রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

টেকনোলজিস্টের অভাবে ব্যাপক সংখ্যায় নমুনা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না

নিজামুল হক বিপুল

করোনা শনাক্তে ল্যাবের সংখ্যা বাড়ালেও প্রয়োজনীয় মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাবে ঠিকভাবে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে যাদের দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে সেগুলো যথাযথভাবে সংগ্রহ না হওয়ায় পরীক্ষাও করা যাচ্ছে না। ফলে সারা দেশ থেকে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি জানার সুযোগ মিলছে না স্বাস্থ্য বিভাগের। আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, নমুনা সংগ্রহে যাদেরই কিছু অভিজ্ঞতা আছে তাদের কাজে লাগানো উচিত। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের মাঠে পাঠানো হোক নমুনা সংগ্রহের জন্য।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এখনই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে তবেই নিয়োগ দেওয়া যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ানের পদ রয়েছে ৭ হাজার ৯২০টি। যার মধ্যে শূন্য পদের সংখ্যা ২ হাজার ৭৫৫টি। সারা দেশে জেলা সদর হাসপাতালে ন্যূনতম চারজন এবং প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমপক্ষে দুজন করে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক জেলা সদর হাসপাতালেই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থা আরও করুণ। সুনামগঞ্জের সারা জেলায় রয়েছেন মাত্র তিনজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। দেশের অনেক জেলা সদর এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই অবস্থা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার শূন্য পদে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়ার জন্য ২০১৩ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিল। কিন্তু নিয়োগের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার পরও মামলার কারণে সেই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) হাবিবুর রহমান খান বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ নিয়ে যে মামলা হয়েছিল সেটি নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু এখনই জনবল নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। করোনা পরিস্থিতি শেষ হলে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।  স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বেলাল হোসেন জানান, ইতিমধ্যে তারা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ানের ৫ হাজার ৮২৪টি পদ সৃজনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। এদিকে প্রথম অবস্থ্য়া শুধু আইইডিসিআর করোনা পরীক্ষা করলেও বর্তমানে সারা দেশে ৩১টি ল্যাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ জন্য সারা দেশ থেকে সম্ভাব্য রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান না থাকায় সেই নমুনা সংগ্রহেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। যেখানে দিনে ১০ থেকে ১২ হাজারেরও বেশি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা সম্ভব, সেখানে এখন প্রায় ছয় হাজারের কাছাকাছি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা যাচ্ছে। এই অবস্থায় সারা দেশে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদেরকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাত্র এক ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দিয়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য মাঠে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারা যথাযথভাবে নমুনা সংগ্রহে করতে পারছেন না।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, যাদের একটু অভিজ্ঞতা আছে নমুনা সংগ্রহে তাদেরকেই কাজে লাগানো উচিত। তিনি বলেন, স্যানিটারি ইন্সপেক্টশিপদের মধ্যে একটা অংশ আছে যারা নমুনা সংগ্রহে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদেরকেও কাজে লাগানো যেতে পারে। সময় নষ্ট না করে নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনে দৈনিকভিত্তিক লোক নিয়োগ দেওয়া জরুরি।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এখন যত বেশি নমুনা সংগ্রহ করা যাবে এবং টেস্ট করা যাবে ততই রোগী শনাক্ত করে আলাদা করা যাবে। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া।

সর্বশেষ খবর