রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকায়ই মৃত্যু সংক্রমণ বেশি, আক্রান্ত ৬৩ জেলা, বাদ শুধু রাঙামাটি

দুই দিনে শনাক্ত ১১২৩ মৃত্যু ৭, ঢাকা মেডিকেলে রোগী ভর্তি শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায়ই মৃত্যু সংক্রমণ বেশি, আক্রান্ত ৬৩ জেলা, বাদ শুধু রাঙামাটি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু ঢাকাতে বেশি। ঢাকায় আক্রান্ত ৪ হাজার ৪১৮ জন। শুধু ঢাকায় মৃত্যু ৯৮ জন। এই মৃত্যু মোট মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি ৫৬ দশমিক ০২ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত নারায়ণগঞ্জে ৯৮৭ জন। আর গাজীপুরে ৩২২ জন, কিশোরগঞ্জে ২০১, নরসিংদীতে ১৫২ জন, মুন্সীগঞ্জে ১২২ জন, ময়মনসিংহ ১৪৫ জন ও কুমিল্লায় ১০৪ জন। তবে রাঙামাটি ছাড়া বাকি ৬৩ জেলায় করোনা সংক্রমণ হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রাজারবাগে ১৬৫ জন। এ ছাড়া কাকরাইলে ১৫০ জন, যাত্রাবাড়ী ১০১ জন, মোহাম্মাদপুরে ৮১ জন ও মুগদায় ৮০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত দুই দিনে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ১১২৩ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন সাতজন। এর মধ্যে গতকাল দেশে ৫৫২ জনের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ৭৯০ জন। শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭৫ জন হয়েছে। গতকাল আরও তিনজন সুস্থ হয়ে ওঠায় এ পর্যন্ত মোট ১৭৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা গতকাল নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, দুজন নারী। তারা সবাই ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩১টি ল্যাবে এখন করোনাভাইরাস পরীক্ষা হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় এসব ল্যাবে ৫ হাজার ৮২৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। বুলেটিনে জানানো হয়, গত এক দিনে আইসোলেশনে আনা হয়েছে ১৬৮ জনকে; এখন আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ৬৩২ জন। ১ মের পরিসংখ্যান তুলে ধরে অধ্যাপক নাসিমা বলেন, এ পর্যন্ত যারা কভিড-১৯ রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন, তাদের ৮৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ ঢাকা বিভাগের। আক্রান্তদের মধ্যে ৪ দশমিক ৬ ভাগ চট্টগ্রাম বিভাগের, ১ দশমিক ৫৭ ভাগ সিলেট বিভাগের, ১ দশমিক ৮০ ভাগ রংপুর বিভাগের, ২ দশমিক ২০ ভাগ খুলনা বিভাগের, ৩ দশমিক ৭১ ভাগ ময়মনসিংহ বিভাগের, ১ দশমিক ৬৯ ভাগ বরিশাল বিভাগের, রাজশাহী বিভাগের রয়েছেন ১ দশমিক ৫৩ ভাগ রোগী।

শুক্রবার আক্রান্ত ছড়িয়েছে আট হাজার : গত শুক্রবার ৫৭১ জনের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। ওই দিন মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ হাজার ২৩৮ জনে। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭০ জনে। ওই দিন হাসপাতালে থাকা আরও ১৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি যান। সব মিলে শুক্রবার পর্যন্ত মোট ১৭৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা শুক্রবার দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, শুক্রবার যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে একজন পুরুষ, একজন নারী। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, অন্যজন ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। একজন ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা, অন্যজন ঢাকার বাইরের। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩১টি ল্যাবে এখন করোনাভাইরাস পরীক্ষা হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এসব ল্যাবে ৫ হাজার ৫৭৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের বাড়িঘরে হামলা, তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার খবর এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের ‘মানবিক’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, যারা শনাক্ত হন, তারা দোষী ব্যক্তি না, তারা কোনো অপরাধী না। আবেদন রাখছি সবার প্রতি যারা কভিড আক্রান্ত হচ্ছেন, শনাক্ত হচ্ছেন, তাদেরকে কোনোভাবেই হেয় করবেন না।

জেলায় জেলায় নতুন আক্রান্ত : আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, ফরিদপুরে মাদ্রাসার আর এক ছাত্রের (১৫) করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে ফরিদপুর জেলায় এ পর্যন্ত ১৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলো। কুমিল্লার হোমনায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় অফিস লকডাউন করা হয়েছে। তিনি হোমনা দুলালপুর শাখায় সুপারভাইজার পদে কর্মরত। সাভার পৌরসভার এক গার্মেন্ট কর্মীর করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কুড়িগ্রামে আরও চারজন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২২ জনে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় আরও একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ জনে। রংপুরে পাঁচজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে নতুন করে আরও এক মহিলা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

কুমিল্লায় অবসরপ্রাপ্ত এক বিজিবি সদস্যসহ নতুন করে আরও তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা পরিষদের একজন কর্মচারী পুরুষসহ (৫২) জেলায় চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নে এক যুবকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ১১ জন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নতুন করে আরও দুজন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন দুজন। চুয়াডাঙ্গা জেলায় আরও একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাকে নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ জনে।

কিশোরগঞ্জে উপসর্গে মারা যাওয়া সেই তরুণের রিপোর্ট পজিটিভ : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়া ব্যবসায়ী তরুণ ভূইয়ার নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাতে তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। গত বুধবার দুপুরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে কটিয়াদী উপজেলার করগাঁওয়ের নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানভীর হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মারা যাওয়ার পর ওইদিন বিকালে ব্যবসায়ী তরুণ ভূইয়ার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। শুক্রবার রাতে নমুনা রেজাল্ট করোনা পজিটিভ এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার পরিবারের সদস্যদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানা গেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি শুরু : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে করোনা রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে তিন শতাধিক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, ‘কভিড-১৯’ এর রোগীদের চিকিৎসা চ্যালেঞ্জ হলেও, সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত আমরা।’ দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতালে শুরু হলো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা। জরুরি বিভাগের ছয়তলা ভবনের বার্ন ইউনিটের আইসিইউ ও আইসোলেশন ইউনিটে চলবে চিকিৎসা সেবা। প্রস্তুত ডায়ালাইসিস ও অপারেশন ব্যবস্থাও। এ ছাড়া রয়েছে বিশেষজ্ঞ টিম।

ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক বলেন, ‘করোনা সন্দেহ এবং শনাক্ত রোগীদের আমরা ভর্তি করব। একসঙ্গে সাড়ে চার হাজার রোগীর জন্য অক্সিজেন কেন্দ্রীয়ভাবে সাপ্লাইয়ের সক্ষমতা আর প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর সাপোর্ট রয়েছে। যতই ঝুঁকি থাক না কেন আমরা সেগুলো মাথায় নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করছি।’ অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপে আরও শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে হাসপাতালটির।

 

সর্বশেষ খবর