন্ধ থাকায় এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে লাখ লাখ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতাসহ বাধ্যতামূলক গ্যাস, বিদ্যুৎ বিলসহ সব ধরনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সব ধরনের ঋণের সুদ অব্যাহত রয়েছে। এতে শিল্পমালিকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে সরকার-ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা বাস্তবায়ন নিয়েও রয়েছে জটিলতা। এ অবস্থায় পোশাকশিল্পের মতো এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সরবরাহ ও বিপণনের ওপর থেকে লকডাউন শিথিলের দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক সুদ ও ইউটিলিটি বিল মওকুফের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায় এসব শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন শিল্প খাত সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কভিড-১৯-এর প্রভাবে সারা পৃথিবীতেই জনজীবন থেমে গেছে। ফলে থমকে গেছে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। আমরা তো এ থেকে বিচ্ছিন্ন নই। ফলে আমাদের এখানেও প্রভাব পড়ছে। তবে আমাদের শিল্প রক্ষায় সরকার কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সেগুলোর বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে।’ এসব উদ্যোগ শিল্প খাতের বিপর্যয় ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই উদ্যোক্তাদের ভাবতে নিষেধ করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি সেটি নিয়ে ইতিবাচক কিছু করবেন বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর