শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রথম ভ্যাকসিন তৈরির দাবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষামূলক অনুমোদন আটটিকে প্রতিষেধক তৈরিতে ব্রিটেনের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথম ভ্যাকসিন তৈরির দাবি

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের ১০৮টি গবেষক দল। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের সফলও দাবি করে আসছে। পরীক্ষামূলক ১০৮টি ভ্যাকসিনের মধ্যে আটটিকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অর্থাৎ মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।  এ ছাড়া করোনার কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির দাবি করেছে ইতালি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুসারে, মানবদেহে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দ্য আমেরিকান ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউট-এনআইএস গত ১৬ মার্চ। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গবেষক দল ছিল ১০৪টি। সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে জাপানের ইউনিভার্সিটি অব টোকিও, তুলানে বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা এবং দ্য ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ। ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনও ভ্যাকসিন তৈরিতে একধাপ এগিয়ে আছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন পাওয়া আটটি ভ্যাকসিনের মধ্যে পাঁচটিই চীনের বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ ছাড়া একটি করে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। অপরটি যৌথভাবে তৈরির কাজ করছে জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকে ও যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক কোম্পানি পিজফার। এদিকে, গত ১৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর আরও সাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা বায়োটেক কোম্পানি তাদের তৈরি কভিড ১৯-এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগ করে। পরীক্ষা শেষে কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেলেই বাজারে আসবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন বা টিকা।

কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির দাবি ইতালির : করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করার কথা দাবি করেছেন ইতালির গবেষকরা। তারা বলছেন, করোনার বিরুদ্ধে এটাই বিশ্বের প্রথম কার্যকর ভ্যাকসিন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান ও গবেষণামূলক সাইট সায়েন্সটাইমস ডটকমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ইতালির গবেষকদের দাবি, বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিন তারা তৈরি করে ফেলেছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, এমন ভ্যাকসিন তারা আবিষ্কার করেছেন, যা মানুষের কোষে ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছে। তারা অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ রক্ত থেকে সিরামকে আলাদা করে এ ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন। গ্রীষ্মে মানবদেহে এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা। সাইট সায়েন্সটাইমস ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন হিসেবে যত পরীক্ষা চলছে, এর মধ্যে এটি সর্বাধিক উন্নত পর্যায়ে রয়েছে।

ইতালির রোমে সংক্রামক রোগের চিকিৎসাকেন্দ্র স্পাল্লানজানি হাসপাতালে করা একাধিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ইতালীয় করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনটি ইঁদুরের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে, যা মানুষের কোষেও কাজ করে। ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টাকিসের প্রধান নির্বাহী লুইজি আউরিসচিও বলেন, ভ্যাকসিন পরীক্ষার পর গবেষকরা দেখেছেন, মানবকোষেও এটি ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করছে, যা পৃথিবীতে করোনাভাইরাস ঠেকানোর জন্য ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে প্রথম।

চাপে ভ্যাকসিন নির্মাতারা : করোনার বিস্তার থামার কোনো লক্ষণ না দেখায় ওষুধ প্রস্তুতকারীদের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরির জন্য চাপ রয়েছে। তবে এটি এত সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্টনি এস ফাউসি বলেন, ভ্যাকসিন তৈরিতে দেড় বছরের মতো সময় লাগতে পারে। তবে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জন আন্দ্রেসের মতে, সাধারণত কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে বাজারে আসতে ১৫ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। আসলে ভ্যাকসিন আসার দিনক্ষণ নিয়ে আগেভাগে কিছু বলা যায় না। ওষুধ প্রস্তুতকারী এবং নিয়ন্ত্রকরা সর্বশেষ যে জিনিসটি চান, তা হলো নিরাপদ ওষুধ যাতে সমাধানের পরিবর্তে আরও একটি স্বাস্থ্য সংকট তৈরি না হয়। ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। ভ্যাকসিন কার্যকর এবং তা ব্যবহারের জন্য নিরাপদ, এ দুটি শর্তই নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ ভ্যাকসিনটি দেওয়া হবে লাখ লাখ সুস্থ মানুষকে। এখানে ভুলের কোনো সুযোগ নেই। ভ্যাকসিনের অতীত ইতিহাস আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে।

 

সর্বশেষ খবর