সোমবার, ১১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রম শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাকালে ভার্চুয়াল যুগে পা রাখল দেশের বিচার বিভাগ। শুরু হলো ডিজিটাল আদালতের কার্যক্রম। আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিচারকাজ চালানোর বিষয়ে অধ্যাদেশ জারির পরদিন গতকাল উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম শুরু করতে পৃথক তিনটি আদেশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি গ্রহণে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চেম্বার জজ কোর্ট এবং হাই কোর্ট বিভাগে তিনটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে নিম্ন আদালতে শুধু জামিন সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি ও বেইল বন্ড গ্রহণের শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে। এর আগে শনিবার রাতে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

আপিল বিভাগের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধকল্পে এবং শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া সাধারণ ছুটিকালীন ও হাই কোর্ট বিভাগের অবকাশকালীন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এবং কোর্ট কর্তৃক জারি করা প্র্যাকটিসের ডাইরেকশন অনুমোদন করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আপিল বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য চেম্বার জজ হিসেবে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানকে প্রধান বিচারপতি মনোনয়ন দিয়েছেন। বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান আগামী ১৪ ও ২০ মে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে চেম্বার কোর্টে শুনানি গ্রহণ করবেন।

হাই কোর্টের বিষয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য তিনটি বেঞ্চ গঠন করা হলো। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অতীব জরুরি সব ধরনের রিট ও দেওয়ানি মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র নেবেন। অতীব জরুরি সব ধরনের ফৌজদারি মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র নেবেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। এ ছাড়া বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সাকসেশন আইন, অ্যাডমিরালিটি কোর্ট আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইনসহ কয়েকটি আইনের অধীনে আবেদনপত্র, আপিল শুনানি গ্রহণ করবেন। তবে কখন বসবেন তা এসব আদেশে উল্লেখ নেই।

নিম্ন আদালতের বিষয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় এবং এর ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সব আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছুটির সময়ে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ আদালতের বিচারক, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ এবং উচ্চ আদালতের জারিকৃত বিশেষ প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ অনুসরণ করে শুধু জামিন সংক্রান্ত বিষয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। গত ২৬ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ রেখে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য সুপ্রিম কোর্টের রুলস কমিটি পুনরায় গঠন এবং ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওইদিন প্রথমবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ অবস্থায় গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। দুই দিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাই কোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী গতকাল সুপ্রিম কোর্ট পৃথক তিনটি প্র্যাকটিস নির্দেশনা জারি করে।

সর্বশেষ খবর