বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

অস্থিরতা বিশৃঙ্খলার অভিযোগে দিদারসহ গ্রেফতার ৪

কার্টুনিস্টসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বাকিররা হলেন- কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ, মিনহাজ মান্নান। দিদারুল রাষ্ট্রচিন্তা নামের একটি মঞ্চের সদস্য। মঙ্গলবার বিকালে দিদারুলকে গ্রেফতারের সময় তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনও নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। র‌্যাব বলছে, দিদারুলসহ আরও ১০ জন বিভিন্ন ইস্যুতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় একটি মামলা করে র‌্যাব। পরে গতকালই গ্রেফতারকৃতদের রমনা থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা আক্তার এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার উপ-পরিদর্শক জামশেদুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ সময় আসামিদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। এর আগে মঙ্গলবার কার্টুনিস্ট কিশোরকে রাজধানীর কাকরাইল ও লেখক মুশতাককে লালমাটিয়ার বাসা থেকে আটক করে র‌্যাবের একটি দল।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রচিন্তার পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও গণক্ষমতাকেন্দ্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার সংকট চিহ্নিত করা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সম্ভাব্য পথ অনুসন্ধান করার একটি উদ্যোগ।’ এ ব্যাপারে র‌্যাব-৩-এর সহকারী পুলিশ সুপার আবু জাফর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় দিদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রমাণাদিও রয়েছে আমাদের কাছে।’ দিদারুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ইফতারের আগে দুটি কালো মাইক্রোবাসে করে কিছু লোক আসেন। তাদের পরনে সাদা পোশাক ছিল। কিন্তু তারা নিজেদের র‌্যাব সদস্য বলে পরিচয় দেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বিনা পরোয়ানায় দিদারুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া উদ্বেগজনক। এমন একসময় দিদারুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, যখন রাষ্ট্রচিন্তার পক্ষ থেকে দরিদ্র, নিরন্ন মানুষকে ত্রাণ বিতরণের কাজ চলছে। মামলার আসামিরা হলেন- কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ, তথ্য-প্রযুক্তিবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য মো. দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নান, প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও সাহেদ আলম, সায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ এবং ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, র‌্যাব-৩ পর্যালোচনা করে দেখেছে, ‘আই অ্যাম বাংলাদেশি’ (ইংরেজি হরফে লেখা) পেজের অ্যাডমিন সায়ের জুুলকারনাইন, আমি কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ ও মুশতাক আহমেদ নামে পাঁচজন দীর্ঘদিন ধরে ওই ফেসবুক পেজটি পরিচালনা করে আসছেন। এই ফেসবুক পেজ থেকে জাতির জনক, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অপপ্রচার বা মিথ্যা জেনেও তারা গুজবসহ বিভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছিলেন। এতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে র‌্যাব। এজাহারে র‌্যাব বিভিন্ন পোস্টের লিঙ্কও দিয়েছে। রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দিদারুলসহ সবাইকে র‌্যাব আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

সর্বশেষ খবর