বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সংকট উত্তরণে এফবিসিসিআইর তিন প্রস্তাব

অর্থনৈতিক প্রভাব অনিশ্চিত অভিমত অনলাইন আলোচনায় প্রণোদনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সমন্বয় রাখা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করে ব্যবসায়ী- শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলেছে- বর্তমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পরিবর্তনশীল হওয়ার কারণে অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়,  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এফবিসিসিআইর সমন্বয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা যেতে পারে। ৪৫ লাখের বেশি খুচরা দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার জন্য প্রণোদনা তহবিল বিবেচনা ও সংকট উত্তরণে তিন দফা প্রস্তাবও দিয়েছে এফবিসিসিআই। গতকাল মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত অনলাইন আলোচনায় এসব কথা বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। এই আলোচনায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইর চার সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, মীর নাসির হোসেন, আবদুল মাতলুব আহমাদ ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, দুই সাবেক প্রথম সহসভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, মনোয়ারা হাকিম আলী, সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান, জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম আজাদ, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এফ আর হোসেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম, বেসরকারি সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. মাশরুর রিয়াজ প্রমুখ। সূচনা বক্তব্যে শেখ ফজলে ফাহিম বলেন- সরকারের তিন বছর মেয়াদি কর্মসূচি বিবেচনায়, প্রণোদনা ঋণ হলো- প্রথম পর্যায়ের সহায়তা। পরবর্তী পর্যায়ে কর, ভ্যাট, কাস্টমস এবং ২০ হাজার কোটি টাকা এসএমই ঋণের একটি অংশ অনুদান হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। টেকসই সামাজিক নিরাপত্তার লক্ষ্যে প্রণোদনা কী ধরনের প্রভাব ফেলবে তার বাস্তবায়নের কাঠামোর ওপর নির্ভর করবে। প্রণোদনা প্যাকেজের সঠিক বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া জরুরি। সব অংশীজনের জন্য স্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রণোদনা ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। সব অংশীজন যাতে তহবিল পান, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। ঋণের আবেদন, প্রসেসিং, অনুমোদন ও বিতরণ প্রক্রিয়া ন্যূনতম সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা বাঞ্ছনীয়। তিনি বলেন- ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান তারল্য ও ক্যাপিটাল বিষয়ক চ্যালেঞ্জগুলোর কারণে ব্যাংকসমূহ ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়টি অগ্রাহ্য করতে পারছে না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা পর্যাপ্ত করার লক্ষ্যে সরকার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি/রিক্স শেয়ারিং  প্রোগ্রাম প্রদান করতে পারে। ৪৫ লাখের অধিক খুচরা দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বউদ্যোক্তার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রণোদনা তহবিল বিবেচনা করা যেতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের অবশ্যই অতিরিক্ত সম্পদের প্রয়োজন হবে। এজন্য তিনটি বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। এগুলো হলো- এক. উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের অগ্রাধিকার পুনর্বিন্যাস, দুই. উন্নয়ন সহযোগী বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি এবং আইডিবি থেকে তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। ৪০ বছরের জন্য নমিনাল কস্ট-এ তহবিল পাওয়ার বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে এ তহবিল এসএমই প্রতিষ্ঠানের ঋণের একটি অংশ অনুদান হিসেবে প্রদান করা যেতে পারে। তিন. অনুৎপাদনশীল খরচ বিশেষ করে বিবিধ খরচ, বৈদেশিক ট্যুর, হাউজিং ও গাড়ি ঋণ প্রভৃতি কমানো যেতে পারে। সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যেন আইন বা কাগজের জটিলতায় প্রণোদনা থেকে অর্থ পেতে কোনো জটিলতায় না পড়েন সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। প্রণোদনা প্যাকেজের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এফবিসিসিআই এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় খুব জরুরি। মো. জসিম উদ্দিন বলেন- পলিসি বা নীতিমালাগুলোর ফারাক কমিয়ে আনা হলে সবাই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে উপকৃত হবেন। মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন- ব্যাংকগুলো যেন কাগজপত্রের জন্য ঋণ দেওয়া বন্ধ না করে। আতাউর রহমান প্রধান বলেন- ব্যাংকে তারল্য সমস্যা নেই। প্রশ্ন হলো- ঋণ আদায় না হলে ঝুঁকি বা দায় কে নেবে। আবদুস সালাম আজাদ বলেন- কৃষকরা যাতে সহজে ঋণ পায়, সেই উদ্যোগ নিয়েছি। গণমাধ্যমও ঋণের আবেদন করতে পারে। আলী রেজা ইফতেখার বলেন- রপ্তানিমুখী শিল্পকে ঋণ দিতে টাকা পেয়েছি। এখন প্রশ্ন হলো- ঝুঁকি কে নেবে, কে নেবে না। জনগণের টাকা ঋণ দেব, সেই টাকা সঠিক সময়ে ফেরত চাইব।

সর্বশেষ খবর