শনিবার, ৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালে ভয়াবহ মাদক সিন্ডিকেট

অ্যাম্বুলেন্স ও পণ্যবাহী ট্রাকে বহন করা হচ্ছে মাদক, কক্সবাজার যশোর দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা ফেনসিডিল, ঢাকা কেরানীগঞ্জে রমরমা ভ্রাম্যমাণ স্পট

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাকালে ভয়াবহ মাদক সিন্ডিকেট

গত বুধবার ঢাকার আশুলিয়ায় ৩৩৩ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করে র‌্যাব -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনাভাইরাসে এখন বেশির ভাগ মানুষ ঘরবন্দী। বন্ধ দোকানপাট ও গণপরিবহন। তবে অন্য যানবাহনের বেশির ভাগই চলছে। ঠিক সে সময়েই চলছে মাদকের কারবার। নীরবে মাদক সরবরাহ করছে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা। লকডাউনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা মাদক পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েকটি চক্র। কেউ অ্যাম্বুলেন্স আবার কেউ পণ্যবাহী ট্রাকে করে এসব মাদক পাচার করছে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এর কয়েকটি চালানও ধরা পড়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিলে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অভিযানে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫০ পিস ইয়াবা, ৩০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছে। তবে জব্দের সংখ্যা আরও বেশি হবে। বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন একজন। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল কক্সবাজার লিঙ্ক রোড থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাচারের সময় ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিনজনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ৭ এপ্রিল নাইক্ষ্যংছড়ি রাস্তার মাথা এলাকা থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক যুবককে আটক করে ডিবি। ৮ এপ্রিল শহরের নুনিয়াছড়া থেকে ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ তিনজনকে আটক করে ডিবি। ১৭ এপ্রিল ৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ একজনকে আটক করে উখিয়া থানা পুলিশ। ১৯ এপ্রিল লিঙ্ক রোড থেকে ৩ হাজার ৯৬০ পিস ইয়াবাসহ দুজনকে আটক করে র‌্যাব। ১৭ এপ্রিল ৬০০ পিস ইয়াবাসহ কলাতলী থেকে দুই বন্ধুকে আটক করে পুলিশ। একই দিন টেকনাফের শাপলা চত্বর এলাকা থেকেও ৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক যুবককে আটক করে র‌্যাব। এ ছাড়া ১৯ এপ্রিল টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের গোলার চর এলাকায় বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন জাফর আলম নামে এক মাদক ব্যবসায়ী। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২ লাখ ইয়াবাসহ অস্ত্র-গুলি জব্দ করা হয়।

গত ৬ মে রাত আড়াইটায় ঢাকার আশুলিয়ায় ৩৩৩ বোতল ফেনসিডিল এবং মিনিট্রাকসহ শামীম হোসেন ও মহসীন আলী প্রধান নামে ২ জন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ পদ্ধতিতে সবজির ট্রাকে ফেনসিডিল এনে ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, কারওয়ান বাজার ও পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক ডিলারদের কাছে বিক্রি করে আসছিল।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, মাদক পাচার রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে এসব চালান আটক হচ্ছে। জানা যায়, ৬ মে রাজধানীর দারুসসালাম বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩০ কেজি গাঁজাসহ এক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওই মাদক ব্যবসায়ী হলেন আলী হোসেন (৪৪)। আগের দিন রাত আড়াইটার দিকে গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ কেজি গাঁজাসহ ফয়সাল আহমেদ শুভ (১৯) নামে আরেক মাদক বিক্রেতাকে আটক করা হয়। র‌্যাব সদর দফতরের পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, করোনা পরিস্থিতিতেও মাদকের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। এর মধ্যেও তারা বেশ কিছু মাদকের চালানসহ কয়েকজনকে আটক করেছেন। এ ছাড়া ১৪ এপ্রিল বিকালে যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার খড়িডাঙ্গা গ্রাম থেকে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। ওই মাদক ব্যবসায়ীরা হলেন বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালি গ্রামের আলীর ছেলে লিটন (২৫) ও খড়িডাঙ্গা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে মিকাইল (২০)। এ অভিযানের চার দিন আগে যশোরের শার্শা ও বেনাপোলে ২৬৬ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল, দুটি মোটরসাইকেলসহ চার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ ও বিজিবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা শুরুতে বলেছিলাম করোনাকালে বিভিন্ন অপরাধ কমে যাবে। কিন্তু এ মহামারী যদি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে তাহলে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু অপরাধ বেড়ে যাবে। কারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হবে, আয় কমে যাবে এসবের জন্য মানুষ অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। কিন্তু মাদক আমাদের অনেকদিনের সমস্যা। এখনো এর ডিমান্ড সোসাইটিতে আছে। তাই সহজে এটি নির্মূল করা যাবে না। এজন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। মাদক বন্ধের জন্য একটি পকেট বন্ধ করলে হবে না। যেহেতু আমরা মাদক সরবরাহের সব পকেট বন্ধ করতে পারিনি, তাই বর্তমান করোনা সুযোগটা তো মাদক সিন্ডিকেটরা নেবেই।’ সূত্র জানান, ঢাকার কেরানীগঞ্জের ১২টি ইউনিয়নে মাদকের শতাধিক স্পট রয়েছে। এখানে ভ্রাম্যমাণ স্পটই সংখ্যায় বেশি। পুরুষ ও নারী যৌথভাবে এসব স্পটে মাদক ব্যবসা করছে। স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চর মীরের বাগ, ইকুরিয়া পূর্বপাড়া, ইকুরিয়া মুসলিমনগর, ইকুরিয়া খালপাড়, ইকুরিয়া বেপারীপাড়া, ইকুরিয়া বাজার, চুনকুটিয়া টিলাবাড়ী, শুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়া, জিয়ানগর; তেঘরিয়া ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর, রাজেন্দ্রপুর, করের গাঁও, গৈস্তা বাজার; বাস্তা ইউনিয়নের দড়িগাঁও, ভাওয়ার বেটি, বেড়িবাঁধ, রাজাবাড়ী, গোয়ালখালী বাজার; রোহিতপুর ইউনিয়নের ধর্মশুর, সোনাকান্দা ও রোহিতপুর বাজার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর