শনিবার, ৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

হাসপাতালে যত্রতত্র ব্যবহৃত পিপিই

আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক নার্স

জয়শ্রী ভাদুড়ী

হাসপাতালে যত্রতত্র ব্যবহৃত পিপিই

ঝুঁকিপূর্ণভাবে হাসপাতালের মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে চিকিৎসক ও নার্সদের ব্যবহৃত পিপিই -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হাসপাতালে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ব্যবহার করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করে মেঝেতে ফেলে রাখায় সেখান থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। অনেকেই জানেন না পিপিই ব্যবহার ও পরবর্তী বিধিমালা। প্রশিক্ষণ না থাকায় এবং গাইডলাইন না মানায় বাড়ছে আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা সঠিকভাবে পিপিই ব্যবহার না করায় অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। পিপিই পরা, খোলা এবং পরবর্তী ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি স্বাস্থ্যকর্মীদের। অনেকে অনলাইনে দেখে শিখেছেন, আর বাকিরা না জেনেই রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এসব ব্যবহৃত পিপিই থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। তিনি আরও বলেন, চীনে এক গবেষণায় দেখা গেছে হাসপাতাল থেকে ৪১ শতাংশ ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। হাসপাতাল করোনা আক্রান্ত হওয়ার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। তাই এসব ব্যবহৃত সামগ্রী সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করে পরবর্তী ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। বিএমএ সূত্রে জানা যায়, দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩৬ জন চিকিৎসক, ৩৮৮ জন নার্স এবং ৪৮১ জন অন্য স্বাস্থ্যকর্মী। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৫৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও আক্রান্ত হয়েছেন। রাজধানীতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুর্মিটোলা হাসপাতালে দায়িত্বরত এক নার্স বলেন, ‘দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা করোনা ওয়ার্ড ঘুরে এসে পিপিই খুলে মেঝেতে রেখে দেন। প্রায় সময়ই জীবাণুমুক্ত করা হয় না। মেঝেতে দুই দিনের পিপিই জমে স্তূপ হয়ে গেছে। এগুলো খালি হাতে সরালে ওই ব্যক্তিও আক্রান্ত হবে। মেঝেতে পড়ে থাকছে ব্যবহৃত মাস্ক।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা রোগীদের নির্ধারিত হাসপাতালে ওয়ার্ড পরিদর্শন শেষে পিপিই খুলে চেয়ারের ওপর রেখেছিলেন। ওই পিপিই থেকে দুজন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।’  হাসপাতালগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবস্থা বেহাল। বেশ কয়েকটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পালিয়ে গেছে। এর আগে এই হাসপাতালের টয়লেটের দরজায় এক রোগীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনি কখন টয়লেটে গিয়ে পড়ে গেছেন তা জানে না কেউ। মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তাকে টয়লেটের সামনে দেখতে পেয়ে অন্য রোগীরা হাসপাতালের কর্মীদের জানান। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি এক রোগী জানান, টয়লেটের পরিস্থিতি ভীষণ নোংরা। রোগী পিছলে পড়ে থাকলেও দেখার কেউ নেই। টয়লেটের বাইরে হাত ধোয়ার জন্য সাবান কিংবা হ্যান্ডওয়াশের কোনো ব্যবস্থা নেই। অসুস্থ শরীরে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে আমাদের। নেই জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রীও। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স করোনা আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, টয়লেটের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। তিন দিনেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আসে না এই হাসপাতালে। মুগদা হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স জানান, মুগদা হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল ঘোষণা হওয়ার পর অনেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী পালিয়ে গেছে। এ জন্য বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর