শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ঈদ শপিংয়ে হবে যত সর্বনাশ

থাকবে না সামাজিক দূরত্ব, হুমড়ি খেয়ে পড়বে সবাই কেনাকাটায়, চিকিৎসকদের উৎকণ্ঠা মহামারী নিতে পারে ভয়াবহ রূপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই দোকানপাট-শপিং মল খোলা রাখার সিদ্ধান্তে সর্বমহলে এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। দেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই ঈদ শপিংই দেশের বড় সর্বনাশের কারণ হতে পারে। ১০ মে থেকে শপিং মল-দোকানপাট সীমিত পরিসরে খোলার পর সবাই কেনাকাটায় হুমড়ি খেয়ে পড়বে। ফলে সামাজিক দূরত্ব ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ার শঙ্কাও দেখছেন তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঈদ শপিংয়ের নামে সবাই যদি বাইরে বের হয়, তবে এই মহামারী ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই এমন মহামারী পরিস্থিতিতে বন্ধ রেখেছে শপিং মল। ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিখ্যাত ট্রেডিং ওয়েবসাইট আলীবাবা ডটকমের কর্ণধার জ্যাক মা বলেছেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত মানুষের জন্য ২০২০ সালটি বেঁচে থাকার চেষ্টার বছর। এই সময়ে স্বপ্ন বা পরিকল্পনা নিয়ে ব্যবসায়ীরা কথাও বলবেন না। শুধু নিশ্চিত করুন যে আপনি বেঁচে আছেন। যদি জীবিত থাকেন তাহলে ইতিমধ্যে মুনাফাও করে ফেলেছেন।’ আগামী ১০ মে থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শপিং মল, দোকানপাট সীমিত পরিসরে খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শপিং মল, দোকানপাট  খোলার বিরোধিতা করে নানা যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে। সচেতন মানুষেরা বলছেন, শপিং মলগুলো খুললেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। এদিকে শপিং মল খুলতে সরকারের অনুমতির পরও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল বন্ধ রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। একই সঙ্গে নিউমার্কেটসহ আরও কয়েকটি মার্কেট খোলা হবে না বলে জানা গেছে।

করোনাভাইরাস ঠেকাতে জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে-এমনটা ধরে নিয়েই পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার পর থেকে দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণও বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এ অবস্থায় শপিং মল খোলা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন অনেকে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। দেশে করোনায় প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় গত ১৮ মার্চ। এরপর করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। গতকাল পর্যন্ত দেশে সরকারি হিসাব অনুযায়ী আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজারের বেশি মানুষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই অসুখটা অনেক বেশি ভয়াবহ। এমন না যে আমার অসুখ হলো, আমি সুস্থ হয়ে গেলাম এবং আমার মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলো। এই অসুখটা অনেকটা ভয়াবহ। এমন ভয়াবহ একটা অসুখে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে যদি আমরা এক শতাংশ মৃত্যুঝুঁকিও ধরি তাও ১৭ লাখ মানুষ মারা যাবে। আর দুই শতাংশ হলে ৩৪ লাখ মানুষ মারা যাবে।

তিনি বলেন, সবকিছু খোলা রেখে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা সম্ভব। তবে এ পর্যায়ে যাওয়ার আগে দেখতে হবে এ প্রক্রিয়ায় যত মানুষ আক্রান্ত হবে, তাদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো ব্যবস্থা আমাদের আছে কি-না, সেই লোকবল আমাদের আছে কি-না। যদি সেসব ব্যবস্থা আমাদের না থাকে তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে আমাদের। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে আমরা বড় ঝুঁকির মধ্যে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এখন কিন্তু অনেকেই বের হয়ে যাচ্ছে, তাই এই মুহূর্তে সবাই যেন মাস্ক পরে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এই মাস্ক পরার বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমামসহ স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সবার কাছে একটা বার্তা পৌঁছাতে হবে, বাইরে বের হলেই মাস্ক পরুন।

তিনি আরও বলেন, মার্কেট খুললে যেটা হবে, এখানে অনেক মানুষ একসঙ্গে আসবে, কেউ একজন হাঁচি দিলে লাখ লাখ ভাইরাস বাতাসে ঘুরতে থাকবে। ফলে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। শপিং মল বা মার্কেটগুলো থেকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এরকম ঢালাওভাবে দোকান খুলে দেওয়ায় সংক্রমণ আরও বাড়বে। ঈদের কেনাকাটার জন্য খোলা মানেই জনসমাগমে উৎসাহিত করা। তিনি বলেন, এখন লকডাউন আরও শক্ত করা উচিত, শিথিল করার প্রশ্নই আসে না। আমরা উল্টো পথে হাঁটছি। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সবকিছু চালু করলে সংক্রমণ আরও ঘণীভূত হবে। এখন সংক্রমণ ছোট আকারে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়েছে। কোথাও বড় আকারে বিস্ফোরণ ঘটলে সেটা সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর