বুধবার, ৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

হটস্পট হয়ে উঠেছে কাঁচাবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা একজন শিক্ষক (৩৮) লকডাউনের কারণে দেড় মাস ধরে বাসায় আছেন। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে সপ্তাহে একাধিকবার কাঁচাবাজারে গেছেন তিনি। গত ২৫ এপ্রিল বাজার থেকে ফেরার পর তার হাঁচি শুরু হয়। দুই দিন পর থেকে জ¦র, গলাব্যথা শুরু হলে করোনা টেস্ট করান তিনি এবং তার স্ত্রী। তাদের দুজনের প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে।

রাজধানীসহ সারা দেশের কাঁচাবাজারে সামাজিক দূরত্ব না মেনে ভিড় করে কেনাকাটা করার চিত্র প্রায় একই। এই করোনাকালেও চলছে প্রতিদিন টাটকা মাছ, মাংস, সবজি কেনার প্রতিযোগিতা। করোনার এই লকডাউনকে উৎসব ভেবে নিয়মিত কেনাকাটা করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। দেশের অধিকাংশ কাঁচাবাজারের পরিবেশ ঘিঞ্জি হওয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এমনিতেই বেশি। একদিকে মানুষ অনাহারে থাকছে আর অন্যদিকে সামর্থ্যবানদের লেগেছে কেনাকাটার ধুম। ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর প্রথম কৌশল সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। লকডাউন কোনো উৎসবের ছুটি না। এ সময় ভালো খাবার খেতে শখে বাজারে যাওয়া উচিত নয়। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে, ঘরে থাকতে হবে। অনেক রোগীর মধ্যে হালকা উপসর্গ আছে, আবার অনেকে উপসর্গহীন। তারা বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস।’

গতকাল দুপুরে মিরপুর-১ এর মাজার রোড বাজারে দেখা যায়, সারি সারি শাক-সবজির দোকান। দোকানগুলোর মাঝে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। অধিকাংশ দোকানে মানুষের ভিড়। সামাজিক দূরত্ব না মেনে কেনাকাটা করছেন তারা। ভিড় ঠেলে ধাক্কাধাক্কি করে সবজি, ফল কিনছেন ক্রেতারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাইকিং করলেও কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই। মিরপুর-১ এলাকায় বসবাসকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক প্রকৌশলী (৩০) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২০ মার্চ থেকে তিনি বাসায় অবস্থান করছেন। গত ১৮ এপ্রিল তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে সবজি, মাছ, মাংস কেনাকাটা করতে কাঁচাবাজারে গিয়েছি। সপ্তাহে একবার করে বাজার করেছি। বাজার থেকে ফেরার পাঁচ দিন পর থেকে জ¦র অনুভব করি। শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শুষ্ক কাশি ও গলাব্যথা। উপসর্গ দেখে করোনা সন্দেহে টেস্ট করাই। আমার এবং আমার মায়ের করোনা পজিটিভ এসেছে। বাসায় থেকেই আমরা চিকিৎসা নিচ্ছি।’

কালশী এলাকায় বসবাসকারী এক সংবাদ কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৫ মার্চ থেকে তিনি বাসায় অবস্থান করছিলেন। তিনি জানান, ‘এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাসায় ছিলাম। এ সময়ে বাইরের কারও সঙ্গে দেখাও করিনি। ১০ দিন পরপর বাজার করেছি। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে টেস্ট করাই। গত ৩০ এপ্রিল রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।’ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরে থাকার বিকল্প নেই। এ সময় বাজারে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। এখন অনেক রোগীই উপসর্গহীন। রোগীর নিজের অজান্তেই রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছে। জনসমাগম ঠেকাতে মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।’

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী (৫৫) লকডাউনের শুরু থেকে বাসায় ছিলেন। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাসার গৃহকর্মী এবং গাড়ির চালককে অগ্রিম বেতন দিয়ে ছুটি দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী পরে নিজে গাড়ি চালিয়ে বাজারে গেছেন। গত ২২ এপ্রিল তিনি ও তার মেয়ে (২১) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের সতর্কতা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। আক্রান্ত হওয়ার আগে যেদিন সুপারশপে গিয়েছিলাম সেখানে বেশ ভিড় ছিল। প্রচ- গলাব্যথার সঙ্গে হালকা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। জীবনে সুস্থতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হয় না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর