সোমবার, ৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পিঠমোড়া হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আদালত থেকে জেলে কাজল

বেনাপোল প্রতিনিধি

পিঠমোড়া হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আদালত থেকে জেলে কাজল

হাতকড়া পরিয়ে সাংবাদিক কাজলকে নেওয়া হয় জেলে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

অবশেষে হদিস মিলল ঢাকা থেকে নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের। শনিবার গভীর রাতে বেনাপোল সীমান্তের সাদিপুর গ্রামের মাঠ থেকে তাকে উদ্ধার করে রঘুনাথপুর বিজিবি। রঘুনাথপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার আশেক আলী বলেন, সাংবাদিক কাজলকে রাতে টহল বিজিবি সদস্যরা সাদিপুর সীমান্তের একটি মাঠ থেকে আটক করে। অবৈধভাবে ভারত থেকে আসার সময় তাকে আটক করা হয়। বেনাপোল পোর্ট থানার কর্মকর্তা মামুন খান বলেন, বিজিবি সাংবাদিক কাজলকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলা করেছে। থানা হাজতে কাজলের মুখে ছিল মুখ ভর্তি দাড়ি। ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে সাংবাদিকদের দিকে। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। কথা বলার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। বিশেষ একটি সূত্র জানায়, অপহরণকারীরা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ব্যাপক নির্যাতন করেছে। তাকে তিন বেলা খেতে দিলেও সব সময় তার চোখ, হাত, পা, মুখ বেঁধে রাখত। খাবার সময় শুধু মুখের বাঁধন খুলে দিত। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সশস্ত্র পাহারায় তাকে বেনাপোল থেকে যশোরে আদালতের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়। আদালতে নেওয়ার আগে তাকে জেলা গোয়েন্দা বিভাগের অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানা যায়। এর আগে যশোরের নাভারন সার্কেলের পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান আটক কাজলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পুলিশের নিকট তিনি অপহরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানা যায়। এদিকে কাজলের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফোনে কাজলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বেনাপোল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ খবর পেয়ে রাতেই স্বজনরা তাকে নিতে বেনাপোলের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। তবে কাজলের পরিবারের লোকজন বেনাপোল পৌঁছানোর আগেই পুলিশ তাকে যশোরে পাঠিয়ে দেয়। সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল ১০ মার্চ সন্ধ্যায় ‘পক্ষকাল’-এর অফিস থেকে বের হওয়ার পর তার কোনো সন্ধান না পেয়ে পরদিন ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী। পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক। সাংবাদিক কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর তার সন্ধান দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েক দফা কর্মসূচি পালন করেছেন সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা।

সাংবাদিক কাজল কারাগারে : এদিকে নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর জানান, যশোরের শার্শা উপজেলার সাদিপুর সীমান্ত থেকে উদ্ধার হওয়া সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে। এর আগে তাঁর দুই হাত পেছন দিয়ে হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থায় যশোর আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ। কাজলের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে একটি মামলা করে বিজিবি। সে মামলায় আদালত কাজলের জামিন আবেদন মঞ্জুরও করে। কিন্তু কাজলের বিরুদ্ধে রাজধানীর তিনটি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা রয়েছে। কাজলের ফরোয়ার্ডিংয়ে পুলিশ সে মামলাগুলোর কথাও উল্লেখ করে। এর সঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে ৫৪ ধারায় একটি মামলা দেওয়া হয়। আদালত ৫৪ ধারার মামলায় কাজলকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। যশোর আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এএসআই সুবোধ ঘোষ জানান, সাংবাদিক কাজলকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর কথা তুলে ধরে। কাজলের আইনজীবী দেবাশীষ দাসকে উদ্ধৃত করে তার সহকারী শিক্ষানবিশ আইনজীবী সুদীপ্ত ঘোষ জানান, পুলিশ কাজলের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা ছাড়াও রাজধানীর তিনটি থানায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলা থাকার কথা উল্লেখ করে। এ তিনটি মামলা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা। গত ৯, ১০ ও ১১ মার্চ মামলা তিনটি শেরেবাংলা নগর, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানায় দায়ের করা হয়েছিল। আদালত মামলা তিনটির ব্যাপারে কোনো আদেশ দেয়নি। সদর আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ পুলিশের এটিএসআই সন্তোষকুমার বিশ্বাস জানান, ৫৪ ধারায় রুজু করা মামলায় আদালত গতকাল বিকালে সাংবাদিক কাজলকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী সন্ধ্যার আগেই তাকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

 

সর্বশেষ খবর