শনিবার, ৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ৭২ হাজার ছাড়াল

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) বিশ্বে মৃতের সংখ্যা গত বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় আরও সাত হাজার বেড়ে মোট সংখ্যা দুই লাখ ৭২ হাজার ছাড়িয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ লাখ। ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, আক্রান্ত ও মৃতের দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ১৩ লাখ। আর এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭৭ হাজার মানুষ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে নিউইয়র্কে। দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। মৃতের সংখ্যায় আমেরিকার পরেই রয়েছে ইউরোপের দেশ ব্রিটেন। দেশটিতে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারা গেছেন ৩০ হাজার ৬১৫ জন। এ ছাড়া ইতালিতে ২৯ হাজার ৯৫৮, স্পেনে ২৬ হাজার ৭০, ফ্রান্সে ২৫ হাজার ৯৮৭, জার্মানিতে ৭ হাজার ৩৯২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

ট্রাম্পকে প্রতিদিন পরীক্ষা করা হবে : মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত এক পরিচারক আক্রান্ত হয়েছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। এ কারণে সাবধানতা অবলম্বনে এখন থেকে প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শরীরেও ভাইরাসটির উপস্থিতি আছে কিনা- তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। ওভাল অফিসে ট্রাম্প নিজেই প্রতিদিন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন বলে জানান। রয়টার্স জানিয়েছে, আক্রান্ত ওই পরিচারক যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য। তার সঙ্গে মেলামেশার পরিমাণ ‘খুবই কম ছিল’ বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কেবল ট্রাম্পই নন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের শরীরেও নতুন করোনাভাইরাসের উপস্থিতি আছে কিনা- পরীক্ষা করা হয়েছে।

হতাশায় যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা : করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে হতাশায় ভুগে ৭৫ হাজার মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হতে পারে। বিভিন্ন হতাশা থেকে অতিরিক্ত মাদক গ্রহণ কিংবা আত্মঘাতে মারা যেতে পারেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংগঠন ওয়েল বিয়িং ট্রাস্টের বিশ্লেষণে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ধরনের মৃত্যু ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওয়েল বিয়িং ট্রাস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বেকারত্ব, অর্থনৈতিক মন্দা, আইসোলেশনজনিত মানসিক চাপ এবং মহামারী শেষ হওয়ার সুনির্দিষ্ট তারিখ না জানার কারণে মানুষের মধ্যে হতাশাজনিত মৃত্যুর প্রবণতা বাড়তে পারে। একমাত্র স্থানীয়, রাজ্যভিত্তিক এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপই পারে এ প্রবণতা দূর করতে।’ রাশিয়া হটস্পটে পরিণত : এক দিনে ১১ হাজারেরও বেশি করোনা আক্রান্তের তথ্য মিলেছে রাশিয়ায়। গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে মোট সংক্রামিতের সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ সরকারি হিসাব অনুযায়ী, আক্রান্তের এই সংখ্যা ফ্রান্স ও জার্মানিকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে।

এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইউরোপে করোনাভাইরাস মহামারীর নতুন হটস্পটে পরিণত হয়েছে রাশিয়া। সর্বোচ্চ সংখ্যায় করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান এখন পঞ্চম স্থানে। গতকালও দেশটি আক্রান্তের সংখ্যায় জার্মানি ও ফ্রান্সকে পেছনে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসারে, গতকাল রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৫৯ জন। মৃতের সংখ্যা ছিল ১ হজার ৭২৩ জনের। মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেকই রাজধানী মস্কোর বাসিন্দা। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন আশঙ্কা করছেন, সরকারিভাবে শনাক্তের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ, ৩ লাখও হতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত সোবিয়ানিন আরও বলেন, ‘পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা যে বিপুল সংখ্যক মানুষকে শনাক্ত করতে পারছি এটি ইতিবাচক, নেতিবাচক নয়। কারণ এখন তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা যাবে এবং ভাইরাসের বিস্তার মন্থর হবে।’ অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, রাশিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা এত কম হওয়ার কারণ হচ্ছে অনেক আক্রান্তকে করোনায় মৃত্যু বলে উল্লেখ করা হচ্ছে না। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, অনেক দেশের তুলনায় বিলম্বে রাশিয়ায় সংক্রমণ হয়েছে। ফলে তারা প্রস্তুতির জন্য বেশি সময় পেয়েছেন।

কঠিন ঝুঁকিতে আফ্রিকা : প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে মহামারীর প্রথম বছরে আফ্রিকায় ২ কোটি ৯০ লাখ থেকে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে এবং তার মধ্যে ৮৩ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বৃহস্পতিবার এক টেলিকনফারেন্সে কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এই প্রাক্কলন তুলে ধরেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আফ্রিকার প্রধান মাৎশিদিসো মোয়েতি। তিনি বলেন, ‘মহামারীর বিস্তার ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হলে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, সেই পূর্বাভাস এখানে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য, পরিস্থিতি এখনো সেরকম নয়।’ জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই সমীক্ষা করা হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের ৪৭টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে। এসব দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় একশো কোটি। রয়টার্স জানায়, এসব দেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৩১ জনের। মাৎশিদিসো মোয়েতি বলেন, ‘এ অঞ্চলের সরকারগুলো উদ্যোগী না হলে কভিড-১৯ আগামী কয়েক বছরের জন্য আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠতে পারে। আমাদের নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে, সংক্রমণের উৎস খুঁজে বের করতে হবে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর