শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ঘরে নেয়নি স্ত্রী-সন্তান উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু

কুমিল্লা প্রতিনিধি

করোনা উপসর্গ থাকায় স্ত্রী-সন্তান ঘরে ঢুকতে দেননি। আশ্রয় নেন বোনের বাড়িতে। সেখানে মৃত্যু হয় গার্মেন্টকর্মীর। তার দাফন, কাফন, জানাজায় ছিলেন না স্বজনরা। গার্মেন্টকর্মী নজরুল ইসলাম (৫৫) কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের মুদাফর্দি গ্রামের বাসিন্দা। মৃত্যু হয় একই উপজেলার বোনের বাড়ি বারপাড়া ইউনিয়নের বারইকান্দি গ্রামে। বুধবার বিকালে তাকে দাফন করেন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকার মিরপুরে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন নজরুল ইসলাম। তিন দিন আগে করোনা উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে আসেন তিনি। শরীরে উপসর্গ থাকায় নিজের স্ত্রী ও সন্তানরা বাড়িতে জায়গা না দিয়ে তাকে ঢাকায় চলে যেতে বলেন। তখন রাত গভীর। নজরুল নিরুপায় হয়ে বোনের বাড়ি বারইকান্দি গ্রামে আশ্রয় নেন। ৬ মে স্বাস্থ্যের অবনতি হলে বিষয়টি দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবহিত করা হয়। চিকিৎকরা সেখানে পৌঁছানোর আগেই ওই ব্যক্তি মারা যান। শেষ বিদায়ের সময় নজরুল মুখে স্ত্রী-সন্তানের পানিও পাননি। তার বিদায়ে কেউ মাতম করেননি। সন্তানের কাঁধে তার লাশ কবরস্থানে যায়নি। কবরে পড়েনি স্বজনদের হাতের মাটি। দোয়া-মিলাদ তো দূরের বিষয়। অথচ জীবনের সব রোজগার ব্যয় করেছেন তিনি এই স্ত্রী-সন্তানদের পেছনে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহিনুল আলম সুমন বলেন, ‘নজরুলের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে র‌্যাপিড রেসপন্স টিম পাঠাই। তারা পৌঁছার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করা হয়। দুঃখজনক হলো, স্ত্রী ও সন্তানরা তাকে নিজ বাড়িতে ঢুকতে দিল না। জানাজায় স্বজনদের কেউই ছিলেন না। শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন ও মৃতের বোনের জামাই উপস্থিত ছিলেন। দাউদকান্দিবাসীকে বলব, এ করোনাভাইরাস দুনিয়াতেই হাশরের মাঠে কী হবে তা দেখিয়ে দিচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দয়া করে ঘরে থাকুন। করোনা রোগীর প্রতি অমানবিক হবেন না। নতুবা কালকে এমন মৃত্যু আপনারও হতে পারে।

সর্বশেষ খবর