শনিবার, ৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অধীনে বাংলাদেশে নতুন গ্রেফতারের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর প্রিন্সিপ্যাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলিস ওয়েলস এক টুইট বার্তায় এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের মানুষ যেন স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য ওয়েলস আহ্বান জানিয়েছেন। বাক-স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের ভিত্তি হিসেবে অভিহিত করে ওয়েলস বলেন, এই মহামারীর সময়ে এটি মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাত রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে বাক-স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়ে টুইট করেছেন। রাষ্ট্রদূতরা বলেছেন, সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করার ফল খুব একটা ভালো হবে না। ইইউর রাষ্ট্রদূত রেনসে তেরিঙ্ক, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভেরওয়েজ, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত রবার্ট ডিকসন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত শার্লোট স্লাইটার ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এসট্রাপ পিটারসন বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন টুইট করেন। আর্ল মিলার এই টুইটে লিখেছেন, সঠিকভাবে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় মুক্ত ও স্বাধীন মিডিয়া নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য পরিবেশন করতে পারে, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কভিড-১৯ মহামারীর সময়ে বাক-স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা এবং সাংবাদিকদের ঠিকমতো কাজ করতে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। রেনসে তেরিঙ্ক তার টুইট বার্তায় বলেন, এই সমস্যাসংকুল সময়ে বাক-স্বাধীনতা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফেক নিউজ একটি বড় ধরনের সমস্যা হলেও সাংবাদিকদের স্বাধীন ও মুক্তভাবে তাদের কাজ করতে দিতে হবে।  একই মত পোষণ করে রবার্ট ডিকসন লিখেছেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নির্ভরযোগ্য ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রয়োজন। সিডসেল ব্লেকেন, শার্লোট স্লাইটার ও উইনি এসট্রাপ পিটারসন একই ধরনের মন্তব্য করে টুইট করেছেন।

কার্টুনিস্ট লেখক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা প্র্রত্যাহার চায় এইচআরডব্লিউ : ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে প্র্রবাসী সাংবাদিক, কার্টুনিস্টসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলা প্র্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গত বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। এ নিয়ে গত ৬ মে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করেছে র‌্যাব-৩।

এ মামলায় আসামি করা হয়েছে কার্টুনিস্ট আহম্মেদ কবির কিশোর, ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদ, তথ্যপ্র্রযুক্তিবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য মো. দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নান, প্র্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও সাহেদ আলম, সায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ ও ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে। এর মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, মত প্র্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে এমন কোনো কিছু বন্ধ করতে হবে। ১১ জনের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে ও কারাগারে থাকা চারজনকে মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, কেবল একটি অনিরাপদ ও স্বৈরাচারী সরকার কার্টুনিস্ট, সাংবাদিক এবং নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের জন্য মহামারীকে ব্যবহার করে। কেবল ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ পোস্ট করার কারণে যাবজ্জীবন কারাদ  হতে পারে এমন মামলা দায়ের না করে বরং আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনাগুলো গ্রহণ করা উচিত এবং কভিড-১৯ এর বিষয়ে সরকারের প্র্রতিক্রিয়ায় যে কোনো ফাঁক থাকলে তা বন্ধ করার চেষ্টা করা উচিত।

সর্বশেষ খবর