মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকা মেডিকেলে করোনা ইউনিটে ২৪ মৃত্যু

পজিটিভ ৪, উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ২০ জন সর্দি কাশি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ৫ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ ছিল ৪ জনের এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়। গত শনিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম কে এম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, গত শনিবার থেকে ঢামেক হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ২২ জন মারা গেছেন। বর্তমানে হাসপাতালের ওই ইউনিটে ৯০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন ৯ জন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে করোনা রোগী ছাড়াও করোনা উপসর্গের রোগী রয়েছে। জানা গেছে, করোনা ইউনিটে রোগীদের সেবা দিতে ১০টি ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এবং ১৪টি হাই ডিপেন্ডেনসি ইউনিট (এইচডিইউ) রয়েছে। অপারেশন থিয়েটার (ওটি) রয়েছে ৪টি। ওটি ছাড়া আরও দুইটি ওটি গাইনি রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া এখানে মেডিসিন নিউরোসার্জারি, শিশু সার্জারিসহ মোটামুটি সব বিভাগের চিকিৎসক রাখা হয়েছে। করোনা রোগের পাশাপাশি অন্য রোগের চিকিৎসকও রয়েছেন।

করোনা ইউনিটের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। পঞ্চম তলায় ১০০ জনের মতো এবং ষষ্ঠ তলায় প্রায় ১৫০ জনের মতো করোনা রোগী রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় করোনা শনাক্ত রোগীদের রাখা হচ্ছে। আর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ওটি, আইসিইউ ও এইচডিইউ। অন্তঃসত্ত্বা নারী যদি করোনায় আক্রান্ত হয়, তবে তাদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

গত শনিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে খোরশেদা, মোস্তফা, রোওহমন আলী ও সুফিয়া বেগম মারা যান। করোনা আক্রান্তদের অবস্থা বুঝে তাদের দ্রুত এইচডিইউ ও আইসিইউতে হস্তান্তর করা হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম কে এম নাছির উদ্দিন।

ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, করোনা ইউনিটে প্রায় দুইশ করোনা রোগী রাখা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। যারা প্রবেশ করছেন তারা ফুট প্রোটেকশন নিয়ে প্রবেশ করছে।

সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে ৫ জনের মৃত্যু : সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ফরিদপুর, চাঁদপুর, সাভার পৌর ও নোয়াখালীতে এসব মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে কেউ হাসপাতালে, আবার কেউ নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাগুলোতে। তাদের বাড়িঘর-এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে অনেকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফরিদপুরে গতকাল দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। একজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এবং আরেকজন জ্বরে মারা গেছেন। তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা জানতে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। জানা গেছে, শহরের ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি দুই দিন ডায়রিয়ায় ভুগে গতকাল সকালে মারা যান। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টার দিকে ওই যুবককে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি শহরের একটি সিমেন্টের দোকানে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া সাত দিন ধরে জ্বরে ভুগে গতকাল নিজের বাড়িতে মারা গেছেন ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি মাছ ধরে জীবিকা চালাতেন। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, জ্বর ও ডায়রিয়া দুটিই করোনাভাইরাসজনিত রোগীর উপসর্গ। এ কারণে ওই দুজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত দুজনের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে রেখা বেগম (২৫) নামের দুই সন্তানের জননী করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। সন্দেহভাজন হিসেবে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের বাবুল গাজীর স্ত্রী। গতকাল দুপুরে হাজীগঞ্জের ভিআইপি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃতের স্বামী বাবুল গাজী জানান, তার স্ত্রী রেখা গত ৫ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তার শরীরে প্রচুর ব্যথা, জ্বর ও বমি হচ্ছিল। তাৎক্ষণিক হাজীগঞ্জ উপজেলার রামপুর বাজারে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। পরে তাকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ডাক্তার সেখানেও তার অবস্থার অবনতি দেখে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তাকে কুমিল্লায় না নিয়ে হাজীগঞ্জের ভিআইপি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার করোনা টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সাভার পৌর এলাকার মজিদপুরে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আবু বকর সিদ্দিক। ষাটোর্ধ্ব এ ব্যক্তি বেশ কিছুদিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গে ভুগছিলেন। গতকাল ভোর রাতে তিনি মারা যান। পরে সকালেই তড়িঘড়ি করে ইমান্দিপুর গোরস্থানের দাফন করা হয়। ফলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা তার নমুনা সংগ্রহ করতে পারেননি। এছাড়া তার পরিবারের একাধিক ব্যক্তি একই উপসর্গে ভুগছেন বলে জানা গেছে। তাদের নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এছাড়া তার বাসায় রমজানের শুরুতেই তারাবির নামাজ পড়ানো হতো।

জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ইউসুফ আলী (৩৪) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ নিয়ে জেলায় গত পাঁচ দিনে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই নারীসহ মারা গেল তিনজন। নিহত ইউসুফ বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপুর এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে। তিনি চৌমুহনীর গোলাবাড়িয়া এলাকার সুগন্ধা কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার ছিলেন। জানা যায়, রবিবার বিকালে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হন ইউসুফ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় তার ফুসফুসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় তাকে দ্রুত ঢাকায় কুর্মিটোলা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও পরিবার তাকে ঢাকায় নেয়নি। পরে রাত প্রায় ১০টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও সৈয়দ মহি উদ্দিন আবদুল আজিম জানান, তার শরীর থেকে করোনা পরীক্ষার নমুনা নেওয়ার পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সর্বশেষ খবর