শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই লাখ কোটি টাকার তহবিল ছাড়তে নারাজ ব্যাংকগুলো

স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাখার বিরোধিতা প্রণোদনা প্যাকেজের সভায় আমানত নিয়ে উদ্বেগ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তার বাস্তবায়ন নিয়ে ডাকা প্রথম সভাতেই আমানত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো। গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই ভার্চুয়াল সভাটি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালীসহ বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের নির্বাহী প্রধানরা অংশ নেন।

ওই সভায় ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে যা তুলে ধরা হয়েছে- তা হচ্ছে : কভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ায় লকডাউন দীর্ঘ হচ্ছে। মানুষের আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে নতুন আমানত রাখতে পারছে না। উপরন্তু ঋণের কিস্তি আদায় কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে জুন পর্যন্ত। এতে ব্যাংকিং খাতে তারল্যের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এখন করোনাভাইরাসজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার যে পৌনে ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সেটি বাস্তবায়ন করতে গেলে ব্যাংকগুলোর প্রচুর তারল্য দরকার। সহসা তারল্য বা আমানত সমস্যার সমাধান করতে না পারলে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে তুলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাখার বিষয়ে সরকারের যে সিদ্ধান্ত তার বিরোধিতা করেছে। সূত্রগুলো জানায়, ব্যাংকগুলো মনে করছে, করোনা আক্রান্ত ব্যাংকিং খাতের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ এই তহবিল তুলে নেওয়া হলে তারল্য ঘাটতি আরও প্রকট হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রণোদনার মিটিং হলেও ব্যাংকগুলো মূলত আমানত ব্যবস্থাপনার ওপর বেশি জোর  দিয়েছে। তারা স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের টাকা যেগুলো সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা, তা ছাড়তে নারাজ। স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রের কোষাগারে নিতে গত ফেব্রুয়ারিতে বিল পাস হয় সংসদে। প্রায় ৬১টি প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার তহবিল জমা আছে বিভিন্ন ব্যাংকে, যার একটি বড় অংশ আমানত হিসেবে রাখা আছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে। এই অর্থ  কোষাগারে আনার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, ‘সংস্থাসমূহের তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থের মালিকানা প্রকৃতপক্ষে জনগণের এবং সেই কারণে ওই অর্থ জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যবহার করা সমীচীন।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্র মালিকানাধীন একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি ও সিইও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের টাকা রাষ্ট্রের কোষাগারে যাবে- সে বিষয়ে আমাদের আপত্তি নেই। এটাকে ঠিক বিরোধিতাও বলা যাবে না। আমরা বলতে চেয়েছি, সংকটকালীন এই পরিস্থিতিতে এসব তহবিল ব্যাংকিং খাত থেকে তুলে নেওয়ার আগে যেন পর্যালোচনা করা হয়। তখন (সভায়) বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আমাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি দেখবে।’ সূত্রগুলো জানায়, কভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে সভায় রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা নিয়েও আলোচনা হয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মতো রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোও যাতে কভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে গ্রাহককে ঘরে সেবা পৌঁছে দিতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয় অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে। বিষয়টি স্বীকার করে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও েেমা. সামস উল ইসলাম বলেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে একটি নতুন ব্যাংকিং ব্যবস্থা আমরা দেখতে পারব। তখন গ্রাহকের আচরণ ও চাহিদা বদলে যাবে। তারা ঘরে বসেই আরও বেশি ব্যাংকিং সেবা প্রত্যাশা করবেন। এরই মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ ধরনের সেবার বিস্তার ঘটিয়েছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কীভাবে আরও বেশি ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে ব্যাংকিং সেবা গ্রাহকের ঘরে পৌঁছে দিতে পারে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে সে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর