বুধবার, ৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

কী হচ্ছে শিথিল সময়ে

১০ তারিখের আগেই খুলেছে অনেক দোকানপাট, রাস্তাঘাটে বাড়ছে যানবাহনের ভিড়, চাপ বেড়েছে ফেরিঘাটে, নদী পার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ ১৬ মে পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

কী হচ্ছে শিথিল সময়ে

ঈদের কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে শপিং মল খোলার সিদ্ধান্তে মহাবিপর্যয় আসতে পারে। ১০ মে থেকে শপিংমল, বিপণিবিতানগুলো পুরোদমে খোলার পর সামাজিক দূরত্ব ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কাপড়, কসমেটিকস, জুতাসহ এমন অনেক জিনিস অনেকেই ধরবেন, দেখবেন, যা বারবার জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব নয়। মানে এসব পণ্যের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকবে। তবে করোনা আতঙ্কে শপিং মল খোলার পর ক্রেতা আসবেন কি না, সেটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী। এমনিতে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিলের পর রাজধানীতে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল অনেকটাই বেড়ে গেছে। তবে ঈদের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। এদিকে ১০ মে থেকে খোলার অনুমতি পেলেও গতকালই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট খোলা রাখতে দেখা গেছে। শপিং মলগুলো বন্ধ থাকলেও পাড়া-মহল্লা ও মার্কেটের বাইরের দোকানগুলোর অধিকাংশই খোলা। এসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। গতকাল রাজধানীর শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

অন্যদিকে পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন শ্রমিকরা। গতকালও দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে যাত্রীদের অনেক বেশি চাপ দেখা গেছে। ফেরির পাশাপাশি ট্রলারে করেও নদী পার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বন্ধের সময়সীমা পঞ্চমবারের মতো বাড়ানো হয়েছে। ৭ মে থেকে বাড়িয়ে তা ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।

সরেজমিন গতকাল রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে কুড়িল পর্যন্ত সড়কে কোথাও চেকপোস্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ি দেখা যায়নি। গতকাল দুপুরে এ সড়কে এক সপ্তাহ আগের দিনগুলোর তুলনায় তিনগুণ বেশি যানবাহন চলতে দেখা গেছে। এ সড়কে চলতে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশাও। অবাধে চলেছে সিএনজি অটোরিকশা। প্রাইভেটকার ও রাইড শেয়ারিং করা মোটরসাইকেলও চলেছে অহরহ। তবে এ সড়কে চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সদস্যের দাবি, যারা কারণ ছাড়া বের হচ্ছেন তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেবল জনগুরুত্বপূর্ণ ও সেবা সংস্থা এবং রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে শিথিলতা রয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে শপিং মল, মার্কেট খুলে দেওয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেল। মার্কেটে ভাইরাস সংক্রমণ হয় এমন অনেক পণ্যই রয়েছে। যেমন জামা-কাপড়, কসমেটিকস, জুতা এগুলো কিন্তু অনেকেই ধরে দেখবেন। ফলে যে-কারও মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তিনি বলেন, ‘এখন কিন্তু প্রতিদিনই আমাদের আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বেশি হচ্ছে। এর মধ্যেই পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। আবার ঈদকে কেন্দ্র করে শপিং মল খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়গুলো কিন্তু বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। হতে পারে বড় বিপর্যয়।’

এদিকে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে নির্দেশনা দিয়ে পাুলিশ-বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক এবং আনাসর ও ভিডিপি মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মাস্ক পড়া ছাড়া কোনো ক্রেতা দোকানে প্রবেশ করতে পারেবন না। এছাড়া বিক্রেতা, দোকান কর্মচারীকেও মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পড়তে হবে।

ফেরিতে চাপ বাড়ছেই : লঞ্চ বন্ধ থাকায় ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ বেড়েছে ফেরিঘাটে। গতকালও রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং মাওয়া ও মাদারীপুরের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের খবর জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা। রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ভোর থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে হাজার হাজার মানুষ নদী পার হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে যাত্রীদের ঢল নেমেছে। নবম দিনের মতো দক্ষিণবঙ্গের এ নৌরুটে শিমুলিয়া ঘাটে হাজার হাজার ঢাকাগামী যাত্রী হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ফেরি ও ট্রলারে করে পদ্মা পাড়ি দেন তারা। শিমুলিয়া ঘাটে আসার পর শ্রমিকরা অটোরিকশা কিংবা রিকশায় ছোটেন ঢাকায়। আবার কেউ কেউ পায়ে হেঁটেই ছোটেন কর্মস্থলের উদ্দেশে।

শপিং মল খোলা নিয়ে পরামর্শ দেবে টেকনিক্যাল কমিটি : ঈদে শপিং মল, দোকানপাট বন্ধ রাখা হবে কি না, সে ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দেবে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি। একই সঙ্গে দেশব্যাপী চলমান লকডাউন খোলার ব্যাপারেও সরকারকে পরামর্শ দেবে এ কমিটি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের এ কমিটির মতামত অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে সরকার। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভা শেষে এ কথা জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ পরামর্শক কমিটির সদস্যরা।

বৈঠক শেষে জানানো হয়, সভায় কমিটির সদস্যরা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস টেস্টিং সুবিধা বৃদ্ধি, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন, মা ও শিশুদের আলাদা চিকিৎসাসেবা বজায় রাখা, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মন্ত্রণালয় থেকে সমন্বয় বৃদ্ধি করাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন।

দোকান খুলতে চার শর্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের : ঈদুল ফিতর সামনে রেখে সীমিত পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ১০ মে থেকে খুলবে দোকানপাট ও শপিং মল। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে চারটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি এফবিসিসিআইসহ দেশের সব বাণিজ্য সংগঠন এবং চেম্বার ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কাছে পাঠানো হয়েছে। শর্তগুলো হচ্ছে- দোকানপাট ও শপিং মল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে; দোকানপাট ও শপিং মলে কেনাবেচার সময় পারস্পরিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে; প্রতিটি শপিং মলে প্রবেশের ক্ষেত্রে হাত ধোয়াসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘোষিত সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে এবং শপিং মলে আগত যানবাহনকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর