সোমবার, ৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

নতুন মৃত্যু পাঁচ হাজার, আক্রান্ত লাখ

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা গত শনিবার ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার বেড়ে মোট সংখ্যা দুই লাখ ৪৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া এ সময়ে নতুন আক্রান্ত এক লাখ যোগ হয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩৬ লাখ।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, করোনার প্রাদুর্ভাব চীনে শুরু হলেও এতে বিপর্যস্ত হওয়ার শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মহামারী করোনাভাইরাস। সেখানে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গতকাল সকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬৮ হাজার মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ১২ লাখ মানুষ। আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছেও নেই কোনো দেশ। করোনায় মৃতের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশ ইতালি। দেশটিতে শনিবার পর্যন্ত ২৮ হাজার ৭১০ জন করোনাভাইরাসে প্রাণ হারান। ইতালিতে একদিনে ৪৭৪ জন কভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন। গত ২১ এপ্রিলের পর দেশটিতে একদিনে এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। আর এতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট দুই লাখ নয় হাজার ৩২৮ জন। যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ব্রিটেনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা গতকালের চেয়ে কমেছে, কমেছে আক্রান্তের সংখ্যাও। গত শনিবার ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬২১ জনের। এর আগে শুক্রবার মৃত্যুবরণ করেছিলেন ৭৩৯ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৩১ জন। এদিকে ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড স্যোশাল কেয়ার জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে শনিবার ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হন চার হাজার ৮০৬ জন। শুক্রবার জানানো হয়েছিল এর আগের ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ছয় হাজার ২০১, বৃহস্পতিবার আক্রান্ত হয়েছিলেন ছয় হাজার ৩২, বুধবার আক্রান্ত হয়েছিলেন চার হাজার ৭৬ জন। শনিবার মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৮২ হাজার ২৬০ জন। এদিন ২৪ ঘণ্টায় ইংল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন ৩৭০ জন, স্কটল্যান্ডে ৪৪ জন, ওয়েলসে ৪৪ জন এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১১ জন। এ হিসেবে মোট মৃত্যুবরণ করেন ৪৬৭ জন। এ হিসাব শুধু হাসপাতালে মৃতের সংখ্যার। এদিকে দুই লাখ ৪৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত নিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ স্পেন। দেশটিতে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে ২৫ হাজার ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে স্পেনে তুলনামূলক করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসায় লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় খাত। লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিলের পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে স্পেন। করোনায় বিপর্যস্ত ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্স। শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে ২৪ হাজার ৭৬০ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস। আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৬৮ হাজার ৩৯৬ জন। তবে আগের তুলনায় দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

ভারতে একদিনে শনাক্ত ২ হাজার ৬৪৪ : মাত্র একদিনের ব্যবধানে আবারও সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড গড়ল ভারত। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন অন্তত দুই হাজার ৬৪৪ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৯৮০ জন। সূত্র : এনডিটিভি, দ্য ওয়াল। গতকাল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় এক হাজার ৩০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮৩ জন। এ ছাড়া, সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন আরও ৬৮২ জন। ফলে দেশটিতে করোনামুক্ত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৩৩ জন। এখনো চিকিৎসাধীন ২৮ হাজার ৪৬ জন। গত এক সপ্তাহে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন সাত শতাধিক।

মহামারী মোকাবিলায় ইউরোপীয় নেতাদের জোট : ইউরোপিয়ান কয়েকটি দেশের নেতারা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একটি ‘আন্তর্জাতিক জোট’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেটে যৌথভাবে লেখা একটি নিবন্ধে এ ঘোষণা দিয়েছেন তারা। জোটের পক্ষ থেকে কয়েকশ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ অর্থ কভিড-১৯ এর টিকা উদ্ভাবন ও চিকিৎসাকাজে লাগানো হবে। আজ এ বিষয়ে একটি অনলাইন কনফারেন্স আয়োজিত হবে। জোটের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক মহামারী মোকাবিলার জন্য জোটের পক্ষ থেকে সাড়ে সাত বিলিয়ন ইউরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে। ‘গ্লোবাল কো-অপারেশন প্ল্যাটফর্ম’ নামের এ জোটের লক্ষ্য হলো কভিড-১৯ এর টিকার গবেষণা, উন্নয়ন, প্রাপ্যতা ও বিতরণ এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি গতিশীল করা। ইউরোপীয় নেতারা দাবি করছেন, এর মাধ্যমে কভিড-১৯ মোকাবিলায় সত্যিকার আন্তর্জাতিক জোটের ভিত্তি রচিত হয়েছে। নিবন্ধটি যৌথভাবে লিখেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্তে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মেরকেল, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেলন, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গ, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট আরসুলা ভন ডার লেয়েন। তারা লিখেছেন, বিশ্বের সব প্রান্তের মহামারী বিপর্যয় ও যন্ত্রণা ছড়িয়ে দিয়েছে।

ইউরোপীয় নেতারা বলছেন, এ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বকে একত্রিত হয়ে সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে টিকা উদ্ভাবন, চিকিৎসা ও থেরাপির জন্য। যাতে করে আবারও পৃথিবীকে সুস্থ করে তোলা যায়।  এর আওতায় থাকবে বিশ্বের সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে সহজলভ্য করা এবং আফ্রিকার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া।

এ রাজনীতিকরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি নিজেদের সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সম্প্রতি উন্মোচিত অ্যাকসেস টু কভিড-১৯ টুলস (এসিটি) অ্যাকসিলেটরকে অনুমোদন দিয়েছেন। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং ওয়েলকাম ট্রাস্ট এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা এতে যুক্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর