রবিবার, ১০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আত্মত্যাগ আত্মোপলব্ধি ও আত্মশুদ্ধি

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

আত্মত্যাগ আত্মোপলব্ধি ও আত্মশুদ্ধি

করোনাকালে মাহে রমজানে সিয়াম সাধনায় সূচিত হতে পারে  আত্মত্যাগ, আত্মোপলব্ধি ও আত্মশুদ্ধির উপায়। আল কোরআনের ২৫ সংখ্যক সুরা আল ফোরকানের ৬৩ থেকে ৭৭ নম্বর আয়াতসমূহে আল্লøাহর বিশেষ ও প্রিয় বান্দাদের ১৩টি গুণ ও আলামত বর্ণিত হয়েছে। প্রথম ছয়টি গুণাবলির মধ্যে আনুগত্যের মূলনীতি এবং পরবর্তী গুণাবলি গোনাহ ও অবাধ্যতা থেকে  পরিত্রাণ প্রত্যাশার/প্রচেষ্টার নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে। তেরোটি গুণাবলি- (১) নিজের বিশ্বাস, চিন্তাচেতনা, ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা, আচার-আচরণ ও স্থিরতাকে পালনকর্তার আদেশ ও অভিপ্রায়ের অনুগামী রেখে তার আদেশ-নিষেধ পালনের জন্য সদা উৎকীর্ণ থাকা। (২) নম্রতাসহকারে চলাফেরা করা তথা চলন-বলন, আচার-আচরণে মধ্যপন্থা অবল¤¦ন করা। গর্বিত অহংকারীর মতো পা না ফেলা। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীদের মতো অতি ধীরেও না চলা। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর  ভরসা করে না এবং সর্বদাই দুনিয়ার লাভ-লোকসানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকে, সে সর্বদা দুঃখই ভোগ করে। (৩) কথাবার্তায় নিরাপত্তার সঙ্গে সব সময় সচেতন থাকা উচিত। (৪) ইবাদতে রাত্রি জাগরণ। (৫) দিবা-রাতে ইবাদতে মশগুল হয়েও নিশ্চিন্ত হয়ে বসে না থাকা। আল্লাহকে ভয় করা, জীবিকা অন্বেষণ ও তার সাহায্য কামনা করা। (৬) ব্যয় করার সময় অপব্যয় না করা, কৃপণতা ও ত্রুটি না করে আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। (৭) শিরক সর্ববৃহৎ গোনাহ। দুনিয়ার ভালোমন্দে কাউকে নিয়ন্ত্রক ভাবাও শিরক। (৮) কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করা এবং ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া। (৯) তওবা করা। কঠোর অপরাধী যদি তওবা করে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে সৎকর্ম করতে থাকে, তবে আল্লাহ তার মন্দ কর্মসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। (১০) মিথ্যা ও বাতিল মজলিশে যোগ না দেওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া। (১১) যদি কেউ মিথ্যা ও বাতিল মজলিশের নিকটবর্তী হয়ে পড়ে তবে গাম্ভীর্য ও ভদ্রতাসহকারে তা এড়িয়ে বা পরিহার করে চলে যাওয়া উচিত। (১২) আল্লাহর আয়াত ও শরিয়তের বিধানাবলি শুধু পাঠ করা যথেষ্ট নয়, শ্রবণশক্তি ও অণুদৃষ্টি-সম্পন্ন  মানুষের উচিত এগুলো সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা এবং তদনুযায়ী আমল করা। (১৩) নিজ সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর জন্য আল্লার কাছে দোয়া করা। তাদের আল্লাহর আনুগত্যে মশগুল দেখা।

বস্তত, সিয়াম সাধনায় আত্মশুদ্ধির চেতনা জাগ্রত হয়। কর্মফলের দ্বারা আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের স্থায়িত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আল কোরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা অনুধাবন ও উপলব্ধির মধ্যে আত্মশুদ্ধির চিন্তাচেতনা পরিশীলিত হতে পারে। ৮ সংখ্যক সুরা আনফালের ৫৩ আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, ‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের যে সম্পদ দান করেন তিনি তা পরিবর্তন করবেন এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আশরাফুল মখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা হলো মানুষ। আর সেই মানুষের ব্যক্তিগত স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ, তার ইহসান সবই আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ ও নির্দেশনা অনুযায়ী হওয়ার মাধ্যমে সেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। বান্দার ব্যক্তিগত চারিত্রিক উৎকর্ষতা ছাড়া তার কোনো আমল ও ইবাদত আল্লার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। ইহসানের মূল কথা হলো ক্রোধ, লোভ, মোহ, হিংসা-বিদ্বেষ, গিবদ, অপবাদ, মিথ্যা অহংকার ইত্যাদি মন্দ স্বভাব থেকে পাক-পবিত্র হয়ে ইখলাস, আমানতকারী, বিনয় ও নম্রতা, সততা ও ন্যয়পরায়ণতা ইত্যাদি উত্তম চরিত্রের দ্বারা নিজেকে সুশোভিত করা। এর জন্য নিরলস সাধনা ও চেষ্টা প্রয়োজন। আত্মত্যাগের মহান আদর্শ ছাড়া এ সাধনায় সফল হওয়া যায় না।

দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকার কারণে কাফেরদের বিরুদ্ধে শাস্তির বাণী উচ্চারিত হয়েছে কোরআনে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িগণ দুনিয়ার ভোগ-বিলাস বর্জন করার অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন। তাদের জীবন-সাধনা এ সাক্ষ্য দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) হযরত মোয়াজ (রা.) কে ইয়েমেন প্রেরণের সময় এ উপদেশ দেন- ‘দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে বেঁচে থেকো।’ হযরত আলী বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লার কাছ থেকে অল্প রিজিক নিতে সম্মত হয়ে যায়, আল্লাহ তাআলাও তার অল্প আমলে সন্তষ্ট হয়ে যান।’

[সাবেক সচিব ও এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান]

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর