সোমবার, ৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

এক দিনে সর্বোচ্চ রোগীর রেকর্ড

সংজ্ঞা পাল্টানোয় সুস্থ ৮৮৬ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক দিনে সর্বোচ্চ রোগীর রেকর্ড

দেশে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। নমুনা পরীক্ষার আওতা বাড়ার পর থেকে শনাক্তের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৬৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এটিই এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা। নতুন ৬৬৫ জনসহ সর্বমোট আক্রান্ত ৯ হাজার ৪৫৫ জন। এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৭৭ জনে। গতকাল বিকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৩৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন দুজন। তারা ঢাকার বাইরের। একজন রংপুরের বাসিন্দা, আরেকজন নারায়ণগঞ্জের। মারা যাওয়া দুজনের মধ্যে একজনের বয়স ১১-২০ বছরের মধ্যে। আরেকজনের বয়স ৬০ বছরের ওপরে। ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৫ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। আইসোলেশন থেকে ছাড়া হয়েছে ৬০ জনকে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৮৭৪ জনকে। ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ১৪৯ জন।

সংজ্ঞা পাল্টানোয় দেশে এক দিনেই সুস্থ বাড়ল ৮৮৬ জন : করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার সংজ্ঞা পাল্টিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর ফলে এক দিনের ব্যবধানে দেশে করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার মানুষের সংখ্যা ছয় গুণ বেড়েছে। আইইডিসিআরের তথ্যমতে, শনিবার পর্যন্ত সুস্থ রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭৭ জন। রবিবার সেই সংখ্যা ৮৮৬ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৩ জন। অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থা পুনরায় কোন পর্যায়ে পৌঁছালে কোনো ব্যক্তিকে সুস্থ বলা যাবে তা নিয়ে একটি নতুন গাইডলাইন অনুসরণ করা হচ্ছে। তাদের ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি নতুন এই গাইডলাইনটি তৈরি করেছে। সেই নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

অন্যদিকে, ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ডা. এম এ ফয়েজ জানিয়েছেন, আগের গাইডলাইন অনুযায়ী কারও মধ্যে যদি করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হতো তাহলে তার ১৪-২১ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় টেস্ট করা হতো। সেখানে ফলাফল নেগেটিভ এলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অথবা দুই-তিন দিনের মধ্যে আরেকটি টেস্ট করা হতো। সেখানেও ফলাফল নেগেটিভ এলে রোগীকে সুস্থ ঘোষণা করে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হতো এবং বলা হতো তারা যেন আরও ১৪ দিন বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। নতুন নিয়মে রোগী যদি ক্লিনিক্যালি সুস্থ হয়ে ওঠেন অর্থাৎ পর পর তিন দিন যদি তার আর জ্বর না থাকে, কাশি বা শ্বাসকষ্ট না হয় তাহলে তাকে হাসপাতালে না রেখে বাড়িতে ১৪ দিনের আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বাড়ি থেকেই তার পরবর্তী দুটো পরীক্ষা করা হবে। যেটা কিনা আগে হাসপাতালে থেকে করা লাগত। হাসপাতালে রোগীর চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জেলায় জেলায় নতুন আক্রান্ত : কুমিল্লা : কুমিল্লার লাকসামে প্যাথলজিস্টসহ কুমিল্লায় করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ জন। এর মধ্যে দেবিদ্বারে ৫ জন, বরুড়ায় ২ জন এবং লাকসামে ১ জন প্যাথলজিস্ট রয়েছেন। প্যাথলজিস্ট রোগীদের নমুনা সংগ্রহ টিমের সদস্য ছিলেন। বরুড়ায় ২ জনের মধ্যে এর আগে আক্রান্ত থানার এসআই বিকাশের দাদি এবার আক্রান্ত হলেন। অন্যজন সিএনজি অটোরিকশার চালক। করোনায় মৃত সুকুমার চন্দ্র দে’র এক নাতি, দোকান কর্মচারী, ভাড়াটিয়া মহিলা, তার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ও মাছিমপুর গ্রামের একজন আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত কুমিল্লায় ১৪ উপজেলায় ৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ২২ জন।

নোয়াখালী : নোয়াখালীতে নতুন করে সদরে একজন  ও হাতিয়ায় দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায়  মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৪ জন। বেগমগঞ্জ উপজেলায় ৬, সোনাইমুড়ীতে ২, সেনবাগে ১, কবিরহাটে ১, সদর উপজেলায় ২ ও হাতিয়ায় ২ জন রোগী রয়েছেন। যার মধ্যে সোনাইমুড়ীতে এক ইতালি প্রবাসী ও সেনবাগে এক রাজমিস্ত্রি মারা গেছেন। মৃত্যুর পর তাদের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসছিল।

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে দিন দিন বেড়েই চলছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল সকালে আরও ৪৬ জনের করোনা পজিটিভ আসে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৬৫ জন। গতকালের ৪৬ জনের মধ্যে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের ৪ জন রয়েছেন। এর আগে সদর থানার ওসি তদন্ত গাজী সালাউদ্দিনের করোনা পজিটিভ আসে। মানুষের অবাধে ঘোরাফেরা, গণপরিবহন এবং হাটবাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করায় হু হু করে বেড়েই চলছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

নীলফামারী : নীলফামারীতে ৫ জন ব্যাংক কর্মকর্তার করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারা হলেন- নীলফামারীর সৈয়দপুর শাখা বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের ৪ জন কর্মকর্তা ও অপরজন জেলার ডিমলা উপজেলার রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ডাঙ্গাপাড়া শাখার কর্মকর্তা। তার বাড়ি ডোমার উপজেলার বামুনিয়া গ্রামে। অন্যদিকে সৈয়দপুর শাখা বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের ৪ জন কর্মকর্তার মধ্যে তিনজনের বাড়ি সৈয়দপুর শহরে ও একজন নীলফামারী পৌরসভার প্রগতিপাড়ায়। নতুন আক্রান্তদের জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ২১ জনে দাঁড়াল।

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এবার ১২ বছরের এক কিশোর ও ৪০ বছর বয়সের একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক নিরপত্তা প্রহরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কিশোরের বাড়ি সিন্দুরখান ইউনিয়নে। আর ব্যাংক প্রহরীর বাড়ি নোয়াগাঁও গ্রামে। কিছু দিন আগে দুই বোনের সঙ্গে ওই কিশোর নরসিংদী থেকে শ্রীমঙ্গল আসে। আর বেসরকারি ওই ব্যাংকের এক ক্যাশ অফিসার করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ব্যাংক প্রহরীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল।

দিনাজপুর : ভাইরাসে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের শাইনগর গ্রামের একই পরিবারের ৩ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও ১৮ মাসের শিশু নারায়ণগঞ্জফেরত এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। ওই গ্রামটির ৬০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়। এ নিয়ে দিনাজপুরে করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত ৪৩ জনের মধ্যে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ২৬ জন। একই সঙ্গে জেলায় সামগ্রিকভাবে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গত ১ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় ৪২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত এক সপ্তাহে এখানে মাত্র একজন নারী করোনা রোগী শনাক্ত হন। তিনি ঢাকার গাবতলী থেকে টুঙ্গিপাড়ার লেবুতলা গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তাকে নিয়ে জেলায় রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩-এ।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়নি। গতকাল দুপুর পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা মোট ২৬ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে দুজন। আরোগ্য লাভ করেছেন সাতজন। আইসোলেশনে আছেন আটজন। বিদেশফেরত ২০৩২ জনকে তাদের ঠিকানা মতো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর