শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

দ. এশিয়ায় করোনা কতটা প্রভাব ফেলবে বলা কঠিন

প্রতিদিন ডেস্ক

দ. এশিয়ায় করোনা কতটা প্রভাব ফেলবে বলা কঠিন

ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের অনলাইনে প্রকাশিত ‘করোনাভাইরাস ইজ আ ক্রাইসিস ফর দ্য ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড, বাট হেয়ার ইজ হোয়াই ইট নিড নট বি আ ক্যাটস্ট্রফি’ শীর্ষক এক নিবন্ধে দুই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এস্থার দুফলো ও অভিজিৎ ব্যানার্জি বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাভাইরাসের কতটা প্রভাব পড়বে, সেটা এখনো বলা কঠিন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো না গেলে এটা বলা সম্ভব নয়।

নিবন্ধে এ নোবেলজয়ী দম্পতি আরও বলেছেন, মহামারীর সময় যখন সরকারের অনেক অনেক মানুষকে সহায়তা করা দরকার, তখন এ সার্বজনীন ব্যবস্থা জীবন বাঁচাতে পারে। তারা বলেন, এতে মানুষ আশ্বস্ত হয় এই ভেবে যে, তারা সরকারের সহযোগিতার আওতার বাইরে নয়। করোনার প্রকোপে মানুষের মনে যে ভীতি তৈরি হয়েছে, নগদ টাকা স্থানান্তরে সেটাও দূর হবে বলে তারা মনে করেন। তবে উন্নয়নশীল দেশে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি থাকায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো এতটা প্রভাব সেখানে অনুভূত না-ও হতে পারে বলে তারা মনে করেন। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এ ধরনের মহামারী মোকাবিলা করার মতো সক্ষম নয়। আর দারিদ্র্যের কারণে মানুষের শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। এতে আবার অন্যান্য রোগে মারা যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

তারা বলেন, বিপুলসংখ্যক পরীক্ষা করলে যত তথ্য পাওয়া যায়, অনেক দেশই তা করতে না পারলেও অত্যন্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বলে নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন দুফলো ও অভিজিৎ। ভারতে শনাক্তের সংখ্যা ৫০০-তে পৌঁছানোর পরই ২৪ মার্চ দেশটি পূর্ণাঙ্গ লকডাউন শুরু হয়েছে। রুয়ান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়াও মার্চের শেষ দিকে লকডাউন শুরু করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ লকডাউন বেশি দিন চালানো যাবে না। এ গরিব দেশগুলো কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা চালু করে আরও সময় নিতে পারত। এ সময়ে রোগের বিস্তারের তথ্য সংগ্রহ করে পরীক্ষা ও অনুসন্ধানের কৌশল প্রণয়ন করতে পারত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব তেমন কিছু হয়নি। অন্যদিকে ধনী দেশগুলো গরিব দেশগুলোর সহায়তায় এগিয়ে না এসে উল্টো তাদের সঙ্গে পিপিই, অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটরের জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করে।

তারা উল্লেখ করেন, এ পরিস্থিতিতে অনেক দেশেই লকডাউনের মানবিক প্রভাব টের পাওয়া যাচ্ছে। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। মাঠের ফসল ঘরে তোলা যাচ্ছে না। নির্মাণ প্রকল্প আটকে গেছে। বাজার ও বিপণিবিতান বন্ধ, ফলে কাজ ও উপার্জন হারাচ্ছে মানুষ। কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দিনে ১৫ হাজার শিশু মারা গেছে। এ শিশুরা মারা গেছে মূলত প্রতিরোধযোগ্য অসুখে, যা দারিদ্র্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। এমন সম্ভাবনা অমূলক নয় যে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পেলে আরও অনেক শিশু এসব রোগে মারা যাবে।

এ পরিস্থিতিতে দুই অর্থনীতিবিদের পরামর্শ হলো, সুনির্দিষ্টভাবে পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। ইউরোপে যেভাবে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে, গরিব দেশগুলোতেও তেমন করতে হবে। যেখানে তথ্য ও সম্পদের অপ্রতুলতা আছে, সেখানে সক্রিয় হটস্পটগুলো লক্ষ্যস্থল করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় সার্বজনীন লকডাউন আরোপ না করে কর্তৃপক্ষ এসব গুচ্ছ চিহ্নিত করতে পারে। যেখানে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা প্রয়োজন, সেখানে তা চালু করতে পারে।

দুফলো ও অভিজিৎ ব্যানার্জি মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। শেষমেশ, তারা মনে করেন, আগামী দিনগুলোয় গরিব দেশগুলোর মানুষকে নিরাপদ জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তা না হলে গরিব মানুষ কোয়ারেন্টাইনে ক্লান্ত হয়ে আর ঘরে থাকতে চাইবে না। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ বা প্রথাগত রাজস্বনীতি কাজে আসবে না, এখন ব্যাকরণ ভাঙতে হবে। একই সঙ্গে আবার সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেছেন তারা। এতে বিপর্যয় প্রতিহত করা যাবে।

সর্বশেষ খবর