রবিবার, ১০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
বিবিসির প্রতিবেদন

হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো লকডাউন!

প্রতিদিন ডেস্ক

হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো লকডাউন!

যে সমস্ত এলাকায়, বিশেষত ব্রিটেনের যেসব এলাকায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেশি, সেসব এলাকায় হৃদরোগীরা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া থমকে পড়ার (হার্ট অ্যাটাক) সমস্যায় খুব কমই ভুগছেন। অবস্থাটা দেখে প্রফেসর ডা. জন রাইট ভাবছেন, ‘তবে কী করোনার প্রভাবে হৃদরোগের তীব্রতা কমে গেছে!’

তাঁর এই ভাবনা তিনি শুধু নিজের মধ্যে রেখে দিয়েছেন তা কিন্তু নয়। বিবিসি রেডিও ফোর-এর ‘দ্য এনএইচএস ফ্রন্টলাইন’-এ তা শুনিয়েও দিয়েছেন। তিনি অনুষ্ঠানটির জন্য ডায়রি লিখে থাকেন। ৫ মে প্রচারিত ডায়রিতে ডা. জন রাইট লিখেছেন, করোনা মহামারীকালে হৃদরোগীদের ‘সুন্দর অবস্থা’ তাকে চমকে দিয়েছে। জন রাইট হচ্ছেন ব্রাডফোর্ড ইনস্টিটিউট অব হেলথ রিসার্চ-এর প্রধান। সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুখ্যাত এই চিকিৎসক আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলে কলেরা, এইচআইভি ও ইবোলা মহামারী নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ফ্রন্টলাইন ডায়রিতে প্রফেসর ডা. জন রাইট লিখেছেন : করোনা মহামারীর এই সময়টায় হৃদযন্ত্রের ভয়ানক ব্যথা বা মস্তিষ্কে তীব্র রক্তরক্ষণ (স্ট্রোক) নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীর সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে গেছে। গোড়ার দিকে ভাবতাম, হাসপাতালে এলে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে রোগীরা বাড়িতে বসে হৃদযন্ত্রণা সহ্য করা ভালো মনে করছে। কিন্তু হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হলে রোগী সাহায্য চাইলে হেলথ সার্ভিসের লোক ছুটে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে না। খবর পেলেই তারা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাহলে হৃদরোগীরা স্বস্তিতে থাকার কারণ কী? ডা. জন রাইট মনে করেন, আমাদের অতিব্যস্ত জীবনকে মন্থর করে দিয়েছে লকডাউন। রাস্তায় যানবাহনের কোনো জটলা নেই; এতে বাতাস নির্মল থাকছে। শ্লথ জীবনযাত্রা আমাদের বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে দিচ্ছে। ফলত স্বাস্থ্য হচ্ছে উন্নত। স্বাস্থ্য কতটুকু সুরক্ষিত তা নির্ণয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত পদ্ধতির নাম ‘ফিটবিট’। ডা. জন রাইট লিখেছেন, হৃদস্পন্দনের হার মাপার সময় দেখতে হয় রেস্টিং রেট কেমন। রেস্টিং রেট যত কম হবে, হৃদযন্ত্র তত ভালো হবে। ফিটবিট জানায়, লকডাউনের কারণে রেস্টিং হার্ড রেট বেশ কমে গেছে।

সময়মতো ওষুধ আর নিদ্রা : ইয়র্কশায়ারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চের পরিচালক প্রফেসর অ্যালিস্টেয়ার হল বলেন, লকডাউনে পড়ে হার্টের রোগীরা হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকছেন, এমনটা তার নজরে পড়েনি। উল্টোটাই দেখেছেন তিনি। গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় তিনি দেখেছেন, ভোরে রাস্তায় সপরিবারে শরীরচর্চা করছে নরনারী। প্রফেসর হল বলেন, ‘আগে কখনো এটা দেখিনি। মনে হচ্ছে সপরিবারে ব্যায়াম করার জন্য সবার সুযোগ এনে দিয়েছে লকডাউন।’ এই ব্যায়াম থেকে হৃদরোগীরা উপকৃত হচ্ছেন? প্রফেসর অ্যালিস্টেয়ার হল বলেন, অবশ্যই। অফুরান অবসরভোগী মানুষ খারাপ কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনার ওষুধ খাওয়ার সময় ভুলে যাচ্ছে না। এটাও হৃদরোগে কাতর না হওয়ার একটা কারণ। স্ট্রোকে কাবু হওয়ার ঘটনা কমে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে যথাসময়ে ওষুধ সেবন। লকডাউনকালে ঘুম দেওয়া যায় একটানা।

 চমৎকার ঘুম মেজাজ ফুরফুরে করে দেওয়া শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে করে দেয় সতেজ। হৃদযন্ত্র কী তখন বাদ যায়!

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর