মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করছে না জেলা শহরের মার্কেটগুলো

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দোকান বন্ধ, হুঁশিয়ারি দোকান মালিক সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করছে না বিভাগীয় ও জেলা শহরের মার্কেটগুলো। কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছে না। প্রায় প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কোনো প্রকার সচেতনতার তোয়াক্কা না করে ফ্রিস্টাইলে চলছে কেনাবেচা। অসচেতন নারী-পুরুষ মহাবিক্রমে বাজার-সদাই করছে। অনেকে আবার শিশু সন্তানকে নিয়ে শপিং করছে। সেইসঙ্গে অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনে চলাচল বৃদ্ধির ফলে যানজট বাড়ছে শহগুলোয়। এতে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক করোনা ঝুঁকি। রংপুর প্রতিনিধি জানান, নগরের প্রায় মহল্লায় করোনা আক্রান্ত রোগী থাকলেও অধিকাংশ নগরবাসীর মধ্যে করোনার ভয় নেই। তাই নগরবাসীর মধ্যে সামাজিক দূরত্বের বালাইও নেই। এমনিতেই করোনা আক্রান্তের দিক থেকে বিভাগীয় শহরভিত্তিক পরিসংখ্যানে রংপুর ওপরের সারিতে রয়েছে। এর ওপর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রংপুর নগরে বড় বড় শপিং কমপ্লেক্স রয়েছে প্রায় ৫০টি। এ ছাড়া ছোটবড় মিলিয়ে মহানগরে দোকান রয়েছে ৪০ হাজারের ওপর। গত দুুই দিনে এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৫ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের একটি মহল দাবি করেছে। ঢিলেঢালা লকডাউনের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা অসচেতন মানুষ মাথায় রাখেনি। ফলে শহরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সচেতন মহল মনে করছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা করতে মানুষ যে হারে বাজারে আসছে তা সত্যিই বিপজ্জনক। এর পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। এদিকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গে নগরে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি। অটোরিকশার কারণে নগরের জাহাজ কোম্পানির মোড় থেকে সিটি করপোরেশনের সামনে পর্যন্ত যানজট লক্ষ্য করা গেছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরন্ব কুমার রায় বলেন, ‘রংপুর শহর মারাত্মক করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। সামাজিক দূরত্বসহ অন্যান্য নিয়মকানুন মেনে না চললে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।’ এজন্য তিনি সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। লক্ষীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ঈদের কেনাকাটায় ধুম পড়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও সরকারি নির্দেশে দোকানপাট খোলায় রায়পুর পৌর শহরসহ হাটবাজারগুলোয় মানুষের ঢল নেমেছে। দোকানগুলোয় ভিড় করে পোশাকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার ধুম পড়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও বেশির ভাগ দোকানে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে বেচাকেনা। গতকাল সকালে রায়পুর পৌর শহরের গাজী সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, সিনেমা হল রোড মার্কেট, হায়দরগঞ্জ বাজার, রাখালিয়া বাজার, খাসের হাটসহ সব মার্কেটেই সামাজিক দূরত্ব না মেনে সাধারণ মানুষকে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। এতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া পৌর শহর ও গ্রামের বাজারের রাস্তাগুলোয় শত শত অটোরিকশা থাকায় বিভিন্ন রাস্তার মোড় ও এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রচুর ভিড়ের কারণে অনেক সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, তৈরি পোশাক, কাপড়, পাদুকা, প্রসাধনীসহ ঈদবাজারকেন্দ্রিক বড় ও প্রতিষ্ঠিত দোকানগুলো বন্ধ থাকলেও কিছু দোকান এক শাটার খোলা রাখা পদ্ধতিতে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। কিছু ব্যবসায়ী শাটার একটু ফাঁকা রেখে আবার কেউ দোকানের সামনে লোক দাঁড় করিয়ে ক্রেতা এলে তাদের ভিতরে ঢুকিয়ে আবার শাটার আটকে দিচ্ছেন। এসব দোকানে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি উপেক্ষিত হচ্ছে। দোকান খোলা রাখতে দোকানের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, ব্লিচিং পাউডারযুক্ত পাসোপ, জীবাণুনাশক স্প্রে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানা দিকনির্দেশনা থাকলেও এসবের কোনো বালাই নেই এসব দোকানে। ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে হিমশিম খাচ্ছে তখন ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু ব্যবসায়ী সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বিকাল ৫টার পরও দোকান খোলা রাখছেন। এতে দোকানের সামনে জনসমাগমের কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। জেলার পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল এমনকি সদর উপজেলার বিভিন্ন বাজারেও সন্ধ্যা ৬টা পর দেখা যায় সামাজিক দূরত্ব না মেনেই দোকানপাট খোলা রেখে কেনাবেচা হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারগুলোয় অনেকে মাস্ক ও গ্লাভস ছাড়াই কেনাবেচা করছেন। সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই অনেকে এভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা ও অযথা জনসমাগম ঘটাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকান খোলা না রাখলে তারা সংসার চালাবেন কীভাবে? তাই তারা অর্থের জন্য এভাবে দোকানপাট খোলা রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা বাজার মনিটরিংয়ে গেলেই ব্যবসায়ীরা তাড়াহুড়া করে দোকান বন্ধ করে দেন বা পালিয়ে যান। প্রশাসনের কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার পরক্ষণেই আবার শুরু হয় জনসমাগম। ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘বাজারে জনসমাগম এড়াতে সর্বক্ষণ কাজ করছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দোকান বন্ধ ও জনসমাগম এড়াতে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। যারা নিয়ম ভঙ্গ করছে তাদের প্রতিদিন আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুঁশিয়ারি দোকান মালিক সমিতির : কোনো দোকান বা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তৎক্ষণাৎ সেই দোকান কিংবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে সংশ্লিষ্ট মার্কেট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। গতকাল এক ভিডিওবার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘কোনো দোকান বা প্রতিষ্ঠান যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারে, কেউ যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে না পারে; সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমিতি ও মার্কেট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব তৎক্ষণাৎ ওই দোকান কিংবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে পুলিশের সহায়তা নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মেনেই সীমিত আকারে দোকান ও শপিং মল খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে, যেসব ক্রেতা শপিং করতে আসছেন তারা মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই কেনাকাটা করছেন। মার্কেটগুলোয় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছি।’ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আরও বলেন, ‘আমরা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছি; তাই কোনোমতেই বেখেয়াল হলে চলবে না।’

সর্বশেষ খবর