শিরোনাম
রবিবার, ১০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

নতুন হটস্পট রাশিয়া ও ব্রাজিল, মৃত্যু কমছে ইউরোপ-আমেরিকায়

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) মৃত্যু ও আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপ শীর্ষে থাকলেও তুলনামূলকভাবে এ অঞ্চলে এখন মৃত্যুর হার কমা শুরু করেছে। তবে নতুন হটস্পট হিসেবে এসেছে রাশিয়া এবং ব্রাজিলের নাম। রাশিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় দুই লাখ। ব্রাজিলে  আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মৃতের সংখ্যা নতুন করে পাঁচ হাজার বেড়ে মোট সংখ্যা দুই লাখ ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আগের দিন ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাত হাজার। গতকাল বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ লাখের কাছাকাছি চলে যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে শুক্রবার পর্যন্ত ১৩ লাখ ২৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৭৯ হাজারের বেশি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সবচেয়ে বাজে অবস্থা যাচ্ছে দেশটির জনবহুল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে। শুধু নিউইয়র্কে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা অন্তত ৪ লাখ। নিউইয়র্কে যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের অন্য কোনো দেশে তত আক্রান্ত নেই। সেখানে মারা গেছেন অন্তত ২৭ হাজার মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন স্পেনে, ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ হাজার ৩০০ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া ২ লাখ ১৫ হাজার সংক্রমিত ও ৩০ হাজার ২০০ মৃত্যু নিয়ে স্পেনের পরই ইতালির অবস্থান। করোনায় মৃত্যু ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে যুক্তরাজ্যেও। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার। বিবিসি জানায়, করোনায় মৃত্যুর দিক থেকে বিশ্বে এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই অবস্থান করছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে মৃত্যু ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখের বেশি মানুষ। সরকারি তথ্যমতে, যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমিত সংকটাপন্ন রোগী আছেন ১ হাজার ৫৫৯ জন।

আক্রান্তের দিক দিয়ে রাশিয়ার অবস্থান পঞ্চম। সেখানে শনাক্ত ১ লাখ ৯৯ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে ১ হাজার ৮২৭ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া ফ্রান্সে কভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি মানুষ। দেশটিতে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা ২৬ হাজার ২৩০ জন। জার্মানিতে মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার প্রায়। আক্রান্তের দিকে দিয়ে এর পরই রয়েছে ব্রাজিল ও তুরস্ক। ব্রাজিলে আক্রান্ত ১ লাখ ৪১ হাজারের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ও তুরস্কে আক্রান্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫০ জন কভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ৩ হাজার ৭০০ জন মারা গেছেন। ইরানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। দেশটিতে সরকারিভাবে ৬ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে।

উহানে প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও আক্রান্তের দিক দিয়ে চীনের অবস্থান এখন এগারো। দেশটিতে শনাক্ত ৮৪ হাজার রোগীর ৪ হাজার ৬৩৭ জন মারা গেছেন এবং সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৭৮ হাজার। এরপর কানাডায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬ হাজারের বেশি। মারা গেছেন সাড়ে ৪ হাজার। পেরুতে আক্রান্ত ৫৮ হাজারে মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬২৭ জনের। এদিকে ভারতে করোনার সংক্রমণ গত কয়েকদিনে আশঙ্কাজনক বেড়েছে। দেশটিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন ৬০ হাজার। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা গেছেন। প্রতিবেশী পাকিস্তানে আক্রান্ত ২৬ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬০০ জনের। গত শুক্রবার ১ হাজার ৭০০ এর বেশি মানুষ আক্রান্ত হন। ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামে আক্রান্ত ৫২ হাজার কভিড-১৯ রোগীর ৮ হাজার ৫২১ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডসে যে ৪২ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৪০০ জন মারা গেছেন। সৌদি আরবে আক্রান্ত ৩৫ হাজারের ২২৯ জন মারা গেছেন। মেক্সিকোতে মারা গেছেন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। মৃত্যুর তালিকায় উপরে থাকা দেশগুলো যথাক্রমে সুইডেন ৩ হাজার ১৭৫, আয়ারল্যান্ড ১ হাজার ২৯, সুইজারল্যান্ড ১ হাজার ৮১০, ইকুয়েডর ১ হাজার ৬৫৪, ইন্দোনেশিয়া ৯৪৩।

সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা কমছে : বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুতেই থামছে না। কোথাও মৃত্যু কমলে বেড়ে যাচ্ছে অন্য কোথাও। কোনো দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করলে মহামারীর বিস্তার ঘটছে অন্য কোনো দেশে। তবে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়েই করোনা সংক্রমিত সংকটাপন্ন বা গুরুতর অবস্থার রোগীর সংখ্যা কমছে। করোনা মহামারীর সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফো। এই ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে চললেও গত ৩০ এপ্রিল থেকে বিশ্বজুড়ে সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা কমছে। করোনা মহামারী ছড়ানোর পর গত ২৯ এপ্রিল সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৫৯ হাজার ৮১৭ জন সংকটাপন্ন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর পরদিন ৩০ এপ্রিল এ সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার কমে ৫০ হাজার ৯৫৬ জন হয়। এরপর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত প্রতিদিনই সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা কমছে। বুধবার করোনা সংক্রমিত সংকটাপন্ন রোগী ছিল ৪৮ হাজার ২১৪ জন। এর পরদিন গত বৃহস্পতিবার এ সংখ্যা কিছুটা বেড়ে হয় ৪৮ হাজার ৯৬২ জন। আর গতকাল রাত পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪৮ হাজার ৫৫২ জন সংকটাপন্ন রোগী।

নিরাপত্তা পরিষদে করোনা প্রস্তাব আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র : করোনাভাইরাস মহামারী রুখতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব তোলার কথা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাধায় তা হয়নি। কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ভোটের জন্য প্রস্তাবটি উত্থাপনের কথা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র তা প্রতিহত করেছে। গত মার্চ থেকে ওই প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। গত শুক্রবার ওই প্রস্তাবটি পরিষদে তোলার পর তা পাস হলে, বিশ্বের যেসব দেশে এখন যুদ্ধ কিংবা সংঘাত চলছে- আপাতত তা সমন্বিতভাবে বন্ধ রাখার আহ্বান জানাতে পারত নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাধায় তা আপাতত হচ্ছে না। কূটনৈতিক সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মধ্যকার চলমান দ্বন্দ্বের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ওই প্রস্তাব পাসে বাধা দিয়েছে।

বিশ্বে সুনামির গতিতে ঘৃণা ছড়াচ্ছে : করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্বে ঘৃণা, আতঙ্ক আর জাতিবিদ্বেষের সুনামি সৃষ্টি করেছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। গত শুক্রবার তিনি এমন সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে এই বিশ্বজুড়ে এই ঘৃণা-বিদ্বেষের অবসান ঘটাতে সবাইকে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদেশবিরোধী মনোভাব, ইসলামবিদ্বেষ, ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিস্তার, আতঙ্ক ছড়ানো, একে অপরকে  দোষারোপ ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে ঘৃণা ছড়ানোর এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা দমনে কাজ করার অনুরোধ করেছেন তিনি।

গুতেরেস বলেন,?‘সাংবাদিক, হুইসেলব্লোয়ার, স্বাস্থ্যকর্মী, ত্রাণকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীর মতো পেশার লোকদের শুধু তাদের পেশাগত কারণে বৈরী আচরণের শিকার হতে হচ্ছে। সংক্রমণের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা বয়স্কদেরও অবহেলার পাত্র করে রাখার মতো ঘটনা ঘটছে। যা কাম্য নয়।’

মহাসচিব বলেছেন, অনলাইনে ও রাস্তায় রাস্তায় বিদেশবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে, ইহুদিবিরোধী ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো ছড়িয়ে পড়ছে এবং মুসলিম বিদ্বেষে নানা আক্রমণ চলছে। এ ছাড়া অভিবাসী ও শরণার্থীদের ভাইরাস বিস্তারের জন্য দায়ী করে তাদের চিকিৎসাসেবা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। মহামারীকালেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাদানুবাদের মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব এমন মন্তব্য করলেন। উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীনের জীবাণু গবেষণাগার থেকেই যে করোনার উৎপত্তি- এমন প্রমাণ তার হাতে আছে। তবে চীন সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিস্তারের পাল্টা অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, নির্বাচনের আগে ট্রাম্প মিথ্যা ছড়াচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর