সোমবার, ৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সব ধরনের ঋণের দুই মাসের সুদ স্থগিত, ব্যবসায়ীদের স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাণঘাতী ভাইরাস কভিড-১৯ এর কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপর্যয় ঠেকাতে অবশেষে আগামী দুই মাসের জন্য সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সুদ আদায় স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকালই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসবে। যা কভিড-১৯ পরবর্তী ঘুরে দাঁড়ানোকে সহায়তা করবে। তবে কভিড-১৯ এর প্রভাব হয়তো সহসাই কাটবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী এর প্রভাব দীর্ঘায়িত হতে পারে। ফলে ব্যাংক ঋণের সুদ আদায়ের বিষয়টি ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ করার দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত রাতে ঢাকা চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক আবুল কাসেম খান বলেন, এটা অবশ্যই একটা স্বস্তির খবর। এমন সংকটময় মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাঁচাতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছেন এটা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। এতে অন্তত ব্যাংকের দিকের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাটা কমল। তবে এটা এখানে হয়তো শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রী তো প্রণোদনাও ঘোষণা করেছেন। সেগুলোর বাস্তবায়ন এবং আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদ মওকুফ করলে ব্যবসা-বাণিজ্যের লোকসান কমিয়ে শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার কপি ব্যাংকগুলোকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ১ এপ্রিল থেকে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত আরোপিত সুদ বা মুনাফা সুদবিহীন ব্লকড হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্লক হিসাবে স্থানান্তরিত ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কোনো সুদ আদায় করা যাবে না।  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিতকরণ ও গতিশীল রাখার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে সব ধরনের ঋণ বা বিনিয়োগের ওপর ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এই দুই মাসের সুদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো সুদ আদায় করা যাবে না। এরূপ সুদ ব্যাংকের আয় খাতেও স্থানান্তর করা যাবে না। কোনো ব্যাংক ইতিমধ্যে কোনো ঋণের সুদ আয় খাতে স্থানান্তর করে থাকলে তা রিজার্ভ এন্ট্রির মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে। ব্লকড হিসাবে রক্ষিত মুনাফা সমন্বয়ের বিষয়ে পরবর্তীতে অবহিত করা হবে। এ বিষয়ে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমদ বলেন, এটা খুবই স্বস্তিদায়ক খবর। আমরা ব্যবসায়ী সমাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। তবে এটা যদি ডিসেম্বর পর্যন্ত নেওয়া হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকার হবে। কেননা এটার প্রভাব তো মনে হয় না জুনের মধ্যে কেটে যাবে। ডিসেম্বরের আগে হয়তো কারখানাগুলোও সচল করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই ব্যাংক ঋণের সুদ স্থগিত কিংবা মওকুফ যেটাই হোক ডিসেম্বর পর্যন্ত করতে হবে। তবে এ মুহূর্তে যেটা করা হয়েছে সেটা অবশ্যই আমাদের জন্য, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য স্বস্তির খবর। ঢাকা চেম্বার সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, এমন সংকটকালে অবশ্যই এটা খুশির খবর। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।

 দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে সরকারের এ সিদ্ধান্ত অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর