শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মারধর করে তাড়িয়ে দিলেন বাড়িওয়ালা

নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নাজমুল নামে করোনায় আক্রান্ত যুবক ভাড়াটিয়াকে মধ্যরাতে মারধর করে রাস্তায় বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। ওই বাড়ির মালিক তার করোনা আক্রান্ত ভাড়াটিয়াকে মারধর করে বের করে দেওয়ার সময় স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিকে সঙ্গে নেন। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রূপসী বাগবাড়ী এলাকায় মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে। মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার পর নাজমুল একটি মসজিদের সামনে থেমে থাকা রিকশায় বসে কান্নাকাটি করতে থাকেন। তার পরনে পিপিই গাউন ছিল। এ অবস্থাতেই রাস্তায় বের করে দেওয়া হয় তাকে। পরে তাকে উদ্ধারে তৎপরতা চালায় থানা পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হস্তক্ষেপে রক্ষা পাওয়া নাজমুলকে উদ্ধার করে পুলিশ রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। সেখানে তার চিকিৎসাসেবা চলছে। নির্যাতনের শিকার করোনা রোগী নাজমুল ময়মনসিংহের বাসিন্দা আবু সিদ্দিকের ছেলে। রূপগঞ্জের রূপসী বাগবাড়ী এলাকার নূর হোসেন ওরফে কাইল্লা নূরার বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে আসছেন তিনি। নাজমুল স্থানীয় সিটি গ্রুপে চাকরি করার পাশাপাশি পড়াশোনাও করছেন বলে এলাকাবাসী ও স্বজনরা জানিয়েছেন। করোনা রোগী নাজমুলের মামা সিরাজ বলেন, ‘নাজমুলের জ্বর, সর্দিসহ করোনার নানা উপসর্গ দেখা দিলে ৩ মে উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগে তার নমুনা দিয়ে আসি। বুধবার রিপোর্টে তার পজিটিভ আসে। কিন্তু তার করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। এর পরও চিকিৎসকের পরামর্শে বাসাতেই ছিল নাজমুল। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রাতে বাড়ির মালিকসহ এলাকার কিছু লোকজন এসে জোর করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এ অবস্থায় সে মীরবাড়ি মসজিদের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এটা খুবই অমানবিক একটি কাজ।’ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রূপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বুধবার রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি একটু আগে বিষয়টি শুনেছি। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে চিকিৎসক ও পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমি নিজেও ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। এমন অমানবিক কাজ কেউ করতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার করে তার বাসায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে হাসপাতালে পাঠিয়ে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে তার মা তার সঙ্গে আছেন। এখন দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তার পাশে আমরা আছি।’ এটি রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বা যারাই এই কাজটি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকাল পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করছি। সকালে তদন্ত করে শনাক্ত করব কারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।’ ইউএনও মমতাজ বেগম বলেন, ‘এটা কোনো কুষ্ঠ রোগ নয় যে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে, ঘৃণা করতে হবে। ছেলেটি আমাদের পরামর্শে বাসায় আইসোলেশনে ছিল। এত রাতে একজন মানুষকে এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়াটা অমানবিক। যেহেতু দেশে আইন আছে, প্রশাসন আছে, আমরা বিষয়টি দেখব। আইন হাতে তুলে নেওয়ার এখতিয়ার কার নেই।’ বিষয়টির নিন্দা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ওই ছেলে ওই বাড়িতেই থাকবে। তাকে যদি সেখান থেকে হাসপাতাল বা অন্য কোথাও নিতে হয়, আমরা নেব। তার নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করব। এভাবে একজন করোনা রোগীকে বের করে দেওয়া মানে অন্যকে সংক্রমিত করা।’ এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘বাড়িওয়ালা করোনার ভয়ে ওই ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়ে নিষ্ঠুর কাজ করেছেন। আমরা বাড়িওয়ালাকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছি। একই সঙ্গে করোনা রোগী নাজমুলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে পৌঁছে দিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর