বুধবার, ৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় আক্রান্ত-মৃত নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভুল তথ্য

হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত, মৃত ও সুস্থের হার বিষয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনা বিষয়ক তথ্য জানাতে তৈরি ওয়েবসাইটে হ্রাস, বৃদ্ধির তথ্যের সঙ্গে দেওয়া শতকরা হারে মিল নেই। এই ভুল তথ্যে করোনা বিষয়ক গবেষণা কিংবা সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তৈরি হবে বিভ্রান্তি।

ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া ২৭ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৭ এপ্রিল পরীক্ষার সংখ্যা ৩ হাজার ৮১২। পরীক্ষার শতকরা পরিবর্তন হার দেখানো হয়েছে ৮ দশমিক ৮১। পরিবর্তন হার হবে ৯ দশমিক ৬৭। আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯৭ জন, পরিবর্তন হার দেখানো হয়েছে ১৫ দশমিক ৯০। শতকরা পরিবর্তন হার হবে ১৮ দশমিক ৯০। মারা গেছেন সাতজন, পরিবর্তন হার দেখানো হয়েছে ২৮ দশমিক ৫৭। প্রকৃত পরিবর্তন হার হবে ৪০।

২৮ এপ্রিল পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৩৩২। পরীক্ষার শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে ১২, প্রকৃত হার হবে ১৩ দশমিক ৬৪। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৯ জন। আক্রান্তের পরিবর্তন হার দেখানো হয়েছে ৯ দশমিক ৪৭, প্রকৃত হার হবে ১০ দশমিক ৪৬। মারা গেছেন ৩ জন। মৃত্যুর শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে -১৩৩ দশমিক ৩৩, প্রকৃত হার হবে -৫৭ দশমিক ১৪। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৮ জন। পরিবর্তন হার দেখানো হয়েছে -১২ দশমিক ৫০, প্রকৃত হার হবে -১১ দশমিক ১১।

২৯ এপ্রিল পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৯৬৮টি। পরীক্ষার শতকরা হার পরিবর্তন দেখানো হয়েছে ১২ দশমিক ৮, প্রকৃত হার হবে ১৪ দশমিক ৬৮। আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪১ জন। আক্রান্তের শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে ১৪ দশমিক ৩৫, প্রকৃত হার হবে ১৬ দশমিক ৭৬। মারা গেছেন আটজন। পরিবর্তন হার দেখানো হয়েছে ৬২ দশমিক ৫০, প্রকৃত হার হবে ১৬৬ দশমিক ৬৭। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১১ জন। সুস্থ হওয়ার শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে ২৭ দশমিক ২৭, প্রকৃত হার হবে ৩৭ দশমিক ৫০। ৩০ এপ্রিল আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬৪ জন। আক্রান্তের শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে -১৩ দশমিক ৬৫, প্রকৃত হার হবে -১২ দশমিক ০১। মারা গেছেন পাঁচ জন। পরিবর্তন হার দেখানো হয়েছে -৬০, প্রকৃত হার হবে -৩৭ দশমিক ৫০। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১০ জন। সুস্থ হওয়ার শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে -১০, প্রকৃত হার হবে -৯ দশমিক ০৯। ১ মে পরীক্ষা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৩টি। পরীক্ষার শতকরা হার পরিবর্তন দেখানো হয়েছে ১০ দশমিক ৯১, প্রকৃত হার হবে ১২ দশমিক ২৫। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭১ জন। আক্রান্তের শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে ১ দশমিক ২৩, প্রকৃত হার হবে ১ দশমিক ২৪। মারা গেছেন দুজন। পরিবর্তন হার দেখানো হয়েছে -১৫০, প্রকৃত হার হবে -৬০। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১৪ জন। সুস্থ হওয়ার শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে ২৮ দশমিক ৫৭, প্রকৃত হার হবে ৪০। ২ মে পরীক্ষা হয়েছে ৫ হাজার ৮২৭টি। পরীক্ষার শতকরা হার পরিবর্তন দেখানো হয়েছে ৪ দশমিক ৩৬, প্রকৃত হার হবে ৪ দশমিক ৫৬। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫২ জন। আক্রান্তের শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে -৩ দশমিক ৪৪, প্রকৃত হার হবে -৩ দশমিক ৩৩। মারা গেছেন পাঁচজন। পরিবর্তন হার দেখানো হয়েছে ৬০, প্রকৃত হার হবে ১৫০। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৩ জন। সুস্থ হওয়ার শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে -৩৬৬ দশমিক ৬৭, প্রকৃত হার হবে -৭৮ দশমিক ৫৭। ৩ মে পরীক্ষা হয়েছে ৫ হাজার ৩৬৮টি। পরীক্ষার শতকরা হার পরিবর্তন দেখানো হয়েছে -৮ দশমিক ৫৫, প্রকৃত হার হবে -৭ দশমিক ৮৮। আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬৫ জন। আক্রান্তের শতকরা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৯, প্রকৃত হার হবে ২০ দশমিক ৪৭। মারা গেছেন দুজন। পরিবর্তন হার দেখানো হয়েছে -১৫০, প্রকৃত হার হবে -৬০। প্রায় প্রতিদিনই হ্রাস-বৃদ্ধির তথ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে ভুল তথ্য। এসব তথ্য দিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলেই দেখা দেবে বিভ্রান্তি। বাস্তবতার সঙ্গে মিলবে না তথ্যের চিত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিনই স্বাস্থ্য অধিদফতরের এসব অঙ্গতিপূর্ণ পরিসংখ্যান আমাদের চোখে পড়ছে। এই উপাত্ত দিয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে কোনো গবেষণা কিংবা যে কোনো যাচাই-বাছাই করতে গেলে বিপদে পড়তে হবে। বাস্তবতার সঙ্গে এ তথ্যের মিল নেই। সিদ্ধান্ত নিতেও অসুবিধায় পড়তে হবে কর্তৃপক্ষকে। এই তথ্য দিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্ত, মৃতের চিত্র মেলানো যাবে না। ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিজ’র (এফডিএসআর) চেয়ারম্যান ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বলেন, যে কোনো জনস্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সঠিক উপাত্তের গুরুত্ব অপরিসীম। সমস্যার শুরু থেকেই টেস্ট করা নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের নানা রকমের টালবাহানা লক্ষ্য করেছি। এখন আবার উপস্থাপিত উপাত্তেও অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে। এসবই অদক্ষতা এবং সমন্বয়হীনতার বহিঃপ্রকাশ। এর ফলে দিনের শেষে জনগণের ভোগান্তিই বাড়বে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোন সূচকের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান তৈরি করা হচ্ছে বিষয়টি দেখতে হবে। যারা এই তথ্য সরবরাহ করছে তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।’

সর্বশেষ খবর