শিরোনাম
শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

দেশে করোনা ছাড়া টেস্ট নেই

বন্ধ বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বেতন পাচ্ছেন না চিকিৎসক কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্তের পরিসংখ্যান। উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে করোনা টেস্ট করাতে ভিড় করছে মানুষ। করোনার ভয়ে অন্য শারীরিক জটিলতায় টেস্ট করাতে আসছে না কেউ। ফলে রোগী শূন্য হয়ে পড়ছে বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। বেতন পাচ্ছে না অনেক প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগী কমে গেছে। অনেক ক্লিনিক লকডাউনও হয়ে গেছে। তারপরও রোগীদের প্রয়োজনে খোলা রাখতে হবে। রোগী কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে। উপার্জন না থাকায় বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিককে নিজেদের পকেট থেকে কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে সরকারের প্রণোদনা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক, নার্সসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষ কর্মরত আছেন। এই পরিস্থিতিতে রোগীশূন্য থাকায় অনেক ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বেতন পাচ্ছেন না সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। মোহাম্মদপুর হুমায়ূন রোড হেলাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হয়ে গেছে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। বেতন পাননি এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। বোনাস চাওয়ার তো কোনো ব্যবস্থাই নেই। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মী হানিফ আলী বলেন, ‘মার্চের মাঝামাঝি থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী কমতে শুরু করে। এ পরিস্থিতির কারণে এপ্রিলে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। এখনো মার্চের বেতনই পাইনি।’

রাজধানীর মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার কারণে রোগী প্রায় নেই বললেই চলে। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টেস্ট হতো এখন রোগীর দেখা মেলে না। একই অবস্থা কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরও। সারা দেশে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের  প্রায় ২৫টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি রাজধানীতেই। পপুলাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মানব সম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান অচিন্ত্য কুমার নাগ বলেন, ‘আমাদের প্রধান শাখায় দিনে গড়ে এক হাজার টেস্ট হতো। এখন গড়ে ১৫০টি টেস্ট হয়। রোগীদের প্রয়োজনে সব সেবাই চালু রেখেছি আমরা। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে আমরা প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীর বেতন ঠিক সময়ে দিয়েছি।’

করোনা টেস্ট ছাড়া আর অন্য কোনো টেস্টের জন্য নেই দৌড়ঝাঁপ। হাসপাতাল করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। এ জন্য সাধারণ সমস্যায় রোগীরা আসছে না। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে আসলেও মিলছে না সেবা। হাসপাতালে ঘুরে মারা যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি।

করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে মানুষের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের দরজায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে টেস্ট করতে আসা মানুষের ভিড় গিয়ে থামে শাহবাগ মোড়ে। অন্য হাসপাতালগুলোর অবস্থাও একই। সব উপসর্গ নিয়ে বাসায় টেস্টের অপেক্ষায় দিন গুনছেন অনেকে। একই অবস্থা ঢাকার বাইরেরও। হাসপাতালে টেস্টের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন অনেকে। বাংলামোটর এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী বলেন, ‘চার দিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছি। টেস্ট করতে সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এসে দেখি বিশাল লাইন। তিন ঘণ্টা রোদে দাঁড়িয়ে খুব অসুস্থ লাগছে।’ এর আগে টেস্ট করতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ওখানে মারা যাওয়ার ঘটনাও সম্প্রতি ঘটেছে। অনেকেই করোনা টেস্ট করতে হটলাইন নম্বরে কল দিয়ে অপেক্ষা করছেন নমুনা দেওয়ার জন্য। দুই দিন পার হয়ে গেলেও নমুনা নিতে আসছে না স্বাস্থ্যকর্মী।  বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমার বোনের করোনা পজিটিভ এসেছে। আমিও একই বাসায় থাকি। তিন দিন ধরে করোনার সব উপসর্গ নিয়ে হটলাইন নম্বরে কল করছি। প্রতিদিনই আসব বলে কিন্তু নমুনা নিতে আর আসে না।’

সর্বশেষ খবর