রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যু বাড়ল ২২ হাজার নতুন আক্রান্ত এক লাখ ১৪ হাজার

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দিনে ২২ হাজার বেড়ে এখন দুই লাখ ৪১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া এ সময়ে নতুন আক্রান্ত এক লাখ ১৪ হাজার যোগ হয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩৫ লাখ।

ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে গতকাল সকাল পর্যন্ত পর্যন্ত ১১ লাখ ৩২ হাজার মানুষ করোনা সংক্রমিত হন। শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকায়  ৩৬ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এবং এক হাজার ৮৯৭ জন মারা গেছেন। আমেরিকার নিউইয়র্ক শহর দেশটির করোনাভাইরাসের মূল কেন্দ্র এবং সেখানে এ পর্যন্ত ২৪ হাজার মানুষ মারা গেছেন। সেখানে এত বেশি মাত্রায় মানুষ মারা গেছেন যে প্রশাসন গণকবর দিতে বাধ্য হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে করোনাভাইরাস মোকাবিলার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য চরম সমালোচনার মুখে পড়েছেন। এ ব্যর্থতা আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়েছে। এ অবস্থায় তিনি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বারবার চীনকে দায়ী করে চলেছেন। গত বৃহস্পতিবারও তিনি বলেছেন, চীনের ল্যাবরেটরি থেকেই এ ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমন দাবি নাকচ করে বলছে, করোনাভাইরাসের উৎস প্রাকৃতিক। চীনে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত মাত্র ১ : গত বছরের ডিসেম্বরে যেখানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল সেই চীনে গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একজনের শরীরে কভিড-১৯-এর উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এ ছাড়া নতুন করে প্রাণহানি না ঘটায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা আগের ৪ হাজার ৬৩৩ জনেই রয়েছে। গতকাল চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (এনএইচসি) বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত চীনের মূল ভূখন্ডে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৮৭৫। তবে তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন ৭৭ হাজার ৬৮৫ জন। এ ছাড়া শুক্রবার একজন বিদেশফেরত ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তবে স্থানীয়ভাবে নতুন করে কোনো সংক্রমণ নেই।

খবরে বলা হচ্ছে, স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও চীনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদেশফেরতরা। দেশটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৬৭১ জন বিদেশফেরত ব্যক্তির শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

দক্ষিণ এশিয়ায় হঠাৎ বাড়ছে করোনা : দক্ষিণ এশিয়ায় হঠাৎ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। যে দেশগুলোতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। দেশটির দৈনিক পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার হিসাব অনুসারে, ভারতে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। আর সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৯ হাজার রোগী।

পাকিস্তানে গত বুধবার থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার। দেশটির দৈনিক পত্রিকা ডন-এর হিসাব অনুসারে, মোট রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশি। মারা গেছেন প্রায় সাড়ে তিনশ মানুষ। এরপরও পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আসাদ ওমর দাবি করেছেন, দেশটির করোনা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। ইউরোপে করোনার বিস্তারের ধরন ও পাকিস্তানের ধরন আলাদা। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন, দেশটির আক্রান্তরোগী ও মৃতের সংখ্যা বেশি। পাকিস্তানে করোনা মোকাবিলায় ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে যদি কেউ এক রুপি দেন, তবে সরকার এই তহবিলে চার রুপি দেবে। অর্থাৎ জনগণের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থের চার গুণ দেবে সরকার।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রোগীর সংখ্যায় পাকিস্তানের পরে বাংলাদেশের অবস্থান। এরপর রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটিতে চিহ্নিত সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আফগানিস্তানের পরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যায় প্রায় সাড়ে ছয়শ। দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে বলেছেন, সার্বিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রোগী বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, শ্রীলঙ্কায় নৌবাহিনীর ভিতরে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। গত বুধবার এই বাহিনীর ২২ জন সদস্যকে কভিড-১৯ রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর কমান্ডার সেভেন্দ্রা সিলভা এ তথ্য জানিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে মালদ্বীপে এই প্রথম একজন কভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০০। দেশটিতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৭ জন। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটানে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাননি। দেশ দুটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৭ ও ৭।

ভারতে ১৭ মে পর্যন্ত লকডাউন : ভারতে আগামী ১৭ মে পর্যন্ত বাড়ল লকডাউনের মেয়াদ। গত শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে লকডাউনের মেয়াদ বাড়লেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতাও থাকবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গ্রিন ও অরেঞ্জ জোনে রয়েছে যে সমস্ত এলাকা, সেখানে নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই শিথিল হবে। তবে বিমান, ট্রেন, মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়ার সড়ক পথও।

স্বাভাবিক গতিতে ফিরছে যেসব দেশ : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারী এখনো ফুরিয়ে যায়নি। শেষ হয়নি কোটি কোটি মানুষের বন্দীদশাও। কিন্তু এরই মাঝে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় কিছু দেশ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে; ধীরে ধীরে খুলে দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য। সূত্র : সিএনএন।

চীন : উহানে করোনার উৎপত্তি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে লকডাউনে যায় চীন। বর্তমানে সংক্রমণ একক সংখ্যার ঘরে নেমে আসায় দেশটির বিভিন্ন শহরের বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়েছে। কিছু শহরের লকডাউন প্রত্যাহারও হয়েছে। পর্যটকদের প্রিয় বেইজিংয়ের নিষিদ্ধ নগরীও খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে দর্শনার্থীর সংখ্যা সীমিত রাখা এবং শরীর চেকআপের মতো কিছু বিধি-নিষেধ এখনো কার্যকর আছে।

যুক্তরাষ্ট্র : চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি অঙ্গরাজ্য আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হবে। যদিও দেশটির কিছু শহরে এখনো করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু বাড়ছে; তারপরও অর্থনীতির চাকা সচল ও মানুষের স্বাভাবিক জীবন ফেরাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন সরকার।

অস্ট্রেলিয়া : পূর্ব-নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশজুড়ে জারিকৃত লকডাউন শিথিল করছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। গত শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, আমরা দেশকে লেপের নিচে রাখতে পারি না। আমাদের সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া দরকার।

মালয়েশিয়া : আগামী সোমবার থেকে মালয়েশিয়ার অধিকাংশ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে নাইটক্লাব কিংবা সিনেমা হলের মতো প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

সিঙ্গাপুর : করোনার বিস্তার ঠেকাতে জারিকৃত লকডাউন আগামী ৫ মে থেকে শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে সিঙ্গাপুর। এর দুই সপ্তাহ পর ১৯ মে থেকে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণের সংখ্যা বাড়লেও অচলাবস্থা কাটাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর